ব্যয় সংকোচনের নীতি অবলম্বনে তৈরি হচ্ছে নতুন এডিপি

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অনেক কিছুর ভবিষ্যৎই এখন অনিশ্চিত। ফলে অর্থ সংকটের মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ‘বাস্তবায়ন অযোগ্য’ বরাদ্দের যুক্তি থাকতে পারে না। যতটুকু বরাদ্দ—তা যেন যথাযথ মানে এবং যথাসময়ে বাস্তবায়িত হয়, সেদিকেই গুরুত্ব দেবে সরকার। তাই আগামী অর্থবছরের (২০২৩-২৪) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতেও ব্যয় সংকোচনের নীতি থাকবে। অপরিহার্য না হলে নতুন কোনও প্রকল্প নেওয়া হবে না। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানিয়েছে, নতুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য এডিপির প্রস্তাবিত আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের মূল এডিপির তুলনায় মাত্র ৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। এ প্রস্তাব পরে সংশোধন হতে পারে বলেও আভাস পাওয়া গেছে। সরকারের আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রাবিনিময় হার-সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে নতুন এডিপির এই আকার ধরা হয়েছে। যদিও আগামী অর্থবছরের বাজেটের আয় ও ব্যয়ের প্রাক্কলন অনুমোদন দেয় সরকারের আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রাবিনিময় হার-সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল।

জানা গেছে, সরকার আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপিতে নতুন প্রকল্প নেওয়ার চেয়ে চলমান প্রকল্প যথাসময়ে শেষ করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। সম্পদের সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় একান্ত অপরিহার্য এবং উচ্চ অগ্রাধিকার না হলে সরকারি অর্থায়নের নতুন প্রকল্প না নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তবে বৈদেশিক ঋণে বাস্তবায়নাধীন নতুন প্রকল্প ও বরাদ্দে অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় খাদ্য নিরাপত্তায় সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গত ১ মার্চের একনেক সভায় চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত প্রকল্প কোনোভাবেই আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কমিশনের নির্দেশনায় সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথাও উল্লেখ করা হয়।
 
সরকার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আগামী অর্থবছরের (২০২৩-২৪) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয় সংকোচনের নীতি থাকবে। অপরিহার্য না হলে নতুন কোনও প্রকল্প নেওয়া হবে না। এই অর্থবছরে মতো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অর্থছাড়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। ডলার সংকটের কারণে এডিপি বাস্তবায়নে জোর দেওয়া হচ্ছে বিদেশি ঋণ সংগ্রহের ওপর। সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা। 

জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বৈরী পরিস্থিতিতে চলতি ২০২২-২৩  অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়নে কৃচ্ছতাসাধনের নীতি নেয় সরকার।  এর অংশ হিসেবে ২৫ শতাংশ অর্থছাড় স্থগিত করা হয় ৬৩৬টি প্রকল্পের। ৮১টি প্রকল্পের অর্থছাড় সম্পূর্ণ স্থগিত করা হয়। এ কারণে গত জানুয়ারি পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়নের হার গত এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে কম। এ পরিস্থিতিতে সংশোধিত এডিপিতে ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত এবং বিভিন্ন বড় প্রকল্পের বরাদ্দেও কাট-ছাঁট করা হয়।

পরিকল্পনা কমিশন সুত্র জানিয়েছে, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাজেট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা চলতি বছরের মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন সেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পক্ষ থেকে প্রকল্প-সংক্রান্ত প্রাথমিক প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগে পাঠানো হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে বরাদ্দ-সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা হবে। এডিপি প্রণয়নের নির্দেশনা অনুযায়ী অন্য অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের এডিপির আকার কিছুটা ছোট হতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা। মে মাসের প্রথম দিকে আগামী অর্থবছরের এডিপি অনুমোদন হতে পারে বলে জানিয়েছে কমিশন সূত্র। 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, ব্যবস্থাপনা সমস্যা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ আরও কিছু কারণে উন্নয়ন প্রকল্প যথাসময়ে শেষ হচ্ছে না। এটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। বাস্তবতা হচ্ছে, বরাদ্দ দেওয়া অর্থও খরচ করা সম্ভব হয় না। রাজস্ব আয় তেমন বাড়ানো যাচ্ছে না। এ সব কারণেই এবারও এডিপি প্রণয়নে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হচ্ছে।