‘আপনারা হান্ড্রেড পারসেন্ট সৎ থাকবেন?’

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএমে একজনের ভোট অন্যজনের দেওয়াটা একেবারে অসম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। মঙ্গলবার (২১ জুন) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ইভিএম নিয়ে মতবিনিময় শেষে সমাপনী বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন। আপনারা রাজনৈতিক দল, সরকার, সরকারি দল, তারাসহ সবাই কি আপনারা হান্ড্রেড পারসেন্ট সৎ থাকবেন?’ প্রশ্ন রাখেন সিইসি।

সিইসি বলেন, ‘সম্প্রতি যে নির্বাচন‍গুলো হয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে কোনও কেন্দ্র থেকে আমরা কোনও অভিযোগ পাইনি যে—এটার (ইভিএম) অপব্যবহার হয়েছে। আপনারা টিভিতে দেখেছেন, দুয়েকজনের হাতের ছাপ মিলছিল না। বাসায় গিয়ে হাত ধুয়ে আসার পর আবার যখন আঙুলের ছাপ দিলো, তখন কিন্তু আইডেন্টিফাই হয়েছে। যন্ত্রের কিছু সমস্যা হতে পারে। ব্যালটে যেমন একজনের জায়গায় ১০০টা (ভোট) দেওয়া হতে পারে, আঙুলের ছাপ না মিলতে পারে। কিন্তু আমার ভোট আপনি, আর আপনার ভোট আমি, এটা একেবারে অসম্ভব।’

ইভিএম ও ব্যালটের প্রসঙ্গে টেনে সিইসি বলেন, ‘ব্যালটে আমার নিজেরও অভিজ্ঞতা আছে—কীভাবে ভোটকেন্দ্র দখল করে এক ঘণ্টায় দুই-তিনশ’ সিল মেরে ভরাট করেছে। আপনারা পাশে থেকেও তো ওটা বন্ধ করতে পারেননি। সেদিক থেকে ইভিএমে যদি কোনও দোষত্রুটি থেকে থাকে, আমি ইভিএম বিশেষজ্ঞ না, তারপরেও আমি এ পর্যন্ত যতটুকু ইভিএম দেখেছি, ইতিবাচক দিকগুলো অনেক বেশি।’

রাজনৈতিক দলের নেতাদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘ইভিএমের ওপর যেহেতু আপনাদের পুরোপুরি আস্থা আসছে না, আমরা আজকের আয়োজন করেছিলাম ব্যাপক আলোচনা করার জন্য। আজ ১৩টি দলকে ডেকেছি, এর আগে ১৩টি দলকে ডেকেছিলাম। ১৩টি দল বোধহয় আসেনি, ৯-১০টি এসেছিল। আমরা জানি, ইভিএম নিয়ে আপনাদের দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে। আমরা কিন্তু আপনাদের মতামত শুনছি। আপনাদের মতামতকে মূল্য দিচ্ছি। এরপর আরও ১৩টি দল আসবে। তাদের সঙ্গেও আমরা এভাবে মতবিনিময় করবো। এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নিইনি। সব দলের মতামত না দিয়ে সিদ্ধান্ত নেবো না। এই জন্য আমরা এই প্রক্রিয়াটা গ্রহণ করেছি। আপনাদের মতামত বিশ্লেষণ করবো, সেই সুযোগটা আমাদের রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের যে নিবন্ধিত ৩৯টি দল আছে, তাদের প্রত্যেককে আমরা আমন্ত্রণ করেছি। আমাদের দিক থেকে শতভাগ সততার সঙ্গে, নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করবো। আমরা যারা কমিশনে আছি, তারা সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে কোনও কাজ করবো না, সরকারও চাইবে না আমরা আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করি। সবার সর্বাত্মক চেষ্টা লাগবে। আপনারা ভোটকেন্দ্রে এসে লক্ষ করবেন যে আমরা ইভিএমে কোনও ম্যানুপুলেশন করছি কিনা, জাল ভোট হচ্ছে কিনা বা ব্যালটেও তো ভোট হবে। সেখানেও ভোটাররা সঠিকভাবে তাদের ভোট দিতে পারছে কিনা। সেই চেষ্টাগুলো সার্বিকভাবে আপনাদেরও করতে হবে।’

কমিশনাররা আমরা চার-পাঁচ জন লোক, উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘আমাদের ওপর আপনারা নির্ভর করলে নির্বাচনটা সুন্দর হবে না। আপনাদের দায়িত্ব আরও বেশি। আপনারা ফিল্ডে থাকেন, আমি কয়টা সেন্টারে যাবো সিইসি হয়ে? আমরা পুলিশ নামানোর চেষ্টা করবো, বিজিবি নামানোর চেষ্টা করবো। এই কাজগুলো করার চেষ্টা করবো।’

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে শতভাগ আস্থায় বিশ্বাস করি না। শতভাগ আস্থা কখনও হয় না। আপনি হারলে বলবেন উনি চোরামি করেছেন। আর উনি বলবেন আমি খুব সৎ। কারণ, এই দ্বন্দ্ব থেকে যাবেই। একশ’ পারসেন্ট আমি সৎ থাকবো, আমার চারপাশে যারা আছে, যাদের ওপর আমার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নেই। আপনারা রাজনৈতিক দল, সরকার, সরকারি দল, তারাসহ সবাই কি আপনারা হান্ড্রেড পারসেন্ট সৎ থাকবেন?’ প্রশ্ন রাখেন সিইসি।

এর আগে বিকাল ৩টায় মতবিনিময় সভাটি শুরু হয়। দ্বিতীয় দফায় ১৩ দলকে আমন্ত্রণ জানালেও বিএনপিসহ পাঁচটি রাজনৈতিক দল ইসির আমন্ত্রণে সাড়া দেয়নি।