আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রজতজয়ন্তী পালন করবে ইউনেস্কো

২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস পালনের আগে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসকে কেন্দ্র করে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক শীর্ষ সংস্থা ইউনেস্কো। স্বাধীনতা দিবসের মাত্র চার দিন আগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রজতজয়ন্তী পালন করা সংক্রান্ত বাংলাদেশের একটি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছে।

শুক্রবার (২২ মার্চ) সংস্থাটির প্যারিস সদর দফতরে চলমান নির্বাহী পর্ষদের ২১৯তম সভায় সিদ্ধান্তটি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। বাংলাদেশের উত্থাপিত এ প্রস্তাব ৬৩টি সদস্য রাষ্ট্র সমর্থন করে।

একই সিদ্ধান্ত প্রস্তাবে ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিতকরণ ও প্রতিবন্ধকতা নিরসনের লক্ষ্যে ইশারা ভাষাগুলোকে সব মাতৃভাষার মতো সমান গুরুত্ব ও সম্মানের সঙ্গে সংরক্ষণের আহ্বান জানানো হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের সমঅধিকার রক্ষায় যে প্রতিশ্রুতি সেটি পালনে আবার সফল হলো বাংলাদেশ। 

উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কোর ৩০তম সাধারণ পরিষদের সভায় ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।  

প্যারিসে বাংলাদেশ দূতাবাসে থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এ সিদ্ধান্তে মাতৃভাষা সংরক্ষণ ও প্রচার কার্যক্রমকে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষমাত্রা বাস্তবায়নের অন্যতম নিয়ামক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এ লক্ষ্যে বাংলাদেশের দায়িত্বশীল ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেছে নির্বাহী পর্ষদ।

এ সিদ্ধান্তের ফলে ২০২৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ইউনেস্কোর সদর দফতর, আঞ্চলিক ও স্থানীয় দফতরগুলোতে দিবসটির রজতজয়ন্তী পালনের অনুমোদন দিয়েছে নির্বাহী পর্ষদ। এছাড়াও সংস্থাটির সকল সদস্য রাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রজতজয়ন্তী পালনের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

প্রস্তাবিত সিদ্ধান্তটি নির্বাহী পর্ষদের অনুমোদন লাভের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ইউনেস্কোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম তালহা ইউনেস্কোর সব সদস্য রাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানান। একইসঙ্গে ইশারা ভাষাকে মাতৃভাষার সমান গুরুত্ব দেওয়ার মাধ্যমে ভাষাকে সর্বজনীনতা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। 

সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে রাষ্ট্রদূত এই সিদ্ধান্তকে প্রধানমত্রীর নেতৃত্বে ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মাতৃভাষা ও ইশারা ভাষার সংরক্ষণ, প্রচার ও প্রসারে অগ্রণী ভূমিকার আরেকটি স্বীকৃতি হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এ সিদ্ধান্তের ফলে আগামী বছর মাতৃভাষা সংরক্ষণে দেশে ও বিদেশে বিশদ পরিসরে নানাবিধ কর্মসূচি গৃহীত হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের বৈশ্বিক উদযাপনকে বাংলাদেশের জনকূটনীতির একটি অনন্য সাফল্য হিসেবে তিনি চিহ্নিত করেন এবং এর মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন ও মাতৃভাষার জন্য আত্মত্যাগের মহান ইতিহাসকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার একটি সুবর্ণ সুযোগ বলে তিনি মনে করেন।