মেরামতে ৫০০ কোটি টাকা পাচ্ছে ইসি

২০-২৫ আসনে ভোট হতে পারে ইভিএমে

ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) মেরামতে ৫০০ কোটি টাকা পাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এই পরিমাণ অর্থ ছাড়ের আশ্বাস পাওয়া গেছে। এটা হলে আগামী সংসদ নির্বাচনে ২০ থেকে ২৫টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হতে পারে। ইভিএম মেরামতের খরচের বিষয়টি বিবেচনা করে সোমবার (৩ এপ্রিল) অনুষ্ঠেয় কমিশন সভায় কতগুলো আসনে ইভিএমে ভোট হবে, সেই সিদ্ধান্ত আসতে পারে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভার এজেন্ডায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিষয়টি রয়েছে। এছাড়া ইভিএম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) সঙ্গে চুক্তি অনুমোদনের বিষয়টিও রয়েছে।

নির্বাচন কমিশন আগামী নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এজন্য প্রয়োজনীয় নতুন ২ লাখ ইভিএম কিনতে ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের প্রস্তাবও সরকারের কাছে পাঠিয়েছিল। তবে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সরকার ওই প্রকল্পটি স্থগিত করে। এর ফলে নির্বাচন কমিশন ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বিদ্যমান ইভিএম দিয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক আসনে ভোটগ্রহণের চিন্তা করে। কিন্তু ইসির হাতে থাকা ইভিএম মেরামতে বড় অঙ্কের অর্থের প্রয়োজন রয়েছে। মেরামতের জন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে এক হাজার ২৬০ কোটি টাকার চাহিদা দেওয়া হলে প্রাথমিকভাবে তা নাকচ করে দেওয়া হয়। এজন্য সুনির্দিষ্ট করে প্রস্তাব দেওয়ার কথা বলে ইসিকে চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়। ইসির পক্ষ থেকে নতুন করে আর্থিক প্রস্তাব দেওয়া হলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে অর্থ মন্ত্রণালয় ৫০০ কোটি টাকার মতো ছাড় দিতে সম্মত হয়েছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি ইসি সচিবকে জানানো হয়েছে। ইসি সচিবকে পাঠানো ওই চিঠিতে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও সরকারের কৃচ্ছ্রসাধনের নীতির কথাও তুলে ধরা হয়েছে বলে জানা গেছে।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ ইসির হাতে থাকা দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে ৬০ হাজারের মতো বর্তমানে সচল রয়েছে। এই ইভিএম দিয়ে সর্বোচ্চ ৪২টি আসনে (প্রতি আসনে গড়ে ১৪০০) ভোট করা সম্ভব। অবশ্য ভোটার এডুকেশন (মক ভোটিং), ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণে প্রয়োজনীয় ইভিএম বাদ দিলে এই আসন আরও কমে আসবে। এদিকে ইসি সচিবালয় ৬০ হাজার ইভিএমকে সচল বললেও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বিএমটিএফ কোনও মেশিনকেই সচল বলছেন না। তাদের মতে, দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে ৪০ হাজার একেবারেই মেরামতের অযোগ্য। বাকি এক লাখ ১০ হাজার মেরামত করতে হবে। বিএমটিএফের মতে, ২০১৮ সালে যখন ইভিএম সরবরাহ করা হয়েছিল—তখন এর আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫ বছর। ফলে আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে এসব ইভিএমের আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে বর্তমানে যে ৬০ হাজার মেশিন সচল রয়েছে, সংসদ নির্বাচনের আগে তা টেকনিক্যালি অচল (মেয়াদ উত্তীর্ণ) হয়ে যাবে। এজন্য বিএমটিএফ বলছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যেসব ইভিএম ব্যবহার হবে, তার সবগুলোই মেরামত করে (সফটওয়্যার আপডেট, ব্যাটারি পরিবর্তনসহ যন্ত্রাংশ সংযুক্ত ইত্যাদি) ব্যবহার উপযোগী করতে হবে। বিএমটিএফ এসব ইভিএম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ও যন্ত্রাংশ সংযুক্ত করে কিউসি (কোয়ালিটি কন্ট্রোল) সনদ দেবে। এতে নতুন আয়ুষ্কাল নির্ধারণসহ ব্যবহারযোগ্য বলে ঘোষণা করা হবে।

ইসির তথ্য অনুযায়ী, সচল ৬০ হাজার ইভিএম দিয়ে ৪০টির মতো আসনে ভোটগ্রহণের সুযোগ থাকলেও বিএমটিএফের শর্ত অনুযায়ী, মেরামত ছাড়া কোনও ইভিএম ব্যবহার করার সুযোগ নেই। এতে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ইসি ৩৫ থেকে ৪০ হাজারের মতো ইভিএম মেরামত করার চিন্তাভাবনা করছে বলে সূত্র জানিয়েছে। এই ইভিএম দিয়ে তারা ২০ থেকে ২৫টি আসনে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্তে আসতে পারে। 

নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব ইতোমধ্যে বলেছেন, ইসির হাতে থাকা ইভিএমগুলোর ওয়ারেন্টি পিরিয়ড এ বছরের জুনে শেষ হবে। এজন্য নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিএমটিএফ সার্বিক বিবেচনায় ইভিএম সংস্কারের প্রস্তাব ইসিকে দিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে, ইভিএম নিয়েও কমিশনের সিদ্ধান্তের বিষয় রয়েছে। ইসির নির্দেশনা পেলে পরবর্তী কাজও শুরু করতে হবে। সোমবার কমিশন সভায় আলোচনার পর সিদ্ধান্ত আসতে পারে।’