দিল্লি না বেইজিং, প্রধানমন্ত্রীর প্রথম সফর কোথায়

টানা চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর শেখ হাসিনার প্রথম বিদেশ সফর নানা কারণেই তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি প্রথমে ভারত নাকি চীনে যাবেন, তা নিয়ে জোর আলোচনা চলছে কূটনৈতিক মহলে। চীন এরইমধ্যে আমন্ত্রণ জানালেও সরকারে শীর্ষ পর্যায়ে এ নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। যদি প্রথম সফর চীনে হয় তাহলে দেশটির কাছ থেকে বড় আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি অন্যান্য সমর্থন পাওয়া যেতে পারে, তবে এতে করে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন সাবেক একাধিক কূটনীতিক।

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে জটিল সমীকরণ এবং ভারত ও চীনের মধ্যে অস্বস্তিকর সম্পর্ক কোনও গোপন বিষয় নয়। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ওই শক্তিগুলোর মধ্যে সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রেখেই জাতীয় স্বার্থ বাস্তবায়ন করতে হয়। এজন্য বৃহৎ ও আঞ্চলিক শক্তিশালী দেশগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক দৃঢ় করা প্রয়োজন হয়ে পড়ে।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দেশের অবস্থান পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে- ভারত, চীনসহ দক্ষিণের দেশগুলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রেখেছিল। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রসহ হাতে গোনা কয়েকটি পশ্চিমা দেশ নির্বাচন ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ হয়নি বলে জানিয়েছে। অন্যদিকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন নিরপেক্ষ একটি অবস্থান বজায় রেখেছে।

কূটনৈতিক একটি সূত্র জানায়, শীর্ষ পর্যায়ের সফরের মাধ্যমে সম্পর্ক মজবুত করা হয় এবং সফরে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো নির্দেশমূলক নীতি (গাইডিং প্রিন্সিপ্যাল) হিসেবে কাজ করে। এরকম সফরের আগে অনেক বিষয় বিবেচনা করা হয়। কারণ, বড় ধরনের কিছু অর্জন না হলে এ ধরনের সফর হয় না। বড় অর্জন তখনই আসে যখন দুই দেশের নীতি ও আগ্রহের মিল থাকে।

এরইমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফেব্রুয়ারিতে মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে যোগ দেবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব ওই কনফারেন্সে অংশ নিয়ে থাকেন এবং তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের একটি সুযোগ তৈরি হবে। চীন এরইমধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে, কিন্তু এখনও এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

জানতে চাইলে চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুনশি ফায়েজ আহমেদ বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। কিন্তু দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন কারণে।’

একেকটি দেশ একেক কারণে গুরুত্বপূর্ণ। ভারত গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও অন্যান্য সহযোগিতার জন্য। বাংলাদেশের প্রায় সবদিকে ভারত এবং তারা ইচ্ছে করলে নিজেদের অসুবিধা করে হলেও বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক নয়- এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। সুতরাং আমাদের সতর্ক থাকতে হবে বলে তিনি জানান।

কিন্তু এর মানে এই না যে আমরা অন্য দেশকে কম গুরুত্ব দেবো। যুক্তরাষ্ট্রকেও আমরা যথেষ্ট গুরুত্ব দেই। একই সঙ্গে চীনকে কম গুরুত্ব দেওয়ার সুযোগ নেই। ওই দেশ থেকে আমরা যে সহায়তা পাই, সেগুলো অন্য দেশ আমাদের দিতে পারবে না বলে তিনি জানান।

সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ভারত ও চীনের সম্পর্ক খুব স্বস্তিকর– এটি বলা যাবে না এবং এটি কোনও গোপন বিষয় নয়। যদি চীনে প্রথম সফর হয়, তবে ওই দেশের কাছ থেকে বড় আর্থিক ও অন্যান্য সমর্থন পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু চ্যালেঞ্জ হলো, এর ফলে হয়তো বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

এ বিষয়ে হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হওয়াটা হয়তো সমীচীন হবে না।’

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট থেকে আমরা যদি ভারত ও চীনের সম্পর্ক বিবেচনায় নিই, তাহলে দিল্লির আগে বেইজিং সফর হবে বলে আমার মনে হয় না। আরেকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে— ভারতের মাধ্যমে পশ্চিমাদের সঙ্গে বাংলাদেশ বিভিন্ন ধরনের যোগাযোগ রক্ষা করে।’