পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে বিশ্বব্যাংক‍: অর্থমন্ত্রী

সংসদে অর্থমন্ত্রীবিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু সংক্রান্ত দুর্নীতি অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন।
সোমবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে সরকার দলের সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, সম্ভবত কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধনে বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন কিছু কর্মকর্তা পদ্মা সেতুর বিষয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আনেন। তবে, বিশ্বব্যাংক সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আরও জানান, পদ্মা সেতু সংক্রান্ত Wallace V. Her Majesty the Queen Right of Canada O N S C 7449 (2014) শীর্ষক একটি মামলা কানাডার আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। বিশ্বব্যাংক মামলার অভিযোগ প্রমাণের জন্য আদালতে প্রাথমিকভাবে কিছু তথ্য সরবরাহ করে। কিন্তু আদালত অতিরিক্ত তথ্য চাইলে বিশ্বব্যাংক প্রমাণাদি সরবরাহ না করে বরং Immunity’র সুযোগ নেওয়ার জন্য সচেষ্ট রয়েছে।
বেগম জেবুন্নেছা আফরোজের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী মুহিত জানান, সর্বশেষ অনুমোদিত ডিপিপি অনুযায়ী পদ্মা সেতুর মোট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে ২৭ হাজার ১২৮ কোটি ৩৮৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হচ্ছে। বাকি অর্থের মধ্যে জাপানি ঋণ মওকুফ তহবিলের তিনশ’ কোটি ও ভারত সরকারের অনুদান এক হাজার ৩৬৫ কোটি টাকার যোগান দেওয়া হয়েছে।

এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বাড়ি ভাড়া আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ হিসেবে বাণিজ্যিক বা আবাসিক খাতে ২৫ হাজার টাকার বেশি বাড়ি ভাড়া হলে তা আদায়ের জন্য তফসিলি ব্যাংকে হিসাব পরিচালনা করতে হবে।

শামীম ওসমানের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ও  পেট্রোবাংলার কাছে প্রায় ১৫ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এর মধ্যে বিপিসি’র দুই হাজার ৬২১ কোটি ও পেট্রোবাংলার কাছে ১৩ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। সুদসহ বকেয়ার পরিমাণ ২২ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা।

মন্ত্রী জানান, বিপিসি’র কাছ থেকে বকেয়ার ৬০৩ কোটি আদায় হয়েছে। বাকি টাকা আদায় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

মো. শওকত চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে মুহিত জানান, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে উন্নয়ন কাজে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার সঙ্গে এক হাজার ২৭০ কোটি টাকার অনুদানসহ বৈদেশিক সহায়তা বাবদ প্রায় ১১ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকার (১৪৬৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর মধ্যে ১২ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা ছাড় হয়েছে।

জঙ্গি অর্থায়নের সম্পৃক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তালিকা জনসম্মুখে প্রকাশের সুযোগ নেই

জঙ্গি অর্থায়নে সম্পৃক্ত ব্যাংক বা অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠানের তালিকা জনসম্মুখে প্রকাশের সুযোগ নেই বলে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লার প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী মুহিত জানিয়েছেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুসারে ওই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে বাংলাদেশ ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) নামে একটি পৃথক কেন্দ্রীয় সংস্থা রয়েছে। ওউ ইউনিট রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থাগুলো থেকে নগদ লেনদেন রিপোর্ট (সিটিআর) এবং সন্দেজনক লেনদেন রিপোর্ট (এসটিআর) সংগ্রহ করে বিশ্লেষণপূর্বক প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে প্রেরণ করে। প্রয়োজনে সরেজমিনে পরিদর্শন করে। এক্ষেত্রে কোনও ব্যাংক ও অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জঙ্গি অর্থায়নের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে প্রেরণ করা হয়ে থাকে।

মানিলন্ডরিং আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, এই আইনের অধীন ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনও ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা এজেন্ট কর্তৃক চাকরিরত বা নিয়োগকৃত থাকা অবস্থায় কিংবা চাকরি বা নিয়োগজনিত চুক্তি অবসায়নের পর তৎকৃর্তক সংগৃহীত, প্রাপ্ত, আহরিত, জ্ঞাত কোনও তথ্য এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণ ব্যতীত অন্য কোনও উদ্দেশ্যে ব্যবহার বা প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ আছে।

দিদারুল আলমের প্রশ্নের জবাবে ডাক ও টেলিযোগোযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম জানান, বিটিসিএল’র কোনও কর্মকর্তা/কর্মচারী যাতে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার সঙ্গে জড়াতে না পারে তার জন্য সার্বিক নজরদারি অব্যহত আছে। অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। বিটিআরসি ৪০টি অভিযান পরিচালনা করে ২০১৫ সালে অবৈধ ভিওআইপি কাজে ব্যবহারের অভিযোগে ২২ হাজার ৯২০টি সিম বাজেয়াপ্ত করেছেন।

/ইএইচএস/ এএইচ/