অন্তর্বর্তী সরকারের মূল উদ্দেশ্য বৈষম্য দূর করা: পার্বত্য উপদেষ্টা

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা ও সাবেক রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মূল উদ্দেশ্য হলো সকল প্রকার বৈষম্য দূর করা। সকলের জন্য মানবাধিকার উন্নীত করা এবং সমতা ও ন্যায়বিচারের উপর ভিত্তি করে সংস্কার করা। তিনি বলেন, সরকারি বরাদ্দ বিতরণে কোনও প্রকার দুর্নীতি বরদাশত করা হবে না। তিনি সাম্প্রতিক সহিংসতায় পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য সরকারি বরাদ্দের উপকরণগুলো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতসহ সঠিকভাবে সঠিক মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেন।

বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বেইলি রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স ভবনের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত আগস্ট মাসের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি সংক্রান্ত পর্যালোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংশ্লিষ্টদের এ নির্দেশ দেন তিনি।

উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা মঞ্জুরিকৃত অর্থ উত্তোলনের ক্ষমতা জেলা প্রশাসককে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। বরাদ্দ করা অর্থ ব্যবহারে বিগত ২০০২ থেকে ২০০৬ সালে জারি করা এ সংক্রান্ত সকল পরিপত্রের শর্তাদি যথাযথভাবে প্রতিপালনের নির্দেশ দেওয়া হয়।

উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, বিশেষ করে সামাজিক সুরক্ষা ও দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারি বরাদ্দগুলো যথাযথ উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণের সময় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে উপযুক্ত প্রতিনিধি দ্বারা যে কোনও মুহূর্তে পরিদর্শন ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানসহ সার্বিক মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন উপদেষ্টা।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. রেজুয়ান খান জানান, উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার নির্দেশের প্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে গত ২২ সেপ্টেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিশেষ প্রকল্প কর্মসূচি থেকে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য খাদ্য-শস্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলায় সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ১৫০ জনের প্রতি জনকে ৪০ কেজি হিসেবে ৬ মেট্রিক টন চাল, হতদরিদ্র ২০০ জনের মধ্যে প্রতি জনকে ২০ কেজি হিসেবে ৪ মেট্রিক টন চাল, খাগড়াছড়ি শহরে রাস্তার পাশে দরিদ্র অস্থায়ী দোকানদার এবং হতদরিদ্র ৫০০ জনের মধ্যে জনপ্রতি ২০ কেজি হিসেবে ১০ মেট্রিক টন চাল এবং রাঙ্গামাটি শহরে দরিদ্র অস্থায়ী দোকানদার এবং হতদরিদ্র ৫০০ জনের প্রতি জনকে ২০ কেজি হিসেবে ১০ মেট্রিক টন চালসহ মোট ৩০ মেট্রিক টন চাল জেলা প্রশাসক খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি বরাবর বরাদ্দ দেওয়া হয়। এছাড়া খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার দীঘিনালা উপজেলায় সাম্প্রতিক সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য ১৫০ জনের মধ্যে জন প্রতি ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল, জন প্রতি ৫ কেজি মসুর ডাল বাবদ ২ লাখ ২০ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দের মঞ্জুরি প্রদান করা হয়।

মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মালেকা পারভীন স্বাক্ষরিত পত্রে বিশেষ প্রকল্প কর্মসূচি বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বরাদ্দ করা খাদ্যশস্য (চাল) পার্বত্য এলাকার সাম্প্রতিক সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত ও হতদরিদ্র মানুষের জন্য বিতরণের পরবর্তী অগ্রগতি প্রতিবেদন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশনা রয়েছে। বরাদ্দ করা খাদ্যশস্য ব্যবহারে বিশেষ প্রকল্প কর্মসূচি বাস্তবায়ন সংক্রান্ত এই মন্ত্রণালয় কর্তৃক সর্বশেষ গত ১৯ অক্টোবর ২০০৬ তারিখ জারি করা নীতিমালার প্রতিটি শর্ত যথাযথভাবে অনুসরণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। বরাদ্দ করা খাদ্যশস্যের হিসাব নিরীক্ষার জন্য যথোপযুক্তভাবে সংরক্ষণ করতে হবে এবং খাদ্যশস্য ব্যবহার সংক্রান্ত প্রতিবেদন যথাসময়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে এবং বরাদ্দ করা খাদ্যশস্য স্থানীয় গুদাম হতে যথাসময়ে উত্তোলন করতে হবে। 

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এ কে এম শামিমুল হক ছিদ্দিকীর সভাপতিত্বে এসময় অন্যান্যের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব ও তিন পার্বত্য জেলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।