প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরে অনিষ্পন্ন বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনার আশাবাদ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে অনিষ্পন্ন বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা অর্জন করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন।

রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আশা ব্যক্ত করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরে বাংলাদেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অনিষ্পন্ন বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা অর্জন করা যাবে বলে প্রতীয়মান হয়।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্ক গভীর হওয়াসহ সার্বিকভাবে এই সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবার লক্ষ্যে নতুন নতুন উদ্যোগ গৃহীত হবে। এই সফর বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি ও বিদ্যমান গতিশীল সম্পর্ককে আরও  সুসংহত করবে বলে আশা করা যায়।’

সফরের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘চলমান কোভিড মহামারি, ইউক্রেন সংকট এবং বিশ্বমন্দার প্রেক্ষাপটে এই সফর দুই দেশের পারস্পরিক সমঝোতা ও সাহায্যের মাধ্যমে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম বা নীতি নির্ধারণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে প্রতীয়মান হয়।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) ভারতে রাষ্ট্রীয় সফরে যাবেন। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, রেলমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন।

যেসব বিষয় গুরুত্ব পাবে

বাণিজ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, পানিসহ অন্যান্য বিষয় এ সফরে বিশেষ গুরুত্ব পাবে।

মন্ত্রী বলেন, ‘বৈঠকে দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি যেমন- দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, জনযোগাযোগ, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, নদীর অববাহিকাভিত্তিক পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত সুরক্ষা, নিরাপত্তা সহযোগিতা, মাদক চোরাচালান ও মানবপাচার রোধ প্রভৃতি অধিক গুরুত্ব পাবে।’

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সুসম্পর্ক বর্তমানে বিশেষ উচ্চতায় অবস্থান করছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয় যেমন- নিরাপত্তা ইস্যু, আন্তঃসংযোগ, বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ, জনযোগাযোগ, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক, আন্তঃদেশীয় বাস চলাচল, রেল ও নৌপথে যোগাযোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রীর সফর

সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) ভারতের উদ্দেশে যাত্রা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতায় অংশগ্রহণ করবেন। ৬ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতির ভবনে গার্ড অব অনারের মধ্য দিয়ে তার আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা অনুষ্ঠিত হবে।’

একইদিন রাজঘাট গান্ধী সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা অর্পণ করার পর দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন হায়দ্রাবাদ হাউজে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, ‘দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী ভারতের রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ বা বৈঠক করবেন।’

দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একান্ত আলোচনা হবে কিনা, জানতে চাইলে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যখনই অন্য কোনও দেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে আলাপ করেন, তখন মোটামুটিভাবে প্রত্যেক ক্ষেত্রে একান্ত আলোচনা হয়। ভারতের সঙ্গে সবসময় একান্ত আলোচনা হয়। আশা করবো যে, এবারও একান্ত আলোচনা হবে।’

চুক্তি

এবারের সফরে সাতটি চুক্তি নিয়ে কাজ চলছে এবং এর সংখ্যা বাড়তে পারে। দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠক শেষে বেশ কয়েকটি চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এসব চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক পানি ব্যবস্থাপনা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, রেলওয়ে, আইন, তথ্য ও সম্প্রচার, প্রভৃতি ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্পর্কিত। অনুষ্ঠান শেষে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করবেন।’

বেশ কয়েকটি  চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে এবং এর সংখ্যা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন।