টকশোতে কথা বলতে প্রমাণ লাগে না: কমিশনার মো. আলমগীর

টকশোতে কথা বলতে প্রমাণ লাগে না বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। ইভিএমে আঙুলের ছাপ না মিললে ভোট দেওয়ার বিকল্প সুযোগ কী, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে এই কমিশনার বলেন, ‘টকশোতে কথা বলতে তো প্রমাণ লাগে না। কিন্তু আমাকে কথা বলতে হলে প্রমাণ লাগে। অনেকেই টকশোতে বলছেন—৫০ শতাংশ ক্ষমতা প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছে। প্রমাণ দেখান—আমরা মিলিয়ে দেখি, তাহলে শাস্তি হবে।’

মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন ভবনে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

মো. আলমগীর বলেন, ‘অনেকে টকশোতে আলোচনা করেন— প্রিসাইডিং কর্মকর্তার মাধ্যমে ওভাররাইট করা যায়। বিষয়টাই তো ভুল। ওভাররাইট করার তো কোনও সুযোগ নেই। ভোটারের পরিচয় নিশ্চিতের পর ব্যালট পেপার যেমন দেওয়া হয়, এটাও তাই। মিস-ইউজ যাতে কোনোভাবেই হতে না পারে, সে জন্য এক শতাংশের বেশি আমরা দিই না। এক শতাংশের ওপরে কোথাও লাগেও না।’

তিনি বলেন, ‘ওভাররাইট করা যায়, প্রিসাইডিং অফিসার ভোট দিয়ে দেয়—এই নানা রকম কথাবার্তা, ভুল ধারণা আছে। তা দূর করতে কী করা যায়, এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে কমিশন বৈঠকে। তবে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। ওটা এক শতাংশের ওপরে উঠবে না কখনও। তবে কথাটা আরও স্পষ্টকরণ করা হবে, যেন ভুল ধারণা দূর হয়। এখন প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে কাকে, কয়জনকে সুযোগটা দিলেন, সে তথ্য কেবল ইভিএমে থেকে যায়। এখন এটার সঙ্গে সবার সইসহ ফিজিক্যাল ডকুমেন্টও রাখার চিন্তা ভাবনা হচ্ছে।’

সব ভোটারের ১০ আঙুলের ছাপ নেওয়া হবে উল্লেখে করে মো. আলমগীর বলেন, ‘ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট দিতে ১০ আঙুলের ছাপ নিলে ভোটার শনাক্তের সমস্যা দূর হয়ে যাবে। এ জন্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই দেশের সব ভোটারের দুই হাতের ১০ আঙুলের ছাপ নেওয়া হবে।’

তিনি জানান, একটা আঙুলও যদি মিলে যায়, তারপরও একজন ভোটার ভোট দিতে পারবেন। এখন চার আঙুলের ছাপ থাকায় অনেকেরই তা মেলে না। তখন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তার আঙুলের ছাপ দিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দেন। এ নিয়ে নানা সমালোচনা হচ্ছে যে, কারচুপির সুযোগ থেকে যায়। ওভাররাইট করা যায়। তাই ১০ আঙুলের ছাপ নেওয়া হবে। একইসঙ্গে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার ওই ক্ষমতার বিষয়টি আরও স্পষ্ট করা হবে।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই কমিশনার বলেন, ‘ইভিএমে ভোট দিলে প্রথম কন্ডিশন হলো—যার ভোট তিনিই দেবেন, এটা নিশ্চিত করা হয়। ভোটার উপস্থিত না হলে অন্য কারও ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই। যন্ত্রই বলে দেয় কেউ ভোটার কিনা, অর্থাৎ ফিঙ্গার প্রিন্ট যখন দেবে ইভিএমে, সঙ্গে সঙ্গে নাম ও ছবি ভেসে উঠবে। আর ওই কেন্দ্রের না হলে সেটাও বলে দেবে যে আপনি এ কেন্দ্রের ভোটার নন।’

তিনি বলেন, ‘ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে দুটি কাজ একসঙ্গে হয়, ভোটারের পরিচয় শনাক্তকরণ এবং ব্যালট ইউনিটে ব্যালট ওপেন হয়ে যায়। তখন ভেতরে গেলেই ভোট দিতে পারবেন। কিন্তু কারও আঙুলের ছাপ যদি না মেলে, না মেলার কারণ হলো—বয়স বেশি হলে, ভারী কাজ করলে বা হাত না থাকলে। এখন কেউ ভোট দিতে না পারলে সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন হয়। সে জন্য প্রিসাইডিং অফিসার কী করেন—ভোটারের নাম, পরিচয়, এনআইডি নম্বর মিলিয়ে দেখেন। এরপর পরিচয় শনাক্ত হলে এনআইডি নম্বর ব্যালট ইউনিটে দেওয়া হয়। এই তিনটা যদি মিলে যায়, তবেই প্রিসাইডিং অফিস ভোটারের পরিবর্তে নিজের আঙুলের ছাপ দেন। তখন ব্যালট ইউনিট সচল হয়।তবে তিনি ভোট দিতে পারেন না। তিনি কেবল সচল করে দেন। সেটার রেকর্ডও আবার ইভিএমের মধ্যে থেকে যায়, যে কাকে এবং কয়জনকে তিনি এই সুযোগটা করে দিয়েছেন।’

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘বর্তমানে যেটা করা হয়, এমন ক্ষেত্রে এক শতাংশ ভোটারকে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সুযোগটা করে দিতে পারেন। ৫০০ ভোটার কোনও কেন্দ্রে থাকলে ৫ জন ভোটারকে তিনি সুযোগটা দিতে পারবেন। ৬ নম্বর ভোটার এলেও প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সেটা পারেন না। কারণ, প্রিসাইডিং অফিসারের আইনগত এবং টেকনিক্যালি সে সুযোগ থাকে না।’

এ অবস্থায় যদি প্রিসাইডিং, পোলিং অফিসার, নির্বাচনি এজেন্ট সবাই একমত হন, ওই ৬ নম্বর ব্যক্তিটি ভুয়া ভোটার নন, তখন প্রিসাইডিং অফিসার রিটার্নিং অফিসারকে ফোন করেন, তিনি আবার নির্বাচন কমিশনে ফোন করবেন। নির্বাচন কমিশন তখন একটা নতুন পাসওয়ার্ড দেয়। সেই পাসওয়ার্ড দিলেই কেবল ওই ৬ নম্বর ব্যক্তিকে সুযোগ করে দিতে পারেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা।