আবার পেছালো বই পড়ার বিকল্প উৎস তৈরির প্রকল্প বাস্তবায়ন

সাধারণ মানুষের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ তৈরিতে নেওয়া ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি পরিচালনা সংক্রান্ত প্রকল্পের মেয়াদ আবারও বাড়িয়েছে সরকার। এ নিয়ে প্রকল্প গ্রহণের পর দুই দফায় সময় বাড়ানো হলো। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় গৃহীত এ প্রকল্প বাস্তাবায়নের নতুন সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর। একই সঙ্গে বাড়ানো হয়েছে প্রকল্প ব্যয়। সরকারের সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে নেওয়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নতুন ব্যয় ধরা হয়েছে ১১১ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সরকারের অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন পায় মঙ্গলবার (২১ মার্চ)। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানিয়েছে, দেশের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক মান উন্নয়নের প্রয়োজনে সৃজনশীল পঠন-পাঠন ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড প্রান্তিক পর্যায়ে সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ নেয় সরকার। এর অংশ হিসেবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আওতায় নেওয়া হয় ‘দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি প্রকল্প’। ৭৬টি ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির মাধ্যমে ৬৪ জেলার ৩৬৮ উপজেলায় তিন হাজার ২০০ স্পট বা এলাকায় সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নারী ও শিশু-কিশোরদের জন্য বই পড়ার বিকল্প উৎস তৈরি করতে নেওয়া হয় এই প্রকল্প। ২০১৮ সালে হাতে নেওয়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয় ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৩৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।

কমিশন সূত্র জানিয়েছে, মূলত চার কারণে প্রকল্পটিতে সংশোধনী প্রস্তাব আনা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে– মোবাইল লাইব্রেরির সেবা অব্যাহত রাখা, কিছু খাতে ব্যয় বৃদ্ধি ও হ্রাস, কিছু অংশ সংযোজন ও বিয়োজন এবং প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা।

সূত্র জানিয়েছে, পরবর্তীতে প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক না হওয়ায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে প্রধম সংশোধনী প্রস্তাব আনা হলে তা একনেকের অনুমোদন পায়। এ সময় এর ব্যয় আরও বাড়িয়ে করা হয় ৭৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

বাড়তি সময়ের মধ্যেও প্রকল্পটি শতভাগ বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হলে এর সময় ও ব্যয় আরও বাড়িয়ে দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয় একেনেকে। এ সময় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ১১১ কোটি ১৫ লাখ টাকা, আর সময় নির্ধারণ করা হয় ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর। যাচাইবাছাই শেষে প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব একনেকের অনুমোদন পেয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, ৩৬৮টি উপজেলা ও থানায় প্রত্যক্ষভাবে প্রায় দুই লাখ ৭৫ হাজার পাঠকের সৃজনশীল বইয়ের পাঠাভ্যাসের উন্নয়ন ঘটানো, সাধারণ মানুষ বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে উৎসাহ দেওয়া, সুযোগ বাড়ানোর মাধ্যমে ৭০০টি সাংস্কৃতিক সংঘ গঠন এবং ২২ হাজার অনুষ্ঠান করার উদ্দেশ্যেই নেওয়া হয় এই প্রকল্পটি। সারা দেশের ২৭৩টি উপজেলা, ৯৫টি থানা এবং দেশের সব সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় গণগ্রন্থাগার অধিদফতরকে।

কমিশন সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পের আওতায় ৫ হাজার ৪০৪টি ভ্রাম্যমাণ গাড়ি-লাইব্রেরি ও মাইক্রোবাস হায়ারিং চার্জ গঠন করা হবে। এসব লাইব্রেরির জন্য ২৫ হাজার বই ও সাময়িকী কেনা হবে। এর জন্য আউটসোর্সিং সেবা কেনা হবে, একটি মোটরযান রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়, সাত সেট কম্পিউটার ও যন্ত্রাংশ কেনা, তিনটি অফিস সরঞ্জাম (ফটোকপিয়ার) কেনা, ৫০টি আসবাবপত্র কেনা, একটি কম্পিউটার সফটওয়্যার (অ্যাপসহ) এবং অন্যান্য (কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বেতন ও ভাতা), প্রচার ও বিজ্ঞাপন, জ্বালানি ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

জানা গেছে, প্রকল্পটি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি এডিপিতে ৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

জানা গেছে, সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার ১৩.২.৩ অনুচ্ছেদে সমাজের সব পর্যায়ের মানুষের শিক্ষা, বিনোদন, সংস্কৃতি ও তথ্যের প্রয়োজন মেটাতে জাতীয় পর্যায় থেকে গ্রামীণ পর্যায়ে গ্রন্থাগার নেটওয়ার্ক, অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা এবং সেবাসমূহ বিকাশের জন্য নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়ার বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। এ বিবেচনায় প্রকল্পটির উদ্দেশ্য অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বলে মনে করে সংশ্লিষ্টরা।

প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন অনুরোধ করে পরিকল্পনা কমিশন তাদের মতামতে বলেছে, প্রকল্পটির আওতায় দেশের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক মান উন্নয়নের প্রয়োজনে সৃজনশীল পঠন-পাঠন ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড প্রান্তিক পর্যায়ে সম্প্রসারণ করা হবে। একই সঙ্গে জনগণের মানসিক বিকাশ ও উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে দেশের সবগুলো জেলা-উপজেলায় মানুষের দোরগোড়ায় সৃজনশীল পঠন-পাঠন ও নানামুখী সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার জন্য দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ বিবেচনায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য বিবেচনা করা যেতে পারে বলে মনে করে পরিকল্পনা কমিশন।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সাধারণ পাঠকের সৃজনশীল বইয়ের পাঠাভ্যাসের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হবে।