দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে এগোতে থাকা বাংলাদেশের ওপর প্রয়োজনে আরও কয়েক ধাপে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের বিবেচনায় রয়েছে। গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া ক্ষুণ্নকারী যে কারও ওপর এই ভিসানীতি প্রয়োগ করা হতে পারে। তবে এই বিধিনিষেধের আওতায় যারা পড়েছেন তাদের পরিচয় ও সংখ্যা গোপন রাখার বিষয়ে অটল মার্কিন সরকার।
মঙ্গলবার ইংরেজি দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউনকে দেওয়া এক বিশেষ ইমেইল প্রতিক্রিয়ায় ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার ইঙ্গিত দিয়েছেন, বাংলাদেশের আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের আগে আরও ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের কথা বিবেচনার বিষয়ে ওয়াশিংটন উন্মুক্ত রয়েছে। তবে তিনি গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, বিধিনিষেধের আওতায় থাকা ব্যক্তিদের নাম ও সংখ্যা প্রকাশ করা হবে না।
সম্প্রতি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনি প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশি ব্যক্তিবর্গের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র। যাদের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে তাদের পরিচয় প্রকাশ না করলেও মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এই তালিকায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
ব্রায়ান শিলারের ব্যাখ্যা অনুসারে, ‘থ্রিসি’ নামে পরিচিত ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র সরকার গণতান্ত্রিক নির্বাচনে বাধাদানকারী যেকোনও ব্যক্তির ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে।
এই বিস্তৃত পরিধির কারণে কার্যত যে কেউ নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করার কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে তাদের ওপর প্রয়োগের সুযোগ রয়েছে।
যেসব বিষয়ে স্পষ্ট হতে ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হয়েছিল
ভিসা বিধিনিষেধের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে রয়েছে:
প্রথমত, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আরোপিত ভিসানীতির আওতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা না জানালেও কোনও সংখ্যার ব্যাপ্তি জানানো সম্ভব কিনা। জানতে চাওয়া হয়, আক্রান্ত ব্যক্তিবর্গের সংখ্যা ১০, ৫০, ১০০, ২০০, ৫০০ বা ১ হাজারের কম বা বেশি কিনা।
দ্বিতীয়ত, জানতে চাওয়া হয়েছিল যেসব কর্মকাণ্ডের ফলে ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় কেউ পড়তে পারেন, তেমন কর্মকাণ্ডের উদাহরণ। যাতে করে পাঠকরা নীতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেতে পারেন।
তৃতীয়ত, জানতে চাওয়া হয়েছিল মিডিয়া প্রতিষ্ঠান এই নিষেধাজ্ঞায় পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা এবং এমন পদক্ষেপ সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে কিনা।
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের জবাব
এসব অনুসন্ধানের সমন্বিত জবাবে ব্রায়ান শিলার বলেছেন, “২২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনি প্রক্রিয়া ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত ব্যক্তিবর্গের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ শুরু করেছে। এসব ব্যক্তির মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও রাজনৈতিক বিরোধীরা রয়েছেন। এটি ভিসা বিধিনিষেধের প্রথম ধাপ। কিন্তু প্রয়োজন হলে আরও কয়েক ধাপে আরোপ করা হতে পারে।
“ভিসা বিধিনিষেধ নীতি ‘থ্রিসি’ হিসেবে পরিচিত। এর আওতায় গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্তকারী যে কোনও ব্যক্তির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা যাবে। এখানে কার্যকর শব্দ হলো ‘যে কোনও ব্যক্তি’।
“যেসব কর্মকাণ্ড গণাতিন্ত্রক নির্বাচনকে ক্ষুণ্ন করতে পারে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ভোটে কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতা প্রয়োগের মাধ্যমে জনগণের শান্তিপূর্ণ উপায়ে সংগঠিত হওয়া এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার চর্চা থেকে বিরত রাখা, রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা মিডিয়াকে নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ বা তাদের মতামত প্রকাশ করা থেকে বিরত রাখার জন্য পরিকল্পিত পদক্ষেপের ব্যবহার।
“ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় থাকা ব্যক্তিবর্গের সংখ্যা আমরা প্রকাশ করব না। যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুসারে ভিসা রেকর্ড গোপন তথ্য। তবে নিশ্চিন্ত থাকুন, এই নীতি ঘোষণা করার পর থেকে মার্কিন সরকার ঘটনাগুলো খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।”