সচিবদের যেসব নির্দেশনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, নতুন পাঠ্যক্রমের ত্রুটির বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ, নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়ন, দুর্নীতি প্রতিরোধ, যাচাই-বাছাই করে প্রকল্প গ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয়ে সচিবদের একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আত্মপ্রত্যয়, আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মান সমুন্নত রেখে নিজ নিজ ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করতে বলেছেন তাদের। সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সচিব সভায় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন নির্দেশনা দেন তিনি। সভা শেষে সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলো তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন।

সাংবাদিকদের মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, সোমবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত একটানা সচিবদের সঙ্গে সভা করেন প্রধানমন্ত্রী। সভায় সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিবরা এবং সচিব পদমর্যাদার অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। সভায় আমরা প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাশা শুনতে চেয়েছি। আমাদের জন্য উনার নির্দেশনা কী সেটি আমরা জানতে চেয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন (ছবি: ফোকাস বাংলা)

ক্যাবিনেট সচিব জানিয়েছেন, সভায় এ পর্যন্ত যেসব কার্যক্রম পালিত হয়েছে, সেটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সভায় ১৫ থেকে ১৬ জন সচিব আলোচনায় অংশ নিয়েছেন এবং ১১ জন সচিব সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন।

সচিব জানিয়েছেন, সভায় প্রথমে নির্বাচনি ইশতেহার, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও আসন্ন রমজানের প্রস্তুতি, খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি, কৃষি উৎপাদন ও সার ব্যবস্থাপনা, কর্মমুখী শিক্ষা, নতুন পাঠ্যক্রম ও কর্মসংস্থান, বিদ্যুৎ সরবরাহ ও জ্বালানি নিরাপত্তা, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ, উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা, সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও আর্থিক খাতের দক্ষতা বাড়ানো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী সভায় ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নির্বাচনি ইশতেহার দিয়েছিলেন জানিয়ে বলেছেন, এটার ধারাবাহিকতায় এবার ইশতেহার দিয়েছেন। ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট বাংলাদেশ করতে যাচ্ছেন, সমৃদ্ধ বাংলাদেশের পথে নিয়ে যাচ্ছেন আমাদের। তারই ধারাবাহিকতা রয়েছে। জনগণ রায় দিয়েছেন, দল নির্বাচিত হয়েছে, সরকার গঠন করেছে। তাই নির্বাচনি ইশতেহারটাই হবে ৫ বছরে সরকার পরিচালনার মূলনীতি, দলিল। এ দলিল বাস্তবায়নের জন্য তিনি আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবি: ফোকাস বাংলা)

দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। দুর্নীতির ব্যাপারে জিরো টলারেন্সের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। প্রত্যেক মন্ত্রণালয় ও সচিবদেরও দায়িত্ব আছে দুর্নীতি নিরসন ও লাঘব করার জন্য যে সার্ভিস পয়েন্ট আছে সেখানে নজরদারি করার।

প্রধানমন্ত্রী নতুন পাঠ্যক্রমের ত্রুটির বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে খুবই সতর্কতা ও বাছাইয়ের কথা বলেছেন জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যে প্রকল্পগুলো জনগণের কল্যাণে ব্যবহৃত হবে, জনগণ উপকার পাবে সেদিকে তিনি মনোযোগ দিতে বলেছেন। তিনি বলেছেন যে উনার মূল লক্ষ্য হলো মানুষের অবস্থার উন্নতি। এরকম নয় যে মানুষকে দেখানো। জনমানুষের কল্যাণ হচ্ছে কিনা, তাদের ভাগ্য পরিবর্তন হচ্ছে কিনা- এটি তিনি জিজ্ঞাসা করবেন, জানতে চাইবেন যে কীভাবে এটি জনগণকে বেনিফিট দেবে। সেভাবে যেন প্রকল্পগুলো বাছাই করি। চলমান যে প্রকল্পগুলো আছে সেগুলো দ্রুত শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মুদ্রাস্ফীতির কথা তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন। মুদ্রাস্ফীতি আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির নিচে থাকতে হবে। সেটি করার জন্য তিনি কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখনও বিরাট সংখ্যক ব্যক্তি, যাদের আয়কর দেওয়ার কথা তারা আয়করের আওতায় আসেনি। তারা যেন আয়করের আওতায় আনা হয় সেজন্য জোরালো নির্দেশ দিয়েছেন।

বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য পদক্ষেপ নিতে বলেছেন জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অহেতুক যেন তারা হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে নজর রাখতে বলেছেন। বিনিয়োগ আসতে কোনও জটিলতা হলে তার নজরে যেন নেওয়া হয়। তিনি ভালো চোখে দেখবেন না কোনও কারণে যদি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়, তিনি ভালোভাবে নেবেন না।

সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবি: ফোকাস বাংলা)

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, উনি (প্রধানমন্ত্রী) আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে নজরদারি করতে বলেছেন। নজরদারি করার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট একটি ক্ষেত্রের কথাও তিনি বলেছেন। তিনি বলেন, বাজার মনিটরিংয়ের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আইনশৃঙ্খলার ক্ষেত্রে একটি বিষয়ে নজর দিতে বলেছেন জানিয়ে মাহবুব হোসেন বলেন, বিশেষ করে ছিনতাই, কিশোর গ্যাং বা এরকম যেসব অপরাধ হচ্ছে সেক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে কমিটি গঠন করে নজর দিতে বলেছেন।

প্রধানমন্ত্রী সরকারি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, গার্মেন্টসে যেসব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, কৃষিজাত পণ্য, চামড়া এবং পাটজাত পণ্যে একই রকম সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন এবং কাজ করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী খাদ্য উৎপাদনে নজর দিতে বলেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য বলেছেন। বিশেষ করে সেচ মৌসুমে সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করতে বলেছেন। বইমেলা জেলার বাইরে নিয়ে যেতে বলেছেন। উপজেলা পর্যায়ে নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, শূন্যপদ পূরণের জন্য উদ্যোগ নিতে বলেছেন এবং সময়মতো পদোন্নতির জন্য বলেছেন। কোনও অবস্থাতেই নদীর ধারাবাহিকতা বা প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত না করা, সেচের ক্ষেত্রে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার, ব্লু-ইকোনমির জন্য সামুদ্রিক যে ব্লক আছে সেখানে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বলেছেন। পর্যটন শিল্পের জন্য যা যা প্রয়োজন, তা করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।