নির্বাচনে মানুষের আস্থা ফেরানোর দায়িত্ব রয়েছে: সিইসি

দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা এখনও খুব ভালোভাবে আস্থা রাখার মতো হয়ে ওঠেনি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ করে সিইসি বলেন, নির্বাচন কমিশন যেহেতু নির্বাচন আয়োজন করবে, আমাদের দায়িত্ব রয়েছে মানুষের আস্থাটা ফিরিয়ে আনা।

জাতীয় ভোটার দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) বিকালে নির্বাচন ভবনে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের উদ্ধৃতি দিয়ে সিইসি বলেন, আজকে পত্রিকায় পড়লাম একজন বড়মাপের নেতা, জাতীয় পার্টির জিএম কাদের—তার বক্তব্য হচ্ছে নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। কথাটি হয়তো সত্য নয়। কিছুটা সত্যতা যদি থেকেও থাকে, তাহলেও কিন্তু এটা ভালো কথা নয়।

তিনি বলেন, দেশের ১২ কোটি মানুষ ভোটার হয়েছে। জানি এই ১২ কোটি ভোট টার্নআউট হবে না। ভোট দেবে না। কিন্তু ভোটার উপস্থিতিটা যদি বাড়াতে পারি, জানি না এজন্য আমাদের কী করতে হবে। কিন্তু একটা বিষয়ে কোনও সংশয় নেই, ভোটার এডুকেশন বাড়িয়ে যদি আমরা ভোটার সাধারণকে উদ্বুদ্ধ করতে পারি—এজন্য আমাদের উদ্ভাবনের প্রয়োজন আছে, গবেষণার প্রয়োজন আছে। সবসময় এটা আপনারা করেছেন। কিন্তু আরও নতুনভাবে করে যদি আমরা দেখাতে পারি যে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ভালো হয়েছে।

নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, সত্তরের নির্বাচন হয়েছিল লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডারের (এলএফও) আন্ডারে। তখন দেশে কোনও সংবিধান ছিল না। সেই নির্বাচনে যে ফলাফল হয়েছিল, পাকিস্তান সামরিকজান্তা তা অমান্য করলো, অশ্রদ্ধা করলো। ওই সত্তরের নির্বাচন, একটা নির্বাচনের ফলাফল উপেক্ষা করার কারণে একটি দেশ ভেঙে গিয়েছিল। জাতি যখন দেখলো তাদের অপমানিত করা হয়েছে, তাদের অস্বীকার করা হয়েছে, তাদের ম্যান্ডেটকে মূল্য দেওয়া হয়নি, তখন একটা যুদ্ধ বেধে গেলো।

তিনি বলেন, নির্বাচন কিন্তু রাজনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ—এটা আমাদের সবাইকে অনুধাবন করতে হবে। আমাদের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকেও সেটা অনুধাবনে আনতে হবে। আমি বলবো, নির্বাচনটাকে, ভোটাধিকার প্রয়োগকে হালকাভাবে গ্রহণ যেন না করা হয়।

সিইসি বলেন, স্বাধীনতার পর গঠিত প্রথম নির্বাচন কমিশনের অধীনে ১৯৭৩ সালে সাধারণ নির্বাচন হয়েছিল। এরপর সব ওলটপালট হয়ে যায়। তারপর নির্বাচনটা আর ভালোভাবে এগোতে পারেনি। এরপর বিভিন্ন নির্বাচন হয়েছে—সেই নির্বাচনগুলো যে খুবই আস্থা রাখার মতো হয়েছে তা নয়। নির্বাচনের বাইরেও গণভোটের বিধান ছিল—অনেক গণভোটে উপস্থিতি খুবই ভালো ছিল প্রায়, ১২০% উপস্থিতি ছিল। এটাকে খুব ভালো উপস্থিতি বলা যাবে না। ১২০% উপস্থিতি হলে কিছুটা সন্দেহের উদ্রেক হবে। এত উপস্থিতি কী করে হয়। কাজেই উপস্থিতি ভালো মানে সবসময় ভালো উপস্থিতি নয়।

তিনি বলেন, এরপর আমরা আবার নির্বাচন ব্যবস্থায় ফিরে এসেছি। ৯০ সালের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে কিছু নির্বাচন হয়েছে। কেবল ২০০৭ সালে একটি ওয়ান ইলেভেন সরকারকে সংবিধানবহির্ভূতভাবে অবস্থান করতে হয়েছিল। তারপর আবারও নির্বাচনটা চালু হয়েছে। সেটা এখনও অব্যাহত আছে।

তিনি বলেন, নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হলে উপস্থিতি এমনিতেই ভালো হয়। তার সাথে আমাদের ভোটার এডুকেশন সংযুক্ত হলে... ভোটারকেও একটি দায়িত্ব মনস্তাত্ত্বিকভাবে নিতে হবে যে কাকে ভোট দেওয়াটা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, আমরা কিন্তু একটা সংকটে আছি। এটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ, ভোট নিয়ে কিন্তু এখনও আমরা রাজনৈতিক অঙ্গনে পুরোপুরি ঐকমত্য দেখতে পাচ্ছি না। এই ঐকমত্যটা খুবই প্রয়োজন। ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে যদি নির্বাচনটা অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে রাজনৈতিক সংকট তৈরি করার সম্ভাবনাটা ক্ষীণ হয়ে যায়। আমরা কখনোই চাই না নির্বাচনের আগে বা নির্বাচনোত্তর সময়ে নির্বাচনকে নিয়ে কোনও রাজনৈতিক সংকটের উদ্ভব হোক। যেমন সত্তরের নির্বাচনকে নিয়ে রাজনৈতিক সংকট উদ্ভব হওয়ার কারণে আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছিলাম।

ভোট খুবই গুরুত্বপূর্ণ দলিল উল্লেখ করে সিইসি বলেন, এই দলিল ছাড়া ভোট হবে না। আবার এই দলিলটি কিন্তু যদি শুদ্ধ না হয়, যখনই ভোট করতে গেলাম তখন যদি ১০-২০টা মামলা হয়ে যায়, তাহলে সংকটে পড়ে যেতে পারি। আশা করি ভোটার তালিকাটা নির্ভুল হবে। এটার ওপর নির্ভর করবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনটা কতোটা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে আয়োজন করতে পারবো।

কর্মকর্তাদের উদ্দেশ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আগামী নির্বাচনে আমরা যেন আমাদের দায়িত্ব পুরোপুরি সুন্দরভাবে, দক্ষভাবে ও জাতির কাছে আস্থাভাজনভাবে পরিচালনা করে একটি সুন্দর একটা ভোট সম্পন্ন করতে পারি..। আমরা কিন্তু সমালোচিত হতে পারি। প্রশংসিত হতে পারি। আমাদের চেষ্টা থাকবে সমালোচনার ঊর্ধ্বে থেকে যতদূর সম্ভব প্রশংসা কুড়িয়ে নিতে পারি। জানি বিষয়টি খুবই দুরূহ ও চ্যালেঞ্জিং। তারপরও আমার আস্থা আছে— বিশ্বাস আছে। সবার সহযোগিতা নিয়ে আমরা সমন্বিতভাবে এগিয়ে গেলে একটা আপেক্ষিক অর্থে উন্নততর নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারবো।