বাংলাদেশের বন্যা মোকাবিলায় সাহায্যের প্রস্তাব ভারতের

বাংলাদেশের সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, রংপুর, কুড়িগ্রাম, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইলসহ বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে যে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা মোকাবিলায় সব ধরনের সাহায্য ও সহযোগিতার অঙ্গীকার করলো ভারত। 

রবিবার (১৯ জুন) দিল্লিতে দুই দেশের মধ্যে জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিশনের (জেসিসি) বৈঠকের শুরুতেই উদ্বোধনী বক্তৃতায় এই প্রস্তাব দেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন ও জয় শঙ্কর দুদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। 

বাংলাদেশে অনেকেই আগাম সতর্কতা ছাড়া ভারত থেকে আসা পানির প্রবাহকে দায়ী করছেন, সোশাল মিডিয়াতেও এ নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। এই পটভূমিতে ভারতের প্রস্তাবকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। 

জয়শঙ্কর তার ভাষণে বলেন, ‘বাংলাদেশের উত্তরে যে নজিরবিহীন বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তা মোকাবিলায় ভারত তাদের সমর্থন ও সংহতি ব্যক্ত করতে চায়। আমাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলেও একই ধরনের বন্যা হয়েছে।’

‘আমরা এখন (বছরের) অনেক বেশি সময়ের জন্য ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট ডেটা (বন্যা ব্যবস্থাপনা তথ্য) শেয়ার করছি।’

‘এই অবকাশে আমি এটাও বলতে চাই, আপনাদের দেশে বন্যা মোকাবিলায় বা ত্রাণ অভিযানে ভারত যদি সুনির্দিষ্ট কোনোভাবে সাহায্যে আসতে পারে, তাহলে সেই সমর্থনসূচক ভূমিকা নিতে পারলে আমরা আনন্দিত হবো।’ 

‘আমাদের দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই তা আমরা করতে চাই’, বলেন  জয়শঙ্কর।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের বন্যার উৎস হিসেবে ভারতের যে আসাম-মেঘালয়কে চিহ্নিত করা হচ্ছে, গত প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে সেখানেও চলছে রেকর্ড বৃষ্টিপাত। আসামের ৩০টি জেলার ৩২ লাখের বেশি মানুষ এখন বন্যাকবলিত, দেড় লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন ত্রাণশিবিরে।

ব্রহ্মপুত্র ও বরাকের মতো প্রধান নদীগুলো বেশিরভাগ জায়গাতেই বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রবিবার (১৯ জুন) পর্যন্ত বন্যায় আসামে অন্তত ৬০ জন ও মেঘালয়ে অন্তত ১৮ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা গেছে। 

ভারতের আবহাওয়া বিভাগ রবিবার বিকালে জানিয়েছে, এই প্রবল বর্ষণের ‘স্পেল’ আরও অন্তত ২৪ ঘণ্টা জারি থাকবে। সোমবার সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

দেশের ভেতরে এই পরিস্থিতি সত্ত্বেও বাংলাদেশের বন্যা মোকাবিলাতেও ভারত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে চাইছে। কারণ, দিল্লি মনে করছে, এই পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে সে দেশে ‘অযথা’ একটি ভারতবিরোধী মনোভাব মাথাচাড়া দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। 

রবিবারের সপ্তম রাউন্ডের জেসিসি বৈঠক শুরু হওয়ার ঠিক আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে নিজের ছবি টুইট করে লেখেন, ‘আমাদের এই ঘন ঘন বৈঠকগুলোই দুদেশের অনন্য বন্ধুত্বের নিদর্শন।’