শ্রমিকবান্ধব বঙ্গবন্ধুর শেষ দিনগুলোর সিদ্ধান্ত

কৃষক-শ্রমিকবান্ধব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে হত্যার শিকার হওয়ার আগের কয়েক দিন শ্রমিকদের জন্য বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। একইসঙ্গে নতুন সংসদ সদস্যদের শপথ পাঠ, বিদেশি রাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসে শুভেচ্ছা বাণী পাঠানোর কাজগুলো করেন।

১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট দৈনিক বাংলা পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চালনা বন্দরের সব শ্রমিকের নিম্নতম মজুরি বাড়িয়ে চট্টগ্রাম বন্দর শ্রমিকদের মজুরির সমপর্যায়ে আনার নির্দেশ দেন। বঙ্গবন্ধুর এই নির্দেশ অনুযায়ী, চালনা বন্দর শ্রমিকদের মজুরি শতকরা প্রায় ৮৫ ভাগ বাড়বে। উল্লেখ্য, এর আগে চট্টগ্রাম বন্দরের শ্রমিকদের প্রাক-স্বাধীনতাকালীন যে মজুরি, তা দুই দফা বাড়ানো হলেও চালনার শ্রমিকদের প্রাক-স্বাধীনতাকালীন মজুরিই বহাল ছিল।

১০ আগস্টের সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে আরেকটি আদেশের কথা জানানো হয়। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেদিন চালনা বন্দর শ্রমিকদের সামগ্রিক কল্যাণের জন্য আরেকটি আদেশ জারি করে ‘চালনা বন্দর শ্রমিক কল্যাণ তহবিল’ গঠন করেন। এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে খবরে উল্লেখ করা হয়। রাষ্ট্রপতির এই আদেশের কারণে সে সময় থেকে চালনা বন্দরের শ্রমিকরা চট্টগ্রাম বন্দর শ্রমিকদের মতোই সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে বলেও জানানো হয়।

১৯৭৫ সালের আগস্টে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকারাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৯ আগস্ট গণভবনে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হিসেবে শপথ পাঠ করান। সেখানে উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, স্পিকার আব্দুল মালেক উকিলসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

ওই সময় পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে যুগোস্লাব পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল হোসেনের বেলগ্রেডের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করার কথা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সঙ্গে করে বঙ্গবন্ধুর একটি চিঠি নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা হয়। ওই মাসের শেষ দিকে লিমায় অনুষ্ঠেয় জোটনিরপেক্ষ দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে কথাবার্তা বলার বিষয়েও আলোচনা হয়। তিনি (ড. কামাল) প্রেসিডেন্ট টিটোর কাছে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি চিঠি নিয়ে যাবেন বলে সংবাদে প্রকাশ করা হয়। সেখানে এও বলা হয়েছিল—ড. কামাল ১৬ আগস্ট দেশে ফিরে আসবেন। যদিও ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর তার সেই ফেরা স্থগিত হয়েছিল।

হত্যাকাণ্ডের মাত্র দুই দিন আগে ১২ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কথা বলেছিলেন ব্রিটেনের দুই চলচ্চিত্রকার। বঙ্গবন্ধুর প্রতি পূর্ণ আস্থাবান বাঙালিরা স্বদেশের জন্য গর্বিত এবং রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর পূর্ণ আস্থা নিয়ে তারা দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেন তারা। এই দুই চলচ্চিত্র পরিচালক  সেসময় বাংলাদেশ সফরের পর এই অভিমত প্রকাশ করেন।

১৯৭৫ সালের আগস্টে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকাকেবল রুটিন কাজের বাইরেও বঙ্গবন্ধুর দেওয়া নানা প্রতিশ্রুতি কীভাবে পালন করা হবে, সেই পরিকল্পনার কথাও বারবার উচ্চারিত হচ্ছিল মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের মুখে। ১২ আগস্ট বেতারমন্ত্রী এম কোরবান আলী প্রেস ক্লাবে বক্তৃতা দিতে গিয়ে বলেন, ‘বাতিল পত্রিকাগুলোর সাংবাদিকদের পুনর্বাসন সম্পর্কে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া প্রতিশ্রুতি মর্যাদার সঙ্গে রক্ষা করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের অসুবিধা দূর করার জন্য সরকার ইতোমধ্যে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।’

এর আগে পঁচাত্তরের আগস্টের শুরুতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কোরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান কিমের বিশেষ দূত সাক্ষাৎ করেন। ৩ আগস্টের পত্রিকায় এর উল্লেখ পাওয়া যায়। ৬ আগস্ট প্রকাশিত পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়— বলিভিয়ার স্বাধীনতা দিবসে শুভেচ্ছা বাণী পাঠিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিজ দায়িত্ব পালন ও দেশের মানুষের জন্য করণীয় নিয়ে সক্রিয় ছিলেন এই নেতা, উল্লেখ করে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেন, ‘তিনি একের পর এক দায়িত্ব পালন করে চলছিলেন। কেউ বলতে পারবেন না, কোথাও তিনি কোনও কমতি রেখেছিলেন। কিংবা তাঁর বিরুদ্ধে এমন ষড়যন্ত্র চলছিল— সেটি নানাভাবে তার কানে দেওয়ার পরেও তিনি বিশ্বাস করেননি। কেননা, এই দেশের মানুষের জন্যই তিনি কাজ করে চলেছিলেন।’