শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ চিন্তায় অনড় থাকার আহ্বান জানিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, যে যত পরামর্শ দিক, এটা থেকে বেরিয়ে আসবে, সে পরামর্শ তোমরা গ্রহণ করো না। তোমাদের চিন্তাই স্বচ্ছ ও সঠিক— এটা থেকে সরবে না। তিনি বলেন, ‘যদি আমরা এ স্বপ্ন থেকে দূরে সরার কোনও কাজ করি স্মরণ করিয়ে দেবে। আমাদের কারও কোনও ইচ্ছা নেই— এ স্বপ্ন থেকে বাইরে যাওয়ার। এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা আমাদের সার্বক্ষণিক কাজ।’
রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি কার্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বেলা ১১টা থেকে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। যা চলে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত। মতবিনিময় সভায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস, নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদকে সঙ্গে নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে কথা বলেন এবং তাদের খোঁজখবর নেন।
দুর্ঘটনাচক্রে, নিশ্চিতভাবে বলার উপায় ছিল না— তুমি এখানে থাকবে, তুমি ওখানে থাকবে। কেউ হয়তো একঘণ্টা আগে রওনা হয়েছে, কেউ হয়তো একঘণ্টা পরে রওনা হওয়ায়...।’
আপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘একজন তাজা তরুণ রংপুরে আমাকে বললো, ফুটফুটে একটা ছেলে— স্যার, আমি সারাজীবন ক্রিকেট খেলতে চেয়েছিলাম। ক্রিকেটার হতে চেয়েছিলাম। এখন দেখেন আমার পা কেটে ফেলেছে… কেঁদে ফেলেছে। ওই পা রাখার উপায় ছিল না। সে আমাকে জিজ্ঞেস করেছে— স্যার, ক্রিকেট খলেবো কী করে। ক্রিকেট তার মাথা থেকে যাচ্ছে না, পা নাই যতবার দেখি, ততবার মনের সঙ্গে প্রশ্ন জাগে, এটিই আমরা বাংলাদেশ বানিয়েছি যে, এতগুলো তাজা প্রাণ, তাদেরকে ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে, আমরা যারা আজকে এখানে বসে কথা বলছি, তাদের একমাত্র দায়িত্ব তাদের এই ত্যাগ, এই জীবনের বিনিময়ে তারা আমাদের এখানে বসার সুযোগ দিয়েছে, তারা না গেলে আমরা আজকে এখানে বসতে পারতাম না সবাই, আমরা সরকারের মধ্যে বসেছি ... কেউই একই ভূমিকায় আসতে পারেতাম না।’
তিনি বলেন, ‘এতদিন চুপচাপ শুয়ে শুয়ে এরা (আগরে সরকার) স্বপ্নের মধ্যে ছিল। স্বপ্ন দেখছিল, আনন্দ সহকারে লুটপাট করে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে তাদের ঘুম ভাঙে। তারা কি চুপচাপ বসে থাকবে? খুব চেষ্টা করবে তোমাদেরকে আবার দুঃস্বপ্নে ফিরিয়ে নিতে। শান্তিতে তাদের আবার রাজত্ব চালাতে। তাদের চেষ্টার ত্রুটি করবে না। কাজেই যে কাজ শুরু করেছো, তা সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত এর থেকে বেরিয়ে যেও না।’
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘দুনিয়ার মানুষ তোমাদের কাছে শিখতে আসবে, তোমাদের নিয়ে যাবে, বলবে কী মন্ত্র দিয়ে এটা করেছ? এ মন্ত্রটা তারা শিখতে আসবে। সে মন্ত্রটা তোমরাও টের পাচ্ছো না, এটা কীভাবে আসলো? কিন্তু একটা বিরাট মন্ত্র তোমরা আবিষ্কার করেছো। সেটাকে ধরে রাখবে। এ মন্ত্র যদি শিথিল হয়ে যায় তাহলে আমাদের কপালে অশেষ দুঃখ আছে। সেই দুঃখ যেন আমাদের দেখতে না হয়।’
সভায় উপস্থিত ছিলেন— আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, বন, পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ফরিদা আখতার, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।