বঙ্গবন্ধুহত্যার ষড়যন্ত্রের স্বরূপ উদ্‌ঘাটনে জাতীয় তদন্ত কমিশন চান মেনন

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ষড়যন্ত্রের স্বরূপ উদ্‌ঘাটনে জাতীয় তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি তুলেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তদন্ত কমিশন গঠনের বিষটি তিনি সংসদে আনা প্রস্তাবের সাথে যুক্ত করারও দাবি তোলেন। সংসদে আনার প্রস্তাবে এটি না থাকায় এটি কিছুটা হলেও অসম্পূর্ণ রয়েছে উল্লেখ করে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতা মেনন খান বলেন, ষড়যন্ত্রের স্বরূপ উদ্‌ঘাটনের জন্য জাতীয় তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে। আইনমন্ত্রী বার বার এটা বলেছেন। তবে আমরা এটা বাস্তবে দেখতে চাই।

বুধবার (৩১ আগস্ট) জাতীয় সংসদে ১৪৭ বিধির ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ‘পঁচাত্তরের খুনি চক্রান্তকারীদের প্রেতাত্মারা এখনও ক্ষান্ত হয়নি। আজও তারা ঘৃণ্য তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে পুনরায় রাষ্ট্রক্ষমতায় ফিরে এসে ইতিহাসের ঢাকাকে ঘুরিয়ে দিতে— এমন দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সব চক্রান্ত ব্যর্থ করার শপথ নিয়ে জাতীয় সংসদে সাধারণ প্রস্তাব উঠানো হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এ প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন।’

রাশেদ খান মেনন বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের স্বরূপ না বুঝতে পারলে আজকের চক্রান্তও বুঝতে পারবো না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তার লাশ ৩২ নম্বরের সিঁড়িতে পড়ে থাকা অবস্থায় তার দলের সহকর্মীরা মন্ত্রীসভায় যোগদান করেছিলেন। আমরা দেখেছি— সেনাবাহিনীর প্রধানরা দলে দলে গিয়ে খুনিদের কাছে আনুগত্য ঘোষণা করেছেন। পরবর্তীকালে আমরা প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে জেনারেল ওসমানীকে দেখেছি। মেজর জেনারেল খলিলুর রহমানকে দেখেছি আনুগত্য প্রকাশ করতে। তিনি পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগের এমপি হয়েছিলেন। সেই ব্যক্তিরা পরবর্তীকালে কী ভূমিকায় ছিলেন এবং কী ভূমিকা পালন করেছেন সেটা আমাদের জানার দরকার বলে মনে করি।

ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার আইনি বাধার মুখে পড়ে। খন্দকার মোশতাক ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিলেন। জিয়াউর রহমান সেই আইনকে সংবিধানের ৫ম সংশোধনীতে যুক্ত করেছিলো। এই বিচার রাজনৈতিক বাধার মুখেও পড়ে।

কেবল সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্য এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত মনে করলে আমরা ভুল করবো। আত্মস্বীকৃত ‍খুনিদের বক্তব্যগুলো খতিয়ে দেখলেই এই বিষয়টি আমরা জানতে পারবো। খুনি কর্নেল ফারুক বলেছেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র করতে চেয়েছিলেন বলেই তাকে আমরা হত্যা করেছি। আমরা পরবর্তীতে দেখেছি কীভাবে আমাদের সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ পড়েছে। কীভাবে সমাজতন্ত্রের সংজ্ঞা পরিবর্তন হয়ে গেছে। কীভাবে বাঙালি জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ হয়েছে।

একাধিক বই ও প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে মেনন খান বলেন, কেবল হত্যাকাণ্ডের দিন নয়, বাহাত্তর সাল থেকেই চক্রান্ত শুরু হয়েছে। ফারুক এবং রশীদ মার্কিন দূতাবাসে গেছেন অস্ত্রের সন্ধানে। সেই সময়কার মার্কিন দূত পরবর্তীতে সেটা স্বীকারও করেছেন। অবশ্য সিইআইএ এর সাথে জড়িত কী না সেটা তিনি (মার্কিন দূত) বলতে পারেননি।

তিনি বলেন, এই হত্যাকারীকে আজকে যখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত আনতে চাই। তাদের কানাডা থেকে ফেরত আনতে চাই। তখন আইনি বাধা তৈরি হয়। মানবতার বাধা তৈরি হয়। তখন প্রশ্ন থেকে যায় আসলে এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতরা অন্ধকারে থেকে যাচ্ছে কী না।