চাল-ডালসহ ৯ নিত্যপণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দেবে সরকার

চাল, গম, আটা, ময়দা ও তেলসহ ৯টি নিত্যপণ্যের মূল্য এখন থেকে সরকার নির্ধারণ করে দেবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। আর নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত দামে কোনও পণ্য বিক্রি হলে সংশ্লিষ্টদের আর জরিমানা নয়, এখন থেকে সরাসরি মামলা দায়ের করা হবে বলেও জানান তিনি।

মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) সকালে মন্ত্রণালয়ে এক জরুরি সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান। এর আগে বাজারে পণ্যের সরবরাহ, মজুত ও আমদানি প্রক্রিয়ার অগ্রগতি বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন তিনি।

সাধারণত এ ধরনের বৈঠকে গণমাধ্যমকর্মীরাও উপস্থিত থাকেন। তবে আজকের এ বৈঠকে কোনও গণমাধ্যমকর্মীকেও ডাকা হয়নি। বৈঠকের পরে এ নিয়ে কোনও ব্রিফিংয়েরও ব্যবস্থা রাখা হয়নি। তবে পরে গণমাধ্যমকর্মীদের অনুরোধে ব্রিফিং করেন বাণিজ্যমন্ত্রী। 

এসময় বাণিজ্য সচিব, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান, ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিআই-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতিও উপস্থিত ছিলেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, বৈঠকে চাল, ডাল, গম, ময়দা, তেল, পরিশোধিত চিনি, চা পাতা, সিমেন্ট ও রড; এই ৯টি পণ্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এখন থেকে এসব পণ্যের মূল্য সরকার নির্ধারণ করে দেবে। মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি দেখভালের জন্য বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বাজারে পণ্যের নির্ধারিত মূল্যের বিষয়টি তদারকি করবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর এবং বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। 

পণ্যের দাম যতটুকু বাড়ানো উচিত, তার চেয়েও বেশি বাড়ানো হয়েছে অভিযোগ করে ব্রিফিংয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই বেশি বৃদ্ধি করার কারণে আজ সিদ্ধান্ত হয়েছে, ট্যারিফ কমিশন এখন থেকে এসব পণ্যের যে ন্যায্য দাম হওয়া উচিত, যেভাবে ভোজ্যতেলের দাম আমরা নির্ধারণ করি তেমনিভাবে আইটেমগুলো নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে, আমদানিকারকদের সঙ্গে অথবা যারা আছেন কনসার্ন পিপল, ব্যবসায়ী নেতার এফবিসিসিআইসহ সবাইকে নিয়ে বসে যৌক্তিক যেটা সেটা ঠিক করবো এবং সেটা ডিক্লারেশন করা হবে, দিস ইজ দ্যা প্রাইস। মার্কেটে এই প্রাইসে বিক্রি হতে হবে।’

নির্ধারিত এই মূল্যের চেয়ে কেউ বেশি নিলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলেও জানান বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এর চেয়ে বেশি যদি কেউ নেয় সেক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে শুধু জরিমানা নয়, আমরা ঠিক করেছি যে আমাদের দুইটা অরগানাইজেশন আছে ভোক্তা অধিকার এবং প্রতিযোগিতা কমিশন... আমরা সোজাসুজি মামলায় চলে যাবো। আইন আছে তিন বছরের জেল বা কোথাও কোথাও তার চেয়ে বেশি জরিমানা; সেই পদক্ষেপ আমরা নিতে যাবো, যা যা আমাদের ক্ষমতা আছে। এটা শুরু হবে ইমিডিয়েটলি।’

এসময় ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যানকে ইঙ্গিত করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে ওনাকে বলা হয়েছে, সব আইটেমগুলো ১৫ দিনের মধ্যে ক্যালকুলেশন করে এটা বাজারে ডিক্লেয়ার করে দেওয়া হবে, দিস ইজ দ্যা প্রাইস। যদি আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে আমাদের নির্ভর করতে হয় তাহলে কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারের দাম উঠলে পরে এখানেও দাম বৃদ্ধি পাবে। সেক্ষেত্রে সেটাও কতটুকু বৃদ্ধি পাওয়া উচিত তা ঠিক করে দেওয়া হবে।’

আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য কমলেও দেশে কমে না- এমন বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, এখন কথা আসছে বিভিন্নভাবে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমেছে। হ্যাঁ, সত্যি কথাই, কমেছে। আমরা সয়াবিন তেলের দাম পামওয়েলের দাম কমতে দেখেছি। কিন্তু পাশাপাশি যেটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক যে ডলারের দাম (রেট) বেড়ে গেছে। যে কারণে এই দুটো হিসেব করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, যে সুফলটা আমরা পেতে পারতাম, আমাদের জনগণ পেতে পারত সেটা পাচ্ছি না। আমরা ক্লোজ মনিটর করে দেখবো যে, হোয়াট ইজ দ্যা রাইট প্রাইস, সেটাই আমরা ডিক্লেয়ার করবো।’