ঈদের জামাতের জন্য যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জাতীয় ঈদগাহে

ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। এই উৎসবকে সামনে রেখে রাজধানীতে জাতীয় ঈদগাহ মাঠে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। মুসল্লিদের সার্বিক নিরাপত্তায় এবার ঈদগাহে রাখা হচ্ছে তিন স্তরের বিশেষ নিরাপত্তা বলয়। প্রতিবারের মতো জাতীয় ঈদগাহ জামায়াতের আয়োজন করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।

ঈদ জামাতে অংশ নিতে আসা মুসল্লিদের জন্য ওযু, খাবার পানি ও মোবাইল টয়লেট এবং প্রাথমিক চিকিৎসারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সুষ্ঠুভাবে ঈদ জামাত আয়োজন করতে পুরো ঈদগাহে সিসি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের নামাজ আদায়ের জন্যও রাখা হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। 

রবিবার (৭ এপ্রিল) জাতীয় ঈদগাহ ময়দান পরিদর্শন করে এবং ডিএসসিসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে চলছে শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জা

ডিএসসিসি জানিয়েছে, জাতীয় ঈদগাহ মাঠে সকাল ৮টা ৩০মিনিটে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। তবে আবহাওয়ার প্রতিকূল থাকলে বা অন্য কোনও কারণে জামাত অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে সকাল ৯টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদের প্রধানজামাত অনুষ্ঠিত হবে।

ঈদ জামাতের জন্য জাতীয় ঈদগাহ ময়দান প্রস্তুত করার কাজ প্রায় শেষ দিকে

ঈদগাহের বাইরে দেখা গেছে মূল গেটসহ আশপাশের এলাকা সাজানো হয়েছে রঙ-বেরঙের সাজসজ্জার কাঠামো দিয়ে। এবার ২৫ হাজার ৪০০ বর্গমিটার আয়তনের মূল প্যান্ডেলে একসঙ্গে ৩৫ হাজার মুসল্লি ঈদের জামাত আদায় করতে পারবেন। এছাড়াও মূল প্যান্ডেলের বাইরেও অন্তত ৫০ হাজার মানুষ নামাজ পড়বেন ধরে নিয়ে তাদের জন্যও নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।

প্রায় ৩৫ হাজার মুসল্লির জন্য প্রস্তুত হচ্ছে প্যান্ডেল

ঈদগাহ মাঠে প্যান্ডেল ও ত্রিপল লাগানোর কাজ শেষ হয়েছে আরও দুই দিন আগে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ।

ঈদগাহ প্রস্তুত করার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের ইনচার্জ মাহফুজ আলম জানিয়েছেন, জামাতের কাতারগুলোর কাজ শেষ হলে প্যান্ডেলের নিচে মুসল্লিদের জন্য লাগানো হবে ৬০০টি সিলিং ফ্যান, ১৫০টি স্ট্যান্ড ফ্যান, ৪০টি মেটাল লাইট এবং ৭০০টি টিউব লাইট। প্রতি কাতারে কার্পেটের ওপরে বসানো হবে মখমলের বিশেষ কাপড়। কাতারগুলোর বিভিন্ন পাশে থাকবে খাবার পানি, ভ্রাম্যমাণ টয়লেট ও প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম।

প্যান্ডেল তৈরি শেষে লাগানো হবে ফ্যান-লাইটসহ অন্যান্য সরঞ্জাম

এদিকে ঈদগাহে প্রবেশের জন্য রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং নারীদের কথা মাথায় রেখে করা হচ্ছে আলাদা আলাদা প্রবেশ পথ। ঈদগাহ ময়দানে প্রবেশের জন্য ভিআইপি গেট থাকছে একটি। পাশাপাশি জনসাধারণের জন্য একটি এবং নারীদের প্রবেশের জন্য পৃথক একটি গেট রাখা হয়েছে। ঈদ জামাতে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ভিআইপি পুরুষ কাতার থাকবে ৫টি এবং নারী কাতার থাকবে একটি। আর জনসাধারণের জন্য পুরুষ কাতার থাকবে ৬৫টি (বড় আকারের), আর নারীদের কাতার ৫০টি (ছোট আকারের)।

সেই সঙ্গে অজুখানায় একসঙ্গে প্রায় ১১৩ জন পুরুষ ও ২৭ জন নারী পৃথক স্থানে অজু করতে পারবেন। গরমের কথা বিবেচনায় জাতীয় ঈদগাহে ১০টি এয়ার কুলার ছাড়াও পর্যাপ্ত ফ্যান ও লাইটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে খাবার পানি ছাড়াও থাকছে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র, ভ্রাম্যমাণ টয়লেটসহ বৃষ্টির পানি নিরসনের ব্যবস্থা।

জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের সব জায়গায় নজর রাখতে বসানো হবে সিসি ক্যামেরা

ঈদগাহের প্রস্তুতি সম্পর্কে ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এবারের ঈদ জামাতে মহামান্য রাষ্ট্রপতিসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা অংশ নেবেন। পাশাপাশি সাধারণ মুসল্লিদের জন্যও রাখা হয়েছে সব ধরনের ব্যবস্থা। নামাজ শেষে মুসল্লিদের বের হওয়ার সময় যেন হুড়োহুড়ি না হয় সেজন্য পর্যাপ্ত বের হওয়ার পথও রাখা হয়েছে। এছাড়া সার্বিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে পুলিশ, র‌্যাব এবং সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। ঈদগাহে প্রবেশের আগে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশির পর আর্চওয়ে দিয়ে প্যান্ডেলে প্রবেশ করতে হবে।

জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

মুসল্লিরা ঈদগাহ মাঠে কী কী নিতে পারবেন জানতে চাইলে আবু নাছের জানান, এ ধরনের কোনও নির্দেশনা এখন পর্যন্ত আসেনি। মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) ডিএসসিসি মেয়র ঈদগাহ মাঠের প্রস্তুতি পরিদর্শন করে নির্দেশনা দেবেন। সে সময় পুলিশ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনও নির্দেশনা থাকলে তাও জানিয়ে দেওয়া হবে।

ছবি: প্রতিবেদক।