১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরের সাত দিনেই গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছিল ঘাতক-পরিবেষ্টিত মোশতাক সরকার। বেশিরভাগ দেশ এই হত্যাকাণ্ড এবং নতুন সরকার গঠনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ঘটনা বলে এড়িয়ে গিয়েছিল। হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার ঠিক আগের দিন (১৪ আগস্ট) দক্ষিণ কোরিয়ার বিশেষ দূত বঙ্গবন্ধুর দেশ পরিচালনা নিয়ে মুগ্ধতা প্রকাশ করলেও সেই দক্ষিণ কোরিয়া খুনি সরকারকে প্রথম সপ্তাহেই স্বীকৃতি দেয়।
স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ পররাষ্ট্রনীতির বিষয়ে পরের দিনই কথা বলেন। তিনি ঘোষণা করেন—সবার প্রতি বন্ধুত্ব এবং কারও প্রতি বিদ্বেষ নয়, এই নীতির রূপরেখার মধ্যে আমরা শান্তি ও প্রগতির প্রতি আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবো। ঠিক ১৫ আগস্ট পাকিস্তান খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বাধীন নতুন বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতিদানের সিদ্ধান্ত নেয়। স্বীকৃতি ঘোষণা করে এক সরকারি বিবৃতিতে ঘোষণা করা হয়, প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর সরকার বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে স্বীকৃতিদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশের নয়া নেতৃত্বকে স্বীকৃতিদানের জন্য ইসলামি সম্মেলনভুক্ত ৪০টি দেশ ও তৃতীয় বিশ্বের অন্যান্য দেশের প্রতি তার পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়।
বাংলাদেশের ঘটনা অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে জানিয়েছিল ভারতের একজন সরকারি মুখপাত্র। নতুন দিল্লিতে ১৬ আগস্ট এ কথা বলেন তিনি। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপনে ভারত চেষ্টা চালিয়ে যাবে। বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা ও বন্ধুত্ব ভারতীয় জনগণের কাম্য।
সৌদি আরব ও সুদান বাংলাদেশ ও তার নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় বলে খবর প্রকাশিত হয় ১৭ তারিখের পত্রিকায়। সৌদি আরবের বাদশা এবং সুদানের প্রেসিডেন্ট জাফর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোস্তাক আহমেদকে অভিনন্দন জানান। ইসলামের পবিত্র স্থানগুলোর তত্ত্বাবধায়ক বাদশা খালেদ বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে ইসলামিক সংহতি প্রকাশ এবং বাঙালি জনগণের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী রেউলিং ১৬ আগস্ট সুসম্পর্ক অব্যাহত থাকবে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘নিউজিল্যান্ড এবং বাংলাদেশের মধ্যে সুসম্পর্ক বর্তমান।’ এক বিবৃতিতে মিস্টার রাউলিং বলেন, ঢাকার নতুন সরকারের সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের সুসম্পর্ক যে অব্যাহত থাকবে, সে ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত।
ইয়েমেন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদের সরকারকে স্বীকৃতি দেয়। উত্তর ইয়েমেন কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান কর্নেল ইব্রাহিম মো. অলি হামনে এক বার্তায় রাষ্ট্রপতি খন্দকারকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান এবং বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তার দেশের সংহতি জ্ঞাপন করেন। ১৮ আগস্টের পত্রিকায় সেটি প্রকাশিত হয়।
ব্রিটেন, জর্ডান, জাপান ও বার্মার স্বীকৃতির খবর ছাপা হয় ১৯ তারিখের পত্রিকায়। রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশের নতুন সরকারকে এ দেশগুলো স্বীকৃতি দেয়। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিবর্তনের পর তিন দিনের মধ্যে সাতটি দেশ নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয়। রয়টারের খবরে বলা হয়, ব্রিটেন বাংলাদেশের নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে বলে রাষ্ট্র দফতর থেকে ঘোষণা করা হয়েছে।
২০ আগস্টের পত্রিকায় ছাপা হয় ইরান ও কাতারের স্বীকৃতির খবর। কাতার সরকার বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি প্রদান করে। কাতারের পররাষ্ট্র দফতর বাংলাদেশের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে এ কথা জানায়। হেগ থেকে রয়টার পরিবেশিত খবরে বলা হয়, তারা বাংলাদেশের নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেবে।
যুগোস্লাভিয়াসহ আরও আটটি দেশের স্বীকৃতির খবর প্রকাশিত হয় ২২ আগস্টের পত্রিকায়। প্রথম পাতায় প্রকাশিত হয় খবরটি। সেখানে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশের নতুন সরকারকে আরও আটটি দেশ স্বীকৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র দফতরের এক মুখপাত্র এই তথ্য প্রকাশ করেন। এই দেশগুলোর মধ্যে ছিল— অস্ট্রেলিয়া, মরক্কো, বেলজিয়াম, ইতালি, আর্জেন্টিনা, লিবিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া।