প্রতীক্ষিত জেআরসি বৈঠক এ মাসেই, ফোকাস গঙ্গা-কুশিয়ারায় 

বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে ভারত অবশেষে একযুগেরও বেশি সময় পর যৌথ নদী কমিশনের (জয়েন্ট রিভার্স কমিশন বা জেআরসি) বৈঠকে বসতে রাজি হয়েছে। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনও না হলেও বাংলা ট্রিবিউন জানতে পেরেছে, চলতি আগস্টের ২৩ থেকে ২৫ তারিখ দিল্লিতে জেআরসি’র পরবর্তী পূর্ণাঙ্গ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে দুদেশের মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। 

স্থির হয়েছে, ২৩ আগস্ট জেআরসির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ও ভারতের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবরা বৈঠকে বসবেন। পরদিন বিস্তারিত আলোচনা হবে কমিশনের সদস্য তথা টেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞদের মধ্যে।

বৈঠকের শেষ দিন (২৫ আগস্ট) পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক ও ভারতের জলসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াতের মধ্যে বৈঠক শেষে যৌথ ঘোষণাপত্র বা সমঝোতা সই হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরের ঠিক আগে জেআরসি’র এই বৈঠককে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ঐতিহাসিক গঙ্গা চুক্তির পুনর্নবায়ন এবং কুশিয়ারা নদীর পানি ভাগাভাগি নিয়ে এই বৈঠকে খুব ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসতে চলেছে বলেও দিল্লিতে শীর্ষ সরকারি সূত্রগুলো এই প্রতিবেদককে ইঙ্গিত দিয়েছেন।

ভারতের জলসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তার কথায়, ‘এই বৈঠক করার জন্য বাংলাদেশ বহু দিন ধরে অনুরোধ জানিয়ে এলেও নানা কারণে তা সম্ভব হচ্ছিল না। এখন শেখ হাসিনার সফরের ঠিক আগে যেভাবে তড়িঘড়ি জেআরসি আয়োজন করা হচ্ছে তাতে ধরেই নেওয়া যায় এটা নেহায়েত কোনও রুটিন দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে না। বরং এই বৈঠক থেকে সদর্থক কিছু আউটকাম আশা করা হচ্ছে।’  

এই ‘সদর্থক আউটকাম’ কী হতে পারে, তা নিয়ে অবশ্য ভারত সরকারের কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাইছেন না। তবে বাংলা ট্রিবিউন আভাস পেয়েছে, চার বছর বাদে যে গঙ্গা চুক্তির মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে সেটি কীভাবে ও কোন আকারে পুনর্নবায়ন করা যেতে পারে তা নিয়ে জেআরসিতে বিশদ আলোচনা হবে।

সেই সঙ্গে ভারত থেকে বাংলাদেশের সিলেটে প্রবেশ করা কুশিয়ারার পানি ভাগাভাগি নিয়েও দিল্লি-ঢাকা একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর চেষ্টা করবে।

জেআরসি নিয়ে ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে আলোচনা চলছে বহুদিন ধরেই১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে যখন দিল্লিতে ঐতিহাসিক গঙ্গা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এইচ ডি দেবগৌড়া। বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন দিল্লিতে এসেছিলেন, আর চুক্তি সম্পাদনে খুব বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের তখনকার মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। তবে তিরিশ বছর মেয়াদি ওই চুক্তিটির প্রায় ২৬ বছর ইতোমধ্যে অতিক্রান্ত, এখন দুই দেশই তাদের গত আড়াই দশকের অভিজ্ঞতার আলোকে চুক্তিটি নবায়ন করার আগে তাতে কিছু পরিমার্জন-পরিবর্তন করতে চায়। জেআরসির আসন্ন বৈঠকে সেসব প্রস্তাবের রূপরেখা নিয়ে চুলচেরা আলোচনা ও ইতিবাচক ঘোষণা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। 

পাশাপাশি, কুশিয়ারা নদীর পানি ভাগাভাগি নিয়ে জেআরসি’তে একটি সমঝোতা বা চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করার জন্যও জোরদার চেষ্টা চলছে। আসামের বরাক উপত্যকা থেকে বাংলাদেশের সিলেটে প্রবেশ করা নদীটি ওই অঞ্চলের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি নদী। সেটির পানি ভাগাভাগি নিয়ে উজান ও ভাটির দেশ একমত হতে পারলে দুপক্ষই লাভবান হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। 

জেআরসি কী?

জেআরসি বা জয়েন্ট রিভার্স কমিশন হলো ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে গঠিত সবচেয়ে শক্তিশালী ও পুরনো কাঠামো। এটি গঠন করা হয়েছিল ১৯৭২ সালে।

দুই দেশের মধ্য দিয়ে মোট ৫৪টি অভিন্ন নদী প্রবাহিত হয়েছে। সেগুলোর পানি ভাগাভাগির ফর্মুলা থেকে শুরু করে ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট—সব ক্ষেত্রেই জেআরসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

দিল্লিতে জেআরসি’র শেষ বৈঠক হয়েছিল ২০১০ সালের ১৯ মার্চ—নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার চার বছর আগে।

একযুগেরও বেশি সময় পর ভারতে আবার জেআরসি’র বৈঠক হতে যাচ্ছে। যার জন্য বাংলাদেশ বিগত বহু বছর ধরেই দাবি জানিয়ে আসছিল।
যেহেতু সেই বৈঠকটা হচ্ছে শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের ঠিক আগে, তাই সেই জেআরসি’কে ঘিরে প্রত্যাশার পারদও থাকছে তুঙ্গে!