জানতে চান বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে সরকারের অংশগ্রহণ কী?

সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনায় সরকারের অংশগ্রহণ কী তা জানতে চেয়েছেন বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। তারা বলেছেন, এই পেনশন স্কিমে সরকারের অংশগ্রহণ কী? সরকারের কোনও অংশগ্রহণ নেই। মানুষ রিটার্ন কীভাবে পাবে তা পরিষ্কার নয়।

মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। বিলটি মঙ্গলবার সংসদে পাস হয়।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, এই বিলটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সংবিধানে বলা হয়েছে, ‘সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার, অর্থাৎ বেকারত্ব, ব্যাধি বা পঙ্গুত্বজনিত কিংবা বৈধব্য, পিতৃমাতৃহীনতা বা বার্ধক্যজনিত কিংবা অনুরূপ অন্যান্য পরিস্থিতিজনিত আয়ত্তাতীত কারণে অভাবগ্রস্ততার ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্যলাভের অধিকার৷ ’ মানুষের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে সরকার আবার ফেরত দেবে। এই বিল পাস করার কোনও সুযোগ নেই।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক বলেন, বিলের কথাগুলো ভাল। কিন্তু এই পেনশন স্কিমে সরকারের অংশগ্রহণ কী? সরকারের কোনও অংশগ্রহণ নেই। এটা ব্যাংকের ডিপিএস স্কিমের মতো। গুঞ্জন আছে, সরকারের কী টাকার অভাব হয়েছে যে জনগণের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলবে?

টাকা পাচার, বিদেশে বাংলাদেশিদের বাড়ি কেনাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে মুজিবুল হক বলেন, অর্থমন্ত্রী কথা কম বলেন। বোবার শত্রু কম। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর কানে কথা পৌঁছে কিনা জানা নেই। তার কোনও ফিডব্যাক, উদ্যোগ দেখা যায় না।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, আপাতদৃষ্টিতে আইনটি ভালো। কিন্তু বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেভাবে প্রভিডেন্ট ফান্ড করে এটি তার বাইরে কিছু বলে মনে হয় না। সরকার কী মুনাফা দেবে তা পরিষ্কার নয়। তিনিও দাবি করেন, এই আইনটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

জাতীয় পাটির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, শেয়ালের কাছে মুরগি বর্গা দেওয়ার মতো। মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখবে আর ব্যাংক দেদারছে টাকা বিদেশে পাচার করবে। ব্যাংকগুলো মানুষের আস্থা হারিয়েছে। এক ব্যাংকের পরিচালক আরেক ব্যাংক থেকে টাকা নিচ্ছে। ব্যাংকগুলো বারো ভূঁইয়াদের কাছে চলে গেছে। সব সুবিধা পাচ্ছেন ঋণখেলাপিরা। এসময় বিদেশে টাকা পাচার নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, দেখার কেউ নেই। যারা টাকা পাচার করছে তাদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।

সংসদ সদস্যদের আজীবন পেনশন স্কিম চালু করার জন্য জাতীয় সংসদে দাবি জানিয়েছেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল–২০২৩’ ওপর জনমত যাচাই আলোচনায় অংশ নিয়ে এ দাবি করেন তিনি।

রেজাউল করিম বাবলু বলেন, ‘অফিসের পিয়ন, গার্ডরা পেনশন পেয়ে থাকে।’ এমপিদের জন্য এমন ভাতা দেওয়ার জন্য সংসদে আগেও আলোচনা করেছিলেন বলে জানান তিনি। বাবলু বলেন, যারা একবার সংসদ সদস্য হিসাবে পদ লাভ করবেন তারা যেন আজীবন একটা পেনশন স্কিম পায়।

নিজের এক শিক্ষক ৩৬ বছর চাকরি করার পরেও এখনও পেনশনের টাকা তুলতে পারেনি বলে অভিযোগ করে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু বলেন, জনগণ পেনশনের টাকা জমা দিবে কিন্তু তারা তো অফিসের বারান্দাই চিনে না। এই টাকার নিরাপত্তা কী? নতুন বিলে সেই নিশ্চয়তা নেই বলেও দাবি করেন তিনি।

বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, এই বিলটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এটি চমৎকার উদ্যোগ। কিন্তু এই পেনশন ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের সাড়া পাওয়া যাবে না। কারণ সরকারি চাকরিজীবী যেভাবে পেনশন পান তার সঙ্গে অনেক কিছুই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। মানুষ রিটার্ন কীভাবে পাবে তা পরিষ্কার নয়। এটি অনেকটা ব্যাংকিং প্যাকেজের মতো। এই বিলটি পাসের আগে সাধারণ মানুষের মতামত নেওয়া উচিত।

বিরোধী দলের সদস্যদের সমালোচনার জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এই বিলটি আনার আগে অনেক আলোচনা করা হয়েছে। যারা লিখিত মতামত দিয়েছিলেন তাদের মতামত আমলে নেওয়া হয়েছে। সংসদীয় কমিটিতেও বিলটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বিলটি গ্রহণযোগ্যতা পাবে বিবেচনায় এটি সংসদে আনা হয়েছে।