বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন পর্যায়ে বাংলাদেশের অবদান অপরিসীম। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষার কাজেও বাংলাদেশের অংশগ্রহণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে। বর্তমানে জাতিসংঘের অধীনে বিশ্বের বিভিন্ন গোলযোগপূর্ণ দেশে শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত শান্তিরক্ষীদের মধ্যে সংখ্যার হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম। দেশে-বিদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নানা উদ্যোগ নিয়ে বিশ্বনেতারাও এখন তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। নিজ ভূমি থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ হওয়া মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে বিশ্বের বুকে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন তিনি।
প্রতিবছর ২১ সেপ্টেম্বর পালিত হয় বিশ্ব শান্তি দিবস। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিশ্বনেতারা জাতিসংঘের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে একত্রিত হয়েছেন। এবারের শান্তি দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে—‘আস্থা পুনর্গঠন ও বিশ্ব সংহতির পুনরুদ্ধার: সবার জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি ও স্থায়িত্ব ত্বরান্বিত করতে ২০৩০ এজেন্ডা এবং এর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ।’ আন্তর্জাতিক এ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণে বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন, অগ্রগতি, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও স্বাস্থ্য খাতে সাফল্যের পাশাপাশি বিশ্ব শান্তি, নিরাপত্তা, নিরাপদ অভিবাসন, রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু এবং ন্যায়বিচারের মতো বিষয়গুলো তুলে ধরবেন বলে জানা গেছে।
বিশ্ব শান্তিতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ একটি বড় অংশীদার। ২০১১ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৬ দফার শান্তির মডেল উপস্থাপন করেন। সেগুলো হচ্ছে—ক্ষুধা এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ, বৈষম্য দূরীকরণ, বঞ্চনার লাঘব, ঝরেপড়া মানুষদের সমাজের মূলধারায় অন্তর্ভুক্তি, মানবসম্পদ উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা এবং সন্ত্রাসবাদের মূলোৎপাটন। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সহিংসতা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ইতোমধ্যে দেশের অভ্যন্তরে শান্তি ও স্থিতিশীল পরিস্থিতি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। তৈরি হয়েছে আর্থ-সামাজিক খাতে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ।
সশস্ত্র বাহিনীর জনসংযোগ বিভাগের গত মে মাসের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে ১২৫টি দেশের ৮৭ হাজারের বেশি শান্তিরক্ষী ১২টি অপারেশনে দায়িত্ব পালন করছেন। এরমধ্যে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় এ পর্যন্ত বিশ্বের ৪০টি দেশে ৬৩টি মিশনে এক লাখ ৮৮ হাজার ৫৫৮ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী সদস্য অংশগ্রহণ করেছে। বর্তমানে বিশ্বের ১৪টি দেশে সাত হাজার ৪৩৬ জন সদস্য শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছে। পাশাপাশি বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের নারী শান্তিরক্ষীদের অংশগ্রহণও ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। ইতোমধ্যে দুই হাজার ৭২৮ জন নারী শান্তিরক্ষী সদস্য সাফল্যের সঙ্গে তাদের দায়িত্ব সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে ৫৭২ জন নারী সদস্য শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে কর্মরত রয়েছেন। মিশন এলাকায় সংঘাতপূর্ণ ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ পর্যন্ত ১৬৭ জন বাংলাদেশি বীর সন্তান নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। ২৫৯ জন শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন। শান্তিরক্ষীদের মধ্যে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা ছাড়াও পুলিশ সদস্যও রয়েছেন।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর বরিশালে শেখ হাসিনা সেনানিবাসে এক অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘আজকে বাংলাদেশ জাতিসংঘে এক নম্বর শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ, যা আমাদের পেশাগত মানের উজ্জ্বল উদাহরণ।’
শত বাধাবিপত্তি এবং বারবার হত্যার হুমকিসহ নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাকস্বাধীনতা, ভোট ও ভাতের অধিকারসহ সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আপসহীন থেকে দেশে-বিদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছেন। তার নেতৃত্বেই স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে বাংলাদেশ। আর্থ-সামাজিক খাতে অর্জিত হয়েছে অভূতপূর্ব অগ্রগতি। দেশে-বিদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য বিশ্বের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠান শেখ হাসিনাকে অনেক ডিগ্রি ও পুরস্কার দিয়েছে।