ঈদ উদযাপনে যখন লাখো মানুষ ছুটছিলেন গ্রামে, তখন তাদের যাত্রা নিরাপদ করা থেকে শুরু করে বাসা-বাড়ির নিরাপত্তায় মাঠে ছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা। ছুটি না পেলেও তাদের সান্ত্বনা একটাই— দেশের মানুষের সেবার ব্রত নিয়েই তো যোগ দিয়েছিলেন বাহিনীতে।
ঈদে দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা হয় বাংলা ট্রিবিউনের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সদস্যরা বললেন, চাকরিতে যোগদানের পর প্রথমদিকে যখন ঈদের ছুটি মিলতো না তখন বেশ খারাপ লাগতো। পরিবারের সদস্যদের ওপরও এর প্রভাব পড়তো।
‘কিন্তু যখন টাকা কয়েক বছরও ঈদের ছুটি পাই না, তখন খুব কষ্ট পাই। পরিবারের সদস্যরাও এমনটা মেনে নিয়েছে।’
তারা আরও জানালেন, ঈদ এলে একদিকে যেমন ছুটি পাওয়া কঠিন হয়ে যায়, অন্যদিকে বাড়ে ডিউটির চাপও। ঈদ উপলক্ষে ডিউটি টাইম বাড়ে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেখা যায় ১৮-২০ ঘণ্টাই ডিউটি করতে হচ্ছে। ডিউটিতে থাকলে পরিবারের সঙ্গে কথা বলারও সুযোগ হয় না। কারণ এ সময় রাজধানী থাকে ফাঁকা। বাসাবাড়ি ও রাস্তাঘাট হয়ে ওঠে অনিরাপদ। চুরি-ছিনতাই বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
তবে এদের মাঝে কেউ কেউ আবার পরিবারের সঙ্গে এবার ঈদ করতে পেরে আনন্দিত।
এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, চাকরিতে যোগদানের সাত বছর পর দ্বিতীয়বারের মতো ঈদের ছুটি পেয়েছি। ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি আছি। অনেক ভালো লাগছে।
আরেক পুলিশ কর্মকর্তা বললেন, ১৩ বছরের বেশি হয়েছে চাকরির। কয়টা ঈদ পরিবারের সঙ্গে করতে পেরেছি ভুলে গেছি। হাতেগোনা দুই-তিনবার গ্রামের বাড়িতে যেতে পেরেছি। এ বছর ঈদে ছুটি পেয়েছি। পরিবারকে সময় দিতে পারবো। এটাই বড় আনন্দ।
‘পুলিশের চাকরি করে পরিবারকে সময় দেওয়া কঠিন হয়ে যায় আমাদের জন্য’ এমনটা উল্লেখ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক সদস্য জানান, ‘যেকোনও সময় যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে হয়। দেখা যায় ডিউটি শেষ। তবু এমন ঘটনা ঘটলো যে ওটার পেছনে পুরো রাত বা দিন পেরিয়ে যাচ্ছে। পরিবারকে হয়তো ফোনে বলেছি যে বাসার পথে। কিন্তু এরপর আর যাওয়া হয় না।
ঈদে ডিউটিরত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)-এর ফুলবাড়িয়া ট্রাফিক জোনের সার্জেন্ট সদরুল হাকিম শাওন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কল্যাণের ব্রত নিয়ে পুলিশে যোগ দিয়েছি। ঈদের ছুটিতে লোকজনের গন্তব্যে যাওয়ার জন্য রাস্তায় চাপ থাকে বেশি। আমরা আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে। এত কষ্টের মধ্যে একটাই সান্ত্বনা যে, দেশের জন্য কাজ করতে পারছি, জনগণকে নিরাপদ রাখতে পারছি।
অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ)-এর পুলিশ সুপার সানোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যেকোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আমাদের তৎপরতা বেশি থাকে। সবার সঙ্গে তথ্য সমন্বয় করে নিরাপত্তা জোরদার করি। সেক্ষেত্রে অনেক সময় সদস্যদের ছুটি দেওয়া সম্ভব হয় না। বড় বড় ঈদের জামাত রাজধানীসহ দেশের যেসব জায়গায় অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশেষ করে শোলাকিয়ার মতো জায়গায়, সেখানে এটিইউ-এর পক্ষ থেকে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ বেড়ে যায়। তারপরও অনেককে ছুটি দেওয়া হয়। যারা দায়িত্বে থাকেন তাদের কিছুটা চাপ নিয়েই কাজ করতে হয়। বাড়তি সময় মাঠে থাকতে হয়। তাদের যতটা সম্ভব উৎফুল্ল রাখতে আমরা বিভিন্ন ব্যবস্থাও নিয়ে থাকি।