এনআইডি মহাপরিচালক

‘আগামীতে হয়তো ফাইভ পাস করলেই এনআইডি কার্ড দেবো’

জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) মহাপরিচালক একেএম হুমায়ুন কবীর বলেছেন, ‘আমরা এবার ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত তথ্য-উপাত্ত নিচ্ছি। আগামী বছর বয়সের ক্ষেত্রে হয়তো আরও পেছনে যাবো। এভাবে হয়তো ফাইভ পাস করলেই এনআইডি কার্ড দেবো।’

তিনি জানান, যারা স্মার্টকার্ড নিয়েছেন তারা দশ আঙুলের ছাপ দিয়েছেন। যারা দেননি, আগামী বছরের প্রথম দিকে তাদের দশ আঙুলের ছাপ নেওয়া শুরু হবে। এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা যেহেতু আগামী ভোট (জাতীয় নির্বাচন) আরও সুন্দর করতে চাই, এ কারণে আমরা প্রিঙ্গার প্রিন্ট কিন্তু আপডেট করবো। আমরা কমিশনের সঙ্গে ইতোমধ্যে আলোচনা করছি। চলমান হালনাগাদ শেষে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের (আগামী বছরের ২ মার্চ) পরপরই এই কার্যক্রমে যাবো।’ এই ভোটার তালিকা ধরেই আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ভোট হবে বলেও জানান তিনি।

শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের ত্রৈমাসিক সভায় একথা বলেন তিনি। এ সময় তিনি কর্মকর্তাদের ভোটার তালিকা হালনাগাদের ক্ষেত্রে বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দেন।

পরিপূর্ণ তথ্য না দিলে ভোটার করবেন না

একেএম হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘যারা নতুন ভোটার- তাদের পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি’র সার্টিফিকেট, প্রয়োজনে জন্ম নিবন্ধন দেখে নিচ্ছি যাতে ভুল না হয়। একটি বিষয় সতর্ক থাকতে বলবো। যারা বয়স্ক ব্যক্তি তাদের যেন সচেতনভাবে যাচাই-বাছাই করে ভোটার করা হয়। ঢাকায় নানা ধরণের মানুষ বসবাস করেন। আফ্রিকা থেকে ল্যাটিন আমেরিকার লোকজন বসবাস করেন। কাজেই তারাও ভোটার হতে চাইতে পারেন। পরিপূর্ণ তথ্য না দিলে ভোটার করবেন না।’

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন বাহিনীর চাকরিজীবী রেশন তোলার জন্য তিন-চার বছর পর একজন স্ত্রীর নাম দিয়ে থাকেন। এখন সত্যিকার যখন বিয়ে হয়, তখন যার সঙ্গে বিয়ে হয় সেই নামের সঙ্গে ওই আগের নামের মিল থাকে না। পেনশনে জটিলতা সৃষ্টি হয়। তখন সংশোধনের জন্য আসেন। আবার অনেকের জন্মসনদ দুটো, তিনটা কার্যকর থাকে। আপনারা এসব ক্ষেত্রে খুব সতর্ক হবেন। যদি বয়স্ক কেউ ভোটার হন, দুটো জন্ম সনদ থাকে, তবে ধরে নেবেন- ডাল ম্যা কুচ কালা হ্যায়।’

তিনি বলেন, ‘যদি একেবারে নতুন ভোটার হয় তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সনদ তো রয়েছে। সেটা ফলো করতে হবে। ওয়ারিশান সনদটা ভালো করে দেখে নিয়েন। যেন ছোট ভাই বড় না হয়ে যান। এসব বিষয় খেয়াল রাখবেন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রবাসীদের জন্য সব সময় অগ্রাধিকার দিচ্ছি। তাদের জন্য একটা পৃথক ডেস্ক খুলেছি। তার অর্থ এই নয়, রোহিঙ্গার দ্বিতীয় জেনারেশনের সৌদি আরব থেকে যেন এসে ভোটার হয়ে যাবে।’

দালালদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলবেন না

কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের চারপাশে দালাল শ্রেণি আছে। প্রতিনিয়ত আপনাকে-আমাকে বিক্রি করেছ। এদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলবেন না। পত্রিকায় এসেছে যে দিনাজপুরে নির্বাচন কার্যালয়ে গিয়ে কান্না করছে যে, আমাকে একটু জীবিত করে দেন। আমি মরি নাই। তখন আমরা আপনাদের সফটওয়্যার দিয়ে দিলাম, সেখান থেকে এখন সেটা ঠিক করতে পারছেন।’

ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে বৈঠকে ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সেবা দেই। কিন্তু যদি গতি বাড়াতে না পারি, নাগরিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। অনেস্টি, সিনসিয়ারিটি যদি থাকে, তাহলে আমরা পারবো। অতীতের চেয়ে গতি বেড়েছে, কিন্তু আরও বাড়াতে হবে।’

তিনি বলেন,  বর্তমানে যে হালানাগাদ করা হচ্ছে, এই ভোটার তালিকা দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে। সুতরাং অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। কোনোভাবেই কেউ যেন বাদ না পড়ে এবং কেউ যেন দ্বৈত ভোটার হতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

সভায় ঢাকার আঞ্চলিক পর্যায়ের এনআইডি সংশোধন, স্থানান্তর ইত্যাদি সংক্রান্ত আবেদনের তথ্য তুলে ধরা হয়। এ পর্যন্ত মোট আবেদন পড়েছে ৩৯ হাজার ৩৫৩টি। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ২০ হাজার ৯৪৫টি। আর অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে ১৮ হাজার ৪০৮টি আবেদন। সবচেয়ে বেশি আবেদন অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে ঢাকা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে, ৭ হাজার ৬৪৮টি।