পানির টেকসই ব্যবহারে সহায়ক হতে পারে ডাচ প্রযুক্তি

বাংলাদেশে নদী ও জলাধার ব্যবস্থাপনা এবং কৃষি ও শিল্পে পানির টেকসই ব্যবহারসহ বিভিন্ন বিষয়ে সহায়তা দিচ্ছে নেদারল্যান্ডস। ওই দেশের সহায়তায় তৈরি হয়েছে ডেল্টা প্ল্যান ২১০০, যা বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। ডাচদের প্রযুক্তি ও জ্ঞান বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য। কারণ, তাদের ভৌগোলিক কাঠামোর সঙ্গে মিল রয়েছে বাংলাদেশের, উভয় দেশই ব-দ্বীপ।

৪৬ বছর পরে আজ ২২ মার্চ থেকে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ পানি সম্মেলন শুরু হয়েছে। বৈশ্বিক এই উদ্যোগ মাথায় রেখে দেশটির সঙ্গে আরও সহযোগিতার জন্য চেষ্টা করছে সরকার। এর ধারাবাহিকতায় ওই দেশের সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করার জন্য দেশটির পানি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করছে বাংলাদেশের দূতাবাস। উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রথা, সংস্কৃতির সঙ্গে অর্থনীতির মিশ্রণ থাকতে হবে।

এ বিষয়ে নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা পানির দেশের মানুষ এবং পানির মূল্য আমরা বুঝি। আমাদের সব ক্ষেত্রে পানির যথাযথ ও টেকসই ব্যবহার নিশ্চিতের জন্য এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটি করা দরকার।’

নেদারল্যান্ডসের সহযোগিতায় ডেল্টা প্ল্যানের মাধ্যমে কৃষির ঝুঁকিও হ্রাস করার পরিকল্পনা আছে। কারণ, দেশটি পানি বিষয়ক প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত।

চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশ একটি নদীবিধৌত দেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত প্রথম ১০টি দেশের মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। এর কারণে এই ব-দ্বীপের ভঙ্গুরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গত চার দশকে বাংলাদেশ ১২০০ কোটি ডলারেরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া প্রতি বছর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মোট দেশজ উৎপাদনের এক শতাংশের বেশি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা আছে।’

শুষ্ক ও ভরা মৌসুমে আন্তনদীর পানি প্রবাহে পরিবর্তন লক্ষণীয় জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতি বছর বাংলাদেশের নদীগুলো ১০০ কোটি টনের বেশি পলিমাটি বহন করে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেয়। এসব কারণে আমরা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। নদীভাঙন, বন্যা ও খরাসহ অনেক ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশে। শুধু তাই না, বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের সংখ্যা অনেক বেশি বেড়েছে। অতিবৃষ্টি ও তাপদাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার কারণে স্বাভাবিক জীববৈচিত্র্যে পরিবর্তন আসছে বলে তিনি জানান।

সরকারের পদক্ষেপ

বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে। ২০১৫ থেকে আমাদের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা সংক্রান্ত তহবিলের অর্থ দ্বিগুণ করা হয়েছে। এছাড়া ডেল্টা প্ল্যানও তৈরি করা হয়েছে এবং এর অধীনে প্রকল্প গ্রহণ শুরু হয়েছে।

রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, ‘ডেল্টা প্ল্যানের উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের অর্থনীতি ও জীববৈচিত্র্যের দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থাপনা এবং এর মাধ্যমে পরিবেশ সমর্থন করে এমন অবকাঠামো বিনির্মাণ এবং সবুজ নগরায়ণ।’

তিনি বলেন, ডেল্টা প্ল্যানের মাধ্যমে কৃষির ঝুঁকিও হ্রাস করা হয়। জলাধার, নদী, ভূমি এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া শিল্পে পানির পরিমিত ব্যবহারকে উৎসাহিত করা হয়েছে।

জ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে পানির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য ডেল্টা প্ল্যানের উদ্যোগ বলে তিনি জানান।