ট্রান্সমিশন গ্রিড সম্প্রসারণ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ছে, বাড়ছে ব্যয়ও

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ট্রান্সমিশন গ্রিড সম্প্রসারণ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে প্রকল্প ব্যয়ও। প্রকল্প এলাকা সম্প্রসারণ, কর্মপরিধি বৃদ্ধি ও বিভিন্ন অঙ্গের ব্যয় বৃদ্ধির স্বার্থে রবিবার (১২ মার্চ) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে ২০১৮ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী ও একনেকের চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে রবিবার শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এই প্রকল্পসহ ৮টি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যার প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১২ হাজার ১৬৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) লিমিটেড দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ট্রান্সমিশন গ্রিড সম্প্রসারণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

এতে মূল প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল তিন হাজার ২৭৩ কোটি ৮৭ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। সংশোধিত প্রকল্পে প্রাক্কলিত ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৩২২ কোটি ৩৪ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন এক হাজার ২৭ কোটি ২ লাখ ৬৮ হাজার টাকা, বৈদেশিক ঋণ দুই হাজার ৮২৪ কোটি এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৪১৭ কোটি ৩০ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

এই প্রকল্পে ঋণসহায়তা দিচ্ছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। মূল প্রকল্পের মেয়াদ আগামী জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও, সংশোধিত প্রকল্পে সময় আরও দেড় বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর করা হয়েছে।

দেশের ১৯ জেলার ৫০টি উপজেলায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের শিল্প ও শক্তি বিভাগ থেকে প্রকল্পের উদ্দেশ্যের বিষয়ে বলা হয়েছে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের মানুষের ক্রমবর্ধমান আবাসিক ও বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করা, বরিশাল অঞ্চলে নির্মিতব্য অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং বাংলাদেশের বৃহত্তম কৃষি উৎপাদন এলাকা হিসেবে পরিচিত রাজশাহী এলাকার কৃষিকাজের সুবিধার্থে নির্ভরযোগ্য ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ; রিকন্ডাক্টরিং; নতুন গ্রিড উপকেন্দ্র নির্মাণ বা বিদ্যমান উপকেন্দ্রের ক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ এবং বিদ্যমান গ্রিড উপকেন্দ্রে নতুন বে-সম্প্রসারণ।

কর্মপরিধি বৃদ্ধি, প্রকল্প এলাকা সম্প্রসারণ ও বিভিন্ন অঙ্গের ব্যয় বৃদ্ধির জন্য এই সংশোধনী আনা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার তিন হাজার ৩৫৮ সার্কিট কিলোমিটার বিদ্যমান বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের ক্ষমতাবর্ধন এবং উচ্চ বিভবসম্পন্ন (হাই ভোল্টেজ) নতুন বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইন নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অংশ হিসেবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৩০৮ দশমিক ৬৯৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ, ৩২৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার রিকন্ডাক্টরিং, ৪টি নতুন জিআইএস উপকেন্দ্র নির্মাণ, একটি বিদ্যমান উপকেন্দ্রের ক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ এবং ৬টি বে-সম্প্রসারণের সংস্থান রয়েছে।

প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাবের বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশন তার মতামতে উল্লেখ করেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ভারত (আদানি) থেকে আমদানি করা বিদ্যুৎ দেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা সম্ভব হবে। পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ দক্ষিণাঞ্চলে নির্মিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পাওয়ার ইভাক্যুয়েশনের জন্য এই প্রকল্পের আওতাধীন সঞ্চালন লাইনগুলো ব্যবহার করা যাবে।

এ ছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের বিদ্যুৎ সঞ্চালনব্যবস্থার সক্ষমতা বাড়বে এবং ওই এলাকাগুলোর ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে নির্ভরযোগ্য ও মানসম্মত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে প্রতীয়মান হয়।