‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আমরা জিডিপির ২ শতাংশ হারাচ্ছি’

জিডিপির ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে চাইলে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুর দিকে অবশ্যই নজর দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সরকার দলের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির কারণে বর্তমানে আমরা জিডিপির ২ শতাংশ হারাচ্ছি। এভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ আমরা ৯ শতাংশ হারাবো।’

মঙ্গলবার (২০ জুন) জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

সাবের হোসেন বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন সারা বিশ্বের জন্য অস্তিত্বের সংকট। এটা এখন দৃশ্যমান চ্যালেঞ্জ এবং সংকট। বাংলাদেশ আগামীতে কতটা এগোতে পারবে, সেটা নির্ভর করবে জলবায়ুর বিষয়টি আমরা কীভাবে মোকাবিলা করছি, তার ওপর। নতুন অর্থবছরের (২০২৩-২৪) বাজেটে ৩৭ হাজার কোটি টাকার একটি বরাদ্দ রয়েছে। ২৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ যে কাজ করবে, সেটা আমরা পর্যবেক্ষণ করবো। মানুষের জীবন ও জীবিকার সুরক্ষা অতীতে কোনও সরকার করেনি।’

জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে জাতীয় সংসদের বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘‘আজ  থেকে ১৩ বছর আগে ২০১০ সালে যখন জলবায়ু নিয়ে কেউ সেভাবে কথা বলতেন না, তখন বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠন করেছে। এভাবে প্রতিটি নীতিতে আমাদের একটি অবদান রয়েছে। আমরা এত বছর লড়াই করছি কপ-২৭ (লস অ্যান্ড ড্যামেজ) নিয়ে, সেটার বিষয়ে একটি আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি আমরা পেয়েছি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি বড় ভূমিকা রেখেছে। জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে যেসব উন্নয়নশীল দেশ রয়েছে, তাদের একটি নেতৃত্ব আমরা বিশ্ব পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করেছি। আমরা যে টেকসই উন্নয়নের কথা বলি, এটা কিন্তু ভাবতে হবে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষাপটে।’

অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘তামাক নিয়ে প্রতি বছর বাজেটের সময় আমি কথা বলি, কিন্তু কোনও ‍উত্তর পাই না। তামাকের বিষয়ে কী করছেন, অর্থমন্ত্রী যদি একটা ব্যাখ্যা দিতেন…।’

সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে এক লাখ ৬১ হাজার মানুষ প্রতি বছর মৃত্যুবরণ করে তামাকের কারণে। এই তামাকপণ্য যারা তৈরি করে, প্রতি বছর কেন তাদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়।’

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘করারোপের ফলে বাজেটের পর অনেক পণ্যের দাম বাড়ে। আমাদের অর্থমন্ত্রী তামাকপণ্যের দাম নিজেই বাড়িয়ে দেন। এর মাধ্যমে তিনি তামাক কোম্পানিকে মুনাফা করার সুযোগ করে দিচ্ছেন। এটা কী কথা। তামাকের ওপর কর আরোপ করতে চাইলে এমনভাবে করতে হবে, যেন তার পুরোটাই সরকার পায়।’

এ সময় সংসদে অবস্থান করা অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তার (অর্থমন্ত্রীর) দফতরে যাওয়ার জন্য সাবের হোসেন চৌধুরীকে ইশারা করলে তিনি বলেন, ‘আমাকে চায়ের দাওয়াত দেওয়ার দরকার নেই। এই সংসদে সবার সামনে এর ব্যাখ্যা দিন। আমরা তামাক থেকে রাজস্ব পাই ২২ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এর পেছনে খরচ হয় ৩০ হাজার কোটি টাকা। তামাকের ওপর আরোপিত সারচার্জ থেকে তিন শত কোটি টাকা আসে। এরমধ্যে মাত্র ৯ কোটি টাকা ব্যয় হয় তামাক নিয়ন্ত্রণে।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের ধারাবাহিকতায় আজ প্রতিটি সেক্টরে উন্নতি হচ্ছে। আশা করি বাংলাদেশের জনগণ এই বিষয়টি নজরে রাখবেন।’