শাহদীন মালিক স্বাধীন কথা বলেন: প্রধানমন্ত্রী

আইনজীবী শাহদীন মালিক সবসময় স্বাধীন কথা বলেন বলে টিপ্পনি কেটেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আইনজীবী শাহদীন মালিক। উনি সবসময় স্বাধীন। স্বাধীনই থাকেন। স্বাধীন মালিক তিনি। তিনি বলেছিলেন, পদ্মা সেতু দেশি অর্থায়নে হবে না, সম্ভব নয়।’

বুধবার (২২ জুন) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন শেখ হাসিনা। সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধের পরে দেশের রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের করা সমালোচনার জবাব দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শাহদীন মালিক স্বাধীন কথা বলেন। তিনি বলেছিলেন, পদ্মা সেতু দেশীয় অর্থায়নে সম্ভব নয়। কিন্তু সম্ভব হয়েছে। তাকে দাওয়াত দিচ্ছি, তিনি যেন পদ্মা সেতুতে আসেন।’

২০১১ সালের ৭ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেওয়া ‘স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের কোনও উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অর্থায়ন বাতিল করলো’—এই বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া নিজেই ভুলে গেছেন। সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার প্ল্যান্টের টাকা বিশ্বব্যাংক বন্ধ করে দিয়েছিল দুর্নীতির কারণে। সেটার সঙ্গে তিনি ও তার পুত্ররাও জড়িত ছিলেন। সিমেন্স এটার সঙ্গে জড়িত ছিল। এটা আমাদের কথা না, এফবিআই তথ্যটা বের করেছিল। ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের টাকা বিশ্বব্যাংক বন্ধ করে দিয়েছিল দুর্নীতির কারণে। কাজেই এটা ভুলে গেছেন। বাঙালি তো এমনিতে ভুলে যায়।’

প্রধানমন্ত্রী জানান, ড. আকবর আলি খান। আমি ৯৬ সালে যখন সরকারে এসেছিলাম, তখন তিনি অর্থ সচিব ছিলেন। তিনি ২০১২ সালের ১ জুলাই বলেছিলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের পক্ষে পরবর্তীকালে ঋণ সহায়তা পাওয়া খুব দুষ্কর হয়ে পড়বে। যখনই কোনও দাতা সংস্থা কোনও নতুন প্রকল্পে অর্থায়নে আগ্রহী হবে, তারা দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশকে ভিন্ন চোখে দেখবে। সরকার যদি বিকল্প অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করে, তাহলে খরচ অনেক বেড়ে যাবে, কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাবে।’

এই কথার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বুধবার বলেন, ‘আশা করি পদ্মা সেতুর কাজের মান নিয়ে কেউ কখনও প্রশ্ন তুলতে পারবে না। তাই এই কথার কোনও ভিত্তি নেই।’

বিশ্বব্যাংকের অভিযোগকে ‘দুঃখজনক ঘটনা' আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, সুশাসনের অভাবে দেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্প আজ অনিশ্চয়তার মুখে। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আলী আহসান মনসুরের এমন বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্নীতিটা কোথায় দেখলেন? কানাডার আদালতই প্রমাণ করতে পারলো না, কিন্তু উনারা দুর্নীতি দেখেন।’

সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের গ্রহণযোগ্যতা আন্তর্জাতিকভাবে আছে কিনা, আপনারাই বিচার করবেন। বাংলাদেশের জনগণ বিচার করবে।’

‘নিজ অর্থায়নে সরকার পদ্মা সেতু করার যে পরিকল্পনা করেছে, তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তবে সরকার ইচ্ছা করলে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে পারবে, কিন্তু শেষ করতে পারবে না।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দীনের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চাই তাকে দাওয়াত দিতে। এটা যে শেষ হয়েছে, তিনি যেন পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে একটু যান। আমরা দাওয়াত দিচ্ছি। সবাইকে দাওয়াত দেবো, যারা এ কথা বলেছেন, সবাইকে দাওয়াত দেবো।’

পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করতে পারলেও শেষ করার গ্যারান্টি থাকবে না। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুরের প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কিন্তু শেষ করেছি। তাকেও দাওয়াত দিচ্ছি, পদ্মা সেতুটা গাড়িতে পাড়ি দিতে।’

এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা প্রয়োজন, যা জোগান দিতে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ পড়বে। এর দায় সরকার এড়াতে পারবে না। সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের এমন বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের রিজার্ভ কিন্তু এখনও ৪২ বিলিয়ন। বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ পড়েনি। সঙ্গে অন্য প্রকল্পগুলোও করে যাচ্ছি।’

এই মুহূর্তে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু শুরু করা হলে দেশের অন্য সব অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য যে কাজগুলো করা যেতো, সেগুলো আর হবে না। সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানের এমন বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সব কাজ কিন্তু চলছে। কোনোটা কিন্তু থেমে যায়নি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটুকু বললাম এই কারণে, তারা যখন কথা বলেন, আমি জানি না কেন তাদের ভেতরে আত্মবিশ্বাসের অভাব। তারা ভুলে যান জাতির পিতার নেতৃত্বে এই দেশের মানুষ যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছিলেন। আমরা বিজয়ী জাতি, কোনও কথা বললে ভেবেচিন্তেই বলি। বিজয়ী জাতি হিসেবে মানসিক শক্তি নিয়েই কথা বলি। কিন্তু এনাদের ভেতরে একটা পরাজিত মনোভাব। তারা সবসময় আত্মগ্লানিতে ভোগেন, তাই তাদের আত্মবিশ্বাসের অভাব।’

তিনি বলেন, ‘আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে। আমি যেটা পারবো, সেটাই বলবো। যেটা বলবো, করবো। করে দেখাতে পারি, সেটা করেছি। এই জন্য দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ।’

বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ার পরে অধ্যাপক জামিলুর রেজাসহ যেসব বিশেষজ্ঞ প্যানেল সরকারকে সহযোগিতা করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী। এই উপদেষ্টা প্যানেল সরকারের পাশে না দাঁড়ালে হয়তো পদ্মা সেতু সম্ভব হতো না বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।