মুক্তিযোদ্ধা ওডারল্যান্ডকে নিয়ে ডকুমেন্টারি ‘দ্য ডাচ ম্যান’

ডাচরা জানুক তাদের একজন বীরের গল্প

একাত্তরে বাঙালিদের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন বিদেশিরাও। তাদের সক্রিয় সমর্থন মুক্তিযুদ্ধকে আরও বেগবান করেছে। এরকম একজন বিদেশি হচ্ছেন উইলিয়াম এএস ওডারল্যান্ড। নেদারল্যান্ডসের নাগরিক ওডারল্যান্ড একমাত্র বিদেশি—যিনি মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার জন্য বীর প্রতীক খেতাব পেয়েছেন। তাকে নিয়ে ‘দ্য ডাচ ম্যান: স্ট্যান্ডিং ফর বাংলাদেশ, ১৯৭১’ নামে একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করা হয়েছে।

শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) বিজয় দিবসে নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধে তার অবদানের ওপর ‘দ্য ডাচ ম্যান: স্ট্যান্ডিং ফর বাংলাদেশ, ১৯৭১’ ডকুমেন্টারি উদ্বোধন করা হয়। এই প্রামাণ্যচিত্রে ওডারল্যান্ডের তৎকালীন সহকর্মী ও সহযোদ্ধাদের কাছ থেকে তার সম্পর্কে শোনা গল্প তুলে ধরা হয়েছে।

এ বিষয়ে নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা জানি, তিনি একমাত্র বিদেশি, যিনি বীর প্রতীক পদক পেয়েছেন। কিন্তু তিনি বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাচ্ছিলেন। আমরা অনেক দিন থেকে চিন্তা করছিলাম একটা কিছু করার।’

রাষ্ট্রদূত জানান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হল্যান্ডের হয়ে যুদ্ধ করেছিলেন ওডারল্যান্ড। সে কারণে আমরা ডাচ মিলিটারি আর্কাইভে চিঠি লিখলাম, সেখান থেকে কিছু তথ্য পাওয়ার জন্য। পরবর্তী সময়ে কিছু দুর্লভ ফুটেজ সংগ্রহ করা সম্ভব হয়।

তিনি বলেন, ‘এরপর আমরা ঢাকায় কিছু তরুণ গবেষকের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাদের সাহায্যে ডকুমেন্টারি তৈরি করা হয়। প্রায় সাত মিনিটের এই ডকুমেন্টারিতে কথা বলেছেন বীর প্রতীক জয়নাল আবেদিন খান, সাংবাদিক ও গবেষক সোহরাব হাসান, বাটা কোম্পানির সাবেক কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম ও শহীদুল আলম খান।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমি ডাচদের কাছে তাদের একজন বীরের গল্প বলার চেষ্টা করেছি যে বাংলাদেশে অবস্থান করে তিনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।’

মুক্তিযোদ্ধা ওডারল্যান্ডের ‘বীর প্রতীক’ সনদের অনুুলপিওডারল্যান্ডের মুক্তিযুদ্ধ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বীরত্বের জন্য খেতাবধারী উইলিয়াম এএস ওডারল্যান্ড ১৯৭১ সালে বাটা সু কোম্পানিতে চাকরি করতেন। সেই সুবাদে সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকায় আসেন তিনি। ২৫ মার্চের বিভীষিকা তিনি নিজের চোখে দেখেছেন। হানাদার বাহিনীর সেই নৃশংসতার বিভিন্ন ছবি তুলে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন ওডারল্যান্ড।

নিঃস্বার্থভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ওডারল্যান্ড একটি উদ্দেশ্য নিয়ে পাকিস্তানি জেনারেলদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। যুদ্ধ চলাকালে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতেন এবং পরে তা মুক্তিযোদ্ধাদের সরবরাহ করতেন।

ওই সময়ে গুলশান লেকের পাশে দোতলা একটি বাড়িতে থাকতেন ওডারল্যান্ড। সেখানেই প্রথম মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। নলছিটি ব্রিজ ধ্বংস করা এবং টেলিফোন ভবনে বোমা নিক্ষেপে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

পাকিস্তানি আর্মির সঙ্গে খাতির থাকার কারণে তার গাড়ির জন্য ‘স্পেশাল পাস’ ছিল এবং তার গাড়ি চেক করা হতো না। ওই গাড়িতে তিনি অস্ত্র, ওষুধ ও খাবার মুক্তিযোদ্ধাদের সরবরাহ করতেন। এমনকি বাটা ফ্যাক্টরিতে মুক্তিযোদ্ধা গেরিলারা নিরাপদে লুকিয়ে থাকতেন।

বাংলাদেশের একজন নিঃস্বার্থ বিদেশি বন্ধুর গল্প বলার এই প্রয়াস অব্যাহত থাকলে আরও বিদেশি বন্ধুদের গল্প সবাই জানতে পারবেন।