গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে মানদণ্ড ধরে গণমাধ্যম কমিশন হবে: তথ্য উপদেষ্টা

পত্রিকা, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জন্য যেসব নিবর্তনমূলক আইন আছে, সবগুলো সমস্যাকে একটা জায়গায় এনে একটা সমাধান করার জন্য গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেছেন, সার্বিকভাবে গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে মানদণ্ড ধরে এই কমিশন গঠন করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার।

রবিবার ( ২৯ সেপ্টেম্বর ) বাংলাদেশ সময় রাত ১০টার দিকে ‘দ্য বাংলাদেশি কমিউনিকেশন স্কলারস ইন নর্থ আমেরিকা (বিসিএসএনএ)’ আয়োজিত নতুন বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও যোগাযোগ নীতির সংস্কার বিষয়ক ভার্চুয়ালে সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘গণমাধ্যম  সংস্কার কমিশনের পক্ষে-বিপক্ষে অনেকেই মত দিচ্ছেন।  অনেকে ভাবছেন, কমিশন আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ আনবে কি না। আবার অনেকে বলছেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন হওয়া দরকার। সব স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একসঙ্গে মিলে বসে একটা জায়গায় এনে আমরা হয়তো একটা রূপরেখা তৈরি করতে পারবো।’

সেমিনারে নিউ এজের সম্পাদক নুরুল কবির সাংবাদিকতার সঙ্গে রাজনীতির ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের দিকটি আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘সরকারি বিজ্ঞাপন গণতন্ত্রপরায়ণ সাংবাদিকতাকে নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়। রাষ্ট্রের যেসব অগণতান্ত্রিক আইন ও নিয়মকানুন আছে, তার সংস্কার করে গণমাধ্যমের জন্য একটা অনুকূল পরিবেশ তৈরির জন্য সরকারকে কাজ করতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বার্ড কলেজের শিক্ষক ফাহমিদুল হক বলেন, ‘যোগাযোগনীতি যেন মিডিয়া খাতকে নিয়ন্ত্রণ নয়, সহায়তা করার জন্য প্রবর্তিত হয়।’

বাংলাদেশের বেশিরভাগ টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমোদন রাজনৈতিক বিবেচনায় দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আনিস রহমান বলেন, ‘ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মালিকানা সংকট, প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক সক্ষমতার সংকট ও সাংবাদিকতার মানদণ্ড ধরে রাখার সংকট রয়েছে। নতুন কমিশন হলে তা যেন যথাসম্ভব ইনক্লুসিভ হয় তা খেয়াল রাখতে হবে।’

যমুনা টিভির সিইও ফাহিম আহমেদ বলেন, ‘যে কোনও সময় যে কোনও টেলিভিশন সরকার বন্ধ করে দিতে পারে এই ভীতি নিয়ন্ত্রণের এক বড় হাতিয়ার। উন্নত দেশগুলোতে গণমাধ্যম কমিশন আছে। বাংলাদেশেও এমন একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম কমিশন তৈরি করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।’

সেন্ট মেরি’স কলেজের শিক্ষক ড. মোহাম্মদ আলা-উদ্দিন বলেন, ‘নেপালে স্কুল পর্যায়েও সাংবাদিকতা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়, মুক্ত গণমাধ্যম কীভাবে কাজ করে তা শেখানো হয়। অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরমতসহিঞ্চু সমাজ নির্মাণ করতে গণমাধ্যমে সমাজের সব পর্যায়ের মানুষের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।’

গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ মীর আশফাকুজ্জামান বলেন, ‘পেশাগত লড়াই ও চ্যালেঞ্জের দিকটি বোঝার জন্য কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে সংলাপ করতে হবে।’

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাধীন দফতর ও সংস্থার কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় বিভিন্ন পরিচালনা পর্ষদ, কমিটি ও উপকমিটির জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করতে সার্চ কমিটি করা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক আল আমিন রাকিব তনয় বলেন, চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্য কমিটি গঠন করার মতো যোগ্য লোক খুঁজে পাচ্ছে না সার্চ কমিটি। এ সময় ফাহমিদুল হক বেশ কিছু নাম প্রস্তাব করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বিসিএসএনএ প্ল্যাটফর্মের পরিচয় ও নানা কার্যক্রম তুলে ধরেন স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক অ্যাট ওসওয়েগো’র শিক্ষক ড. খায়রুল ইসলাম। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন কর্নেল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ড. জামাল উদ্দিন। তিনি জানান, সংস্কার প্রক্রিয়ায় যে কোনও ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত বিসিএসএনএ।