মৎস্য খাত উদ্যোক্তা তৈরি করছে: প্রাণিসম্পদমন্ত্রী

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, মৎস্য খাত উদ্যোক্তা তৈরি করছে। বেকারত্ব দূর করতে এ খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। গ্রামীণ অর্থনীতি সচলে ভূমিকা রাখছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন মিলনায়তনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের রজতজয়ন্তী উদযাপনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

এ সময় মন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর দেশের মৎস্য সম্পদকে গুরুত্ব দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন—মাছ হবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে মাছ ও প্রাণিসম্পদের গুরুত্ব আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সে সময় তুলে ধরেছিলেন বঙ্গবন্ধু। মৎস্য সম্পদ আহরণের জন্য তার সময়ে বিদেশ থেকে মাছ ধরার ট্রলার আনা হয়। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে সমুদ্র সংক্রান্ত আইন তৈরি করেছেন। এ আইনের ওপর ভিত্তি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রায় সমপরিমাণ আয়তনের সমুদ্রসীমায় আমাদের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেই সমুদ্রসীমা আমাদের সুনীল অর্থনীতির সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র হিসেবে কাজ করছে। সুনীল অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান প্রচলিত ও অপ্রচলিত মাছ, সামুদ্রিক শৈবালসহ অন্যান্য সম্পদ।

মৎস্যবিজ্ঞানের ক্ষেত্র উন্মুক্ত উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, দেশে ও দেশের বাইরে মৎস্যবিজ্ঞানের ব্যাপ্তি ও কাজ করার সুযোগ অনেক বেশি। এ বিষয়ে দেশে গবেষণার প্রচুর সুযোগ ও বরাদ্দ রয়েছে। মৎস্যবিজ্ঞানীরা গবেষণার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ সারা দেশে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। মৎস্য খাতের উন্নয়নের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য মৎস্যবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। মৎস্য খাত উদ্যোক্তা তৈরি করছে। বেকারত্ব দূর করতে এই খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। গ্রামীণ অর্থনীতি সচলে ভূমিকা রাখছে।

দেশে মাছের উৎপাদন ৫ দশমিক ৬৫ লাখ মেট্রিক টন উল্লেখ করে মন্ত্রী আরও যোগ করেন, একসময় বলা হতো ভাতে-মাছে বাঙালি। তারপর একটা সময় বলা হতো– মাছের আকাল। বর্তমানে মাছের উৎপাদন অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে মৎস্য খাতে উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। সরকার এ খাতে স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ দিচ্ছে, উদ্যোক্তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, দেশীয় প্রজাতির অনেক মাছ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট গবেষণার মাধ্যমে ৩৭ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় মাছ ফিরিয়ে এনেছে। দেশীয় মাছ সংরক্ষণে লাইভ জিন ব্যাংক করা হয়েছে। কোনও অঞ্চলে মাছের শূন্যতা দেখা দিলে জিন ব্যাংক থেকে মাছের পোনা সে অঞ্চলে অবমুক্ত করা হবে। ফলে দেশের কোথাও আর মাছের আকাল হবে না। এখন গ্রাম থেকে শহরে সর্বত্র পুষ্টিসম্মত পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় প্রণোদনা ও পৃষ্ঠপোষকতা, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ ও সংশ্লিষ্ট অন্যরা এগিয়ে আসায় এটা সম্ভব হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. মনিরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য প্রদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন মনির।