ইসি রাশেদা বলছেন ‘ভাবমূর্তি নেই’, আওয়ামী লীগ বলছে আছে

নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি নিয়ে জনমনে প্রশ্ন সৃষ্টির কথা জানান কমিশনার রাশেদা সুলতানা। তিনি বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই শুনছি নির্বাচন কমিশনে কাজের পরিবেশ নেই। নিরপেক্ষতা হারিয়ে ফেলেছে। এতে মনে হচ্ছে কমিশনের ভাবমূর্তি একেবারেই নেই। আমাদের ভাবমূর্তিটা ফিরিয়ে আনা জরুরি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপে এমনটা বলেন তিনি।

কমিশনারের বক্তব্যে দ্বিমত পোষণ করে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি আছে বলেই মানুষ সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে অংশ নিচ্ছেন। ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ভোটও পড়ছে। আওয়ামী বিরোধীরা জয়ীও হচ্ছে।

রবিবার রাজধানীর নির্বাচন কমিশন ভবনে আওয়ামী লগের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, কাজী জাফর উল্লাহ, ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া এবং শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক বেগম শামসুন নাহার সংলাপে অংশ নেন।

সংলাপে কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেন, বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি একেবারেই নেই। ভোটাররাও ভোট দিতে আগ্রহী নন। তারা কেন্দ্রে আসতে চান না। হয়তো ভ্রান্ত ধারণা বা যেকোনোভাবে এটা হয়ে গেছে। এই বিষয়গুলো আমাদের নির্বাচন কমিশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। অংশীজনসহ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি উদ্ধার করতে হবে।

আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনারা সরকারে আছেন। অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে আপনাদের বড় দায়িত্ব রয়েছে। আমি বলবো, যারা নির্বাচনে জড়িত আছেন—বিশেষ করে প্রার্থী, ভোটার, সমর্থক; আপনারা একটু আপনাদের আচরণ সংযত করবেন।

মো. আলমগীর হোসেন বলেন, আমরা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সব দলের সহযোগিতা চাই। তবে সরকারি দলের কাছে বেশি সহযোগিতা চাই।

তিনি বলেন, যারা সংলাপে এসেছে তারা কিন্তু নির্বাচনে যাবে। তারা মনে করে, সব কথা যদি সরকারি দলের মতো করে যায় তাহলে আমরা দালাল হয়ে যাবো। এ জন্যই তারা কিছু ব্যতিক্রমধর্মী কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘যে দলটি নির্বাচনে আসতে চাচ্ছে না, সেটা তাদের চিরায়ত অভ্যাস। ২০১৪ সালে তাদের আহ্বানে জাতিসংঘ এসেছিল। তারা কিন্তু আমাদের যুক্তি খণ্ডাতে পারেনি। আমরা বলেছিলাম, নির্বাচন না হলে সাংবিধানিক শূন্যতা দেখা দেবে। নির্বাচনটা হওয়া উচিত। খালেদা জিয়াকে ফোনও দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি যে কয়টা মন্ত্রী চান তা দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি (খালেদা জিয়া) বললেন তার হরতাল কল দেওয়া আছে। বসতে পারবেন না। কাজেই তারা সবসময়ই অযৌক্তিকভাবে আন্দোলন করে আসছে।’

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করবে। সেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তো উত্থাপন করা যায় না। এটা তো আমাদের আওতার বাইরে।

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তিকরণ প্রসঙ্গে আমির হোসেন আমু বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকবে। সেই অনুযায়ী সব ঠিকঠাক করে যখন আনলাম, তখন হাইকোর্টের আদেশে সেটা রাখা সম্ভব হয়নি।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নির্বাচনের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। আর সরকারে থাকা রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব আপনাদের সহায়তা করা।

নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ড. রাজ্জাক বলেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে যেন আমরা সবাই ইতিবাচক কথা বলি। বিএনপি যত কথাই বলুক তারা নির্বাচনে আসবে। নির্বাচন কমিশনই এমন পরিবেশ সৃষ্টি করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমনভাবে নিশ্চয়তা দেবেন যে নির্বাচনের আগে সেই পরিবেশ তৈরি হবে এবং বিএনপি আসবে। আমরা যদি এখন নেতিবাচক কথা বলি যে দেশে বিপর্যয় হবে। নির্বাচন হবে না। এটা ঠিক হবে না।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা সরকারে আছি। কিন্তু এই সংলাপে এসেছি দল হিসেবে।