তাজ হোটেলকে নিয়ে ঢাকায় ফিরছে ভারতের টাটা

বাংলাদেশে ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে এসেও প্রায় দেড় দশক আগে ফিরে যেতে হয়েছিল ভারতের টাটা শিল্পগোষ্ঠীকে। কিন্তু আন্তর্জাতিক হোটেল ব্র্যান্ড ‘তাজে’র হাত ধরে সেই টাটারাই আবার বাংলাদেশে ফিরে আসছে।

টাটা গ্রুপের মালিকানাধীন ইন্ডিয়ান হোটেলস কোম্পানি লিমিটেড (আইএইচসিএল), যারা সারা পৃথিবীতে তাজ হোটেলগুলো পরিচালনা করে, তারা ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানে অচিরেই দুটো বিলাসবহুল হোটেল চালু করবে বলে ঘোষণা করেছে। এ বিষয়ে তারা স্থানীয় পার্টনারদের সঙ্গে চুক্তিও সেরে ফেলেছে।

বাংলা ট্রিবিউন জানতে পেরেছে, এই বিলাসবহুল হোটেল দুটোর সম্ভাব্য নামকরণ হবে ‘তাজ গুলশান’ ও ‘ভিভান্তা গুলশান’।

তাজ ও ভিভান্তা আসলে ইন্ডিয়ার হোটেলস কোম্পানিরই লাক্সারি ও প্রিমিয়ার ব্র্যান্ড। ভারত ছাড়াও আমেরিকা, ব্রিটেন, মালদ্বীপ, দক্ষিণ আফ্রিকা, জাম্বিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটানসহ নানা দেশে এই গোষ্ঠীর অজস্র হোটেল রয়েছে। তাজ ও ভিভান্তার জোড়া হোটেল দিয়ে ঢাকাও এখন সেই তালিকায় সংযুক্ত হতে চলেছে।

তাজ হোটেল গ্রুপের সিইও পুনীত চাটওয়াল

আইএইচসিএল-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও পুনীত চাটওয়াল বলেছেন, ‘সারা পৃথিবীতেই সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছে যে অর্থনীতিগুলো, বাংলাদেশ তার অন্যতম। গোটা দক্ষিণ এশিয়াতেও তারা দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। ফলে সেই বাংলাদেশে পা রাখতে পেরে আমরা গর্বিত বোধ করছি।’

পুনীত চাটওয়াল আরও বলেন, পশ্চিমবঙ্গে অনেক আগে থেকেই তাজ হোটেল গোষ্ঠীর গুরুত্বপূর্ণ উপস্থিতি আছে। আবার সেই পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক নৈকট্যের কথাও সুবিদিত। ফলে ঢাকায় এই বিনিয়োগকে তারা একটা ‘স্ট্র্যাটেজিক অ্যাসোসিয়েশন’ বা কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপন হিসেবেই দেখছেন।

বাংলাদেশের সুপরিচিত ব্যবসায়িক কনগ্লোমারেট ইউনিক গ্রুপের মালিকানাধীন বোরাক রিয়েল এস্টেটের সঙ্গে এই হোটেল দুটো গড়ে তোলার ব্যাপারে আইএইচসিএলের চুক্তিও সম্পন্ন হয়েছে। 

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অন্যতম প্রধান ব্যবসায়িক কেন্দ্র হলো গুলশান। সেই গুলশানেই বোরাক রিয়েল এস্টেট একটি ‘মিক্সড ইউজ’ বা বহুমুখী ব্যবহারবিশিষ্ট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট গড়ে তুলছে– তাজের হোটেল দুটিও সেখানেই অবস্থিত হবে। ওই কমপ্লেক্সের ভেতর ‘হাইএন্ড রিটেল’ অর্থাৎ দামি পণ্য কেনাকাটারও ব্যবস্থা থাকবে। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেও এই সাইটটি বেশ কাছেই। 

এর আগে ২০০৪ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকার যখন বাংলাদেশের ক্ষমতায় ছিল, তখন ভারতের টাটা শিল্পগোষ্ঠী ২৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগের একটি প্রস্তাব দেয়। 

টাটারা বাংলাদেশে দুটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, একটি ইস্পাত মিল ও একটি সার কারখানা গড়ে তুলতে চেয়েছিল। ২০০৫ সালের এপ্রিলে প্রস্তাবটি আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের কাছে পেশ করা হয়। পরে প্রস্তাবিত লগ্নির পরিমাণও বাড়িয়ে ৩০০ কোটি ডলার করা হয়। কিন্তু খালেদা জিয়ার সরকার প্রজেক্ট অনুমোদনে গড়িমসি করতে থাকায় ২০০৬ সালেই টাটাদের সঙ্গে তাদের আলোচনা থমকে যায়।

এই প্রকল্পের জন্য ইউনিক গ্রুপের বোরাক রিয়েল এস্টেটের সঙ্গে চুক্তি করেছে টাটা গ্রুপ

পরে ২০০৮ সালের জুলাই মাসে টাটা শিল্পগোষ্ঠীর তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক অ্যালান রোসলিং বাংলাদেশের বিনিয়োগ বোর্ডকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেন তারা প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। বাংলাদেশ সরকার প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলোতে জ্বালানি গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে– সরে আসার কারণ হিসেবে এই যুক্তিই দেওয়া হয়েছিল।

সেই ঘটনার প্রায় ১৫ বছর পর টাটারা যে তাদের হোটেল ব্র্যান্ডের মাধ্যমে আবার বাংলাদেশে পা রাখছে এবং বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে– সেই পদক্ষেপকে শিল্প ও অর্থনীতির পর্যবেক্ষকরা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন। 

এই সেক্টরের বিশেষজ্ঞ দেব কাপাডিয়ার কথায়, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গত একযুগে যে আমূল পরিবর্তন হয়েছে এবং সেখানকার বাজারে হাইএন্ড চাহিদা তৈরি হয়েছে, টাটাদের এই সিদ্ধান্ত সেটারই প্রমাণ। ২০০৬-এর বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ যে বিনিয়োগের ডেস্টিনেশন হিসেবে মোটেই এক নয়, সেটাও আমরা বুঝতে পারছি।’