আজ দেওয়া হবে একুশে পদক, শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী

দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখায় ২১ বিশিষ্টজনকে ‘একুশে পদক ২০২৪’ দেওয়া হচ্ছে মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি)। এদিন সকাল ১১টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে মনোনীতদের হাতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘একুশে পদক’ তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পদক বিতরণের আগে সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) পৃথক বাণীতে মনোনীতদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেছেন, গুণিজনদের সম্মাননা প্রদান দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি ও সংস্কৃতির বিকাশে তাদের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও অনুপ্রাণিত করবে। এ কারণেই গুণীদের প্রণোদনা দিতে সরকার একুশেসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় পদক দিয়ে থাকে।

তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় অমর একুশের চেতনা আজ অনুপ্রেরণার অবিরাম উৎস। তবে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির যথাযথ চর্চা ও সংরক্ষণে আমাদের আরও যত্নবান হতে হবে। গুণিজন তৈরি করতে গুণের কদর করতে হয়। একুশে পদকে ভূষিত জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সম্মানিত করার মধ্য দিয়ে দেশে মেধা ও মননচর্চার ক্ষেত্র আরও সম্প্রসারিত হবে।

একুশে পদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একুশে পদকপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, এবারের একুশে পদকপ্রাপ্ত গুণিজনের পথ অনুসরণ করে তরুণ প্রজন্ম জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি বাঙালির গৌরবময় ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে আমাদের ভাষা ও সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করবে।

বাণীতে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জাতীয় জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ পর্যন্ত মোট ৫৬৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও স্বনামখ্যাত প্রতিষ্ঠানকে একুশে পদক দেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালে মোট ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিককে এ পদকের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। এবারে ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা রাখার জন্য দুজন, ভাষা ও সাহিত্যে চার জন, শিল্পকলায় বারো জন, শিক্ষায় একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি, সমাজসেবায় দুজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে এ পদক দেওয়া হবে। যারা মরণোত্তর পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন, তাদের আত্মার শান্তি প্রার্থনা করে প্রধানমন্ত্রী পুরস্কারপ্রাপ্তদের আন্তরিক অভিনন্দন জানান।

একুশের শহীদরা যেমন জাতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান, তেমনি দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের সব গুণিজন জাতির গর্ব ও অহংকার—এমনটি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদিও প্রকৃত গুণিজন পুরস্কার বা সম্মাননার আশায় কাজ করেন না, তবু পুরস্কার-সম্মাননা জীবনের পথচলায় নিরন্তর প্রেরণা জোগায়। একুশের চেতনাকে ধারণ করে দেশের শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির বিকাশ এবং আলোকিত সমাজ বিনির্মাণে যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন, তাদের সবার প্রতি সম্মান জানিয়ে গৌরবময় একুশে পদক দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, এর আগেও প্রতি বছর বাংলাদেশের অল্প সংখ্যক বিশিষ্ট ব্যক্তিকে জাতীয় পর্যায়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদকে ভূষিত করা হতো। পদকপ্রাপ্তদের সম্মানি অর্থের পরিমাণও ছিল যৎসামান্য। আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য ব্যক্তিদের পুরস্কার হিসেবে প্রদত্ত অর্থের পরিমাণ কয়েক দফা বাড়িয়ে ২০২০ সালে চার লাখ টাকায় উন্নীত করেছে।

উল্লেখ্য, একুশে পদকপ্রাপ্তদের ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের তৈরি ৩৫ গ্রাম ওজনের একটি করে পদক, চার লাখ টাকা ও একটি সম্মাননাপত্র দেওয়া হবে।

এর আগে ১৩ ফেব্রুয়ারি ‘একুশে পদক-২০২৩’-এর জন্য ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিকের নাম ঘোষণা করে সরকার। এ বছর ভাষা আন্দোলন ক্যাটাগরিতে দুজন, শিল্পকলায় ১২ জন, সমাজসেবায় দুজন, ভাষা ও সাহিত্যে চার জন এবং শিক্ষায় একজন বিশিষ্ট নাগরিক এ পুরস্কার পাচ্ছেন। এই ২১ বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে ছয় জন মরণোত্তর সম্মাননা পাচ্ছেন।

পদকের জন্য মনোনীত বিশিষ্টজনেরা হলেন, ভাষা আন্দোলনে মৌ. আশরাফুদ্দীন আহমদ (মরণোত্তর) ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হাতেম আলী মিয়া (মরণোত্তর)। শিল্পকলার সংগীতে জালাল উদ্দীন খাঁ (মরণোত্তর), বীর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণী ঘোষ, বিদিত লাল দাস (মরণোত্তর), এন্ড্রু কিশোর (মরণোত্তর) ও শুভ্র দেব। নৃত্যকলায় শিবলী মহম্মদ। অভিনয়ে ডলি জহুর ও এমএ আলমগীর। আবৃত্তিতে খান মো. মুস্তফা ওয়ালীদ (শিমুল মুস্তফা) ও রূপা চক্রবর্তী।

চিত্রকলায় শাহজাহান আহমেদ বিকাশ। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ও আর্কাইভিংয়ে কাওসার চৌধুরী। সমাজসেবায় মো. জিয়াউল হক ও আলহাজ রফিক আহামদ। ভাষা ও সাহিত্যে মুহাম্মদ সামাদ, লুৎফর রহমান রিটন, মিনার মনসুর ও রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ (মরণোত্তর)। আর শিক্ষায় অধ্যাপক ড. জিনবোধি ভিক্ষু একুশে পদক পেতে যাচ্ছেন। সূত্র: বাসস।