খসড়ায় বলা হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ওই নামে বা অন্য কোনও নামে কার্যক্রম চালাতে পারবে না। গত ডিসেম্বর মাসে মার্চেই জামায়াতের বিচারে আইন সংশোধন করার বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছিলেন, এ মাসের (ডিসেম্বর) শেষেই হয়ে যাবে। যদিও জানুয়ারিতে মন্ত্রী জানিয়েছিলেন ফেব্রুয়ারির মধ্যে আইনটির খসড়া মন্ত্রিসভায় উঠবে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ইতোপূর্বে বেশ কয়েকবার সংশোধিত আইনটির খসড়া মন্ত্রিসভায় ওঠার কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এত দিন আইনটি মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে উত্থাপন করা হয়নি। গত ৩১ ডিসেম্বর ব্লগার রাজীব হত্যা মামলার রায়ের পরে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত রাজনৈতিক দলের বিচারের জন্য সংশোধিত আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনের খসড়া আগামি মার্চ মাসে মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করা হবে। আজও (শনিবার) তিনি সেটা নিশ্চিত করেছেন।
আইন মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে আইনের খসড়া চূড়ান্ত করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা দেয়া হয়েছে। আইনটি মন্ত্রিসভায় উত্থাপনের পর প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে বিল আকারে সংসদে তোলা হবে। চূড়ান্ত খসড়ায় এই আইনের কার্যকারিতার কথা বলা হয়েছে, ২০০৯ সালের ১৪ জুলাই থেকে। চতুর্থ দফায় আইনটির বিদ্যমান ১০টি ধারায় সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭টি ধারায় ব্যক্তি শব্দের পাশাপাশি সংগঠন শব্দটি রয়েছে। এতে যুদ্ধাপরাধে কোনও ব্যক্তি বা সংগঠন দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের নিষিদ্ধ করা যাবে। নিষিদ্ধ ব্যক্তি বা সংগঠন নামে-বেনামে কোনও কার্যক্রম চালাতে পারবে না। এতে বলা হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ওই নামে বা অন্য কোনও নামে কার্যক্রম চালাতে পারবে না।
প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ এ মামলার সক্রিয় প্রসিকিউটর ছিলেন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র তৈরির কাজ মাঝখানে বন্ধ হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা আসলেই সঠিকটা বলতে পারবো না। আমাদেরকে ১৯ মে সকল নথি জমা দিয়ে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়, আমরা ভারপ্রাপ্ত চিফ প্রসিকিউটরকে সেগুলো বুঝিয়ে দেই। দুইবছর ধরে আইন সংশোধনের অপেক্ষা করছি। সেটা হলেই কাজ শুরু হবে। তবে নাম প্রকাশ না করে আরেক প্রসিকিউটর বলেন,এটি খুবই সংবেদনশীল মামলা । আমার মনে হয় মামলাটিকে শক্তিশালী করতে তদন্তে আরেকটু মনোযোগী হতে হবে।
তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান জানান, জামায়াতে ইসলামীকে একটি ‘ক্রিমিনাল সংগঠন' হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তারা ৷ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সারাদেশে যে সব মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত হয়েছে, তার সঙ্গে জামায়াতের সম্পৃক্ততা রয়েছে৷ তাদের বিরুদ্ধে এই অপরাধ প্রমাণের জন্য বিভিন্ন ডকুমেন্ট, তথ্য ও দলটির অর্গানোগ্রামসহ অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করা গেছে।
এতোদিন ধরে এটা ঝুলিয়ে রাখা প্রসঙ্গে একাত্তরে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, এই দুইবছরে একেকবার একেক কথা বলা হয়েছে। কখনও আপিলে নিবন্ধন নিয়ে ঝুলে থাকা মামলার কথা উঠেছে, কখনও আইসিটি আইনের সংশোধনী দরকার বলা হয়েছে। সংশোধনী যদি দরকার হয় করুক, এজন্য দুইবছর ব্যয় করারতো কিছু দেখি না। আর জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে মামলা আপিলে থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সর্বোচ্চ আদালতে মামলাটি ঝুলে থাকার কারণ জামায়াতের নিবন্ধন সংক্রান্ত, দলটির চার্টার অর্থাৎ দলটির গঠনতন্ত্র এদেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। গণহত্যা এবং যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলাটি সম্পূর্ণ ভিন্ন মামলা। কিন্তু সরকার যেহেতু আইন সংশোধনীর কথাই তুলেছেন, আমরা এখনও অপেক্ষা করছি।
এপিএইচ/