‘গঙ্গাচুক্তি নবায়নের রসায়ন এবার ভিন্ন হবে’

১৯৯৬ সালে ৩০ বছরের জন্য গঙ্গাচুক্তি সই করেছিল বাংলাদেশ ও ভারত। ওই চুক্তির নবায়নের জন্য আলোচনা শুরু হবে আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এবারের আলোচনা আর আগের বারের মতো হবে না। গঙ্গাচুক্তি নবায়নের রসায়ন এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন হবে।

রবিবার (২৩ জুলাই) নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত দক্ষিণ এশিয়ার নদী বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর মো. শহীদুল হক গঙ্গাচুক্তি নবায়নের রসায়ন এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন হবে জানিয়ে বলেন, ‘গঙ্গার পানিচুক্তির জন্য দুই দেশের মধ্যে আলোচনা আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে শুরু হবে। ১৯৯৬ সালে যেভাবে গঙ্গাচুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল, সেভাবে এখন আলোচনা হবে না।’

এখন মানুষের সম্পৃক্ততা অনেক বেশি থাকবে, যেটি ১৯৯৬ সালে ছিল না। ওই সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে এবং সবার অন্তরালে আলোচনা হয়েছিল। এবার সেটি হবে না বলে তিনি জানান।

শহীদুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে খুব মধুর সম্পর্ক থাকলেও নদী ও পানি সংক্রান্ত বিষয়টি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত জটিল বিষয়। একইসঙ্গে এটি একটি নিরাপত্তা বিষয়।’

তিনি বলেন, ‘উত্তর-পূর্ব ভারত-বাংলাদেশ-বঙ্গোপসাগর করিডোর নিয়ে আলোচনা চলছে। এই ব্যবস্থা কার্যকরী করতে হলে দুটি জিনিস দরকার। প্রথমটি হচ্ছে অভিবাসন ও চলাচল (মাইগ্রেশন অ্যান্ড মোবিলিটি) এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে পানি। আমরা কি এই নিরবচ্ছিন্ন করিডোর তৈরি করতে পারবো?’

পানি ও নদী বিষয়টি বর্তমানে ভূ-রাজনীতির অংশ এবং এখন বাংলাদেশকে সেভাবে তৈরি হতে হবে বলে তিনি জানান।

সাবেক এই পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘ভূ-রাজনীতি ভালো বা মন্দ শব্দ নয়। এটি একটি খেলা এবং এটি সব দেশ খেলে থাকে। কেউ ভালো খেলে কেউ খারাপ খেলে। এটি নির্ভর করে কে কত ভালো খেলোয়াড়। কূটনীতিকদের ভূ-রাজনীতিকে ভয় পেলে চলবে না। বরং এটিকে ব্যবহার করে দেশের জন্য মঙ্গলজনক সুবিধা আনতে হবে।’

নদীমাতৃক নয়, ভূমিকেন্দ্রিক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে নদীমাতৃক দেশ বলে থাকি, কিন্তু মনমানসিকতায় আমরা ভূমিকেন্দ্রিক। যদি আমরা আমাদের অবকাঠামো দেখি, সেটি প্রায় সবকিছু ভূমিকেন্দ্রিক।’

যখন আমরা আন্তনদীর কথা বলি, সেটি ভূ-রাজনীতির অংশ। যখন দুই দেশ আলোচনা করে, সেটি অবশ্যই রাজনীতি বলে তিনি জানান।

অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, ‘পানি শুধু অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন মিশ্রণ নয়। বর্তমানে এর সঙ্গে আরও চারটি বিষয় জড়িত– পাওয়ার, পলিটিক্স, প্রফিট এবং পলিউশন।’

ভূ-রাজনীতিতে বাংলাদেশের গুরুত্ব বাড়ছে অর্থনৈতিক কারণে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আগেও ছিল, কিন্তু তখন অর্থনৈতিক সক্ষমতা কম ছিল। কিন্তু এখন সেটি বেড়েছে।’

অ্যাকশন এইডের বাংলাদেশ প্রধান ফারাহ কবির বলেন, ‘পানিকে আমরা সাধারণ সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করি। কিন্তু এখানে সাধারণ মানুষের অধিকার কম। আগে পানির প্রাচুর্য থাকলেও এখন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পানির স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। আগে যেভাবে বৃষ্টি হতো এখন আর সেভাবে হয় না।’

ভারতের কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রতীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘পানিকে জাতীয় সম্পদ নয়, বরং প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা দরকার। নদীর বেঁচে থাকার অধিকার আছে এবং সে জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।’