অর্থমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন বাতিল

পদত্যাগ করলেন আতিউর

বাংলাদেশ ব্যাংক-ড. আতিউর রহমান

রিজার্ভ চুরির কেলেঙ্কারি মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন বলে বাংলা ট্রিবিউনকে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম একথা নিশ্চিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন।

এর আগে সকাল ১০টার দিকে ড. আতিউর রহমান তার পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছেন বলে বাংলা ট্রিবিউনকে টেলিফোনে জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলে তারপর ইস্তফা দিতে চান গভর্নর। তিনি বলেন, ‘আমি পদত্যাগের জন্য প্রস্তুত রয়েছি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি যদি আমাকে পদত্যাগ করতে বলেন, তাহলে আমি যে কোনও মুর্হূতে পদত্যাগ করবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি পদত্যাগ করলে যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের ভালো হয়, দেশের ভালো হয়, তাহলে পদত্যাগ করতে আমার কোনও দ্বিধা নেই। আমি পদত্যাগপত্র লিখে বসে আছি। প্রধানমন্ত্রী বলার সঙ্গে সঙ্গে আমি পদত্যাগ করবো।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থ লোপাটের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে চেপে রাখায় ক্ষুব্ধ অর্থমন্ত্রী পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেওয়ার পরদিন গভর্নরের এই বক্তব্যে আসলো। 

তার আগেই সকালে গুলশানে নিজের বাসায় কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন গভর্নর আতিউর। এরপর তিনি রওনা হন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পথে।

গভর্নর জানান, সোমবার ভারত থেকে দেশে ফেরার পর রাতেই  অর্থমন্ত্রীর  বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি।

গভর্নর বলেন, ‘তিনি (অর্থমন্ত্রী) বলেছেন, আমি চলে গেলে বাংলাদেশ ব্যাংক ভালো চলবে। কিন্তু আমি আমার বিবেক দ্বারা চালিত। মনে করি, প্রধানমন্ত্রী আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন, তিনি না বললে আমার পদত্যাগ করা উচিত নয়। আমি সাত বছর দায়িত্ব পালন করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংককে সন্তানের মতো মনে করেছি। রিজার্ভের ২৮ বিলিয়ন ডলার থেকে অর্থ চুরি হোক- এটা আমি কখনও চাইনি।’

ফিলিপাইনের পত্রিকা ডেইলি ইনকোয়ারারে ২৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার লোপাটের খবর প্রকাশের পর বিষয়টি নজরে আসে। পরে জানা যায় চুরি যাওয়ার অর্থের পরিমান ১০০ মিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংক শুরুতেই বিষয়টি টের পেলেও কর্মকর্তারা তা গোপন করে যাওয়ায় অর্থমন্ত্রী বিষয়টি জানেন এক মাস পর।

অর্থ লোপাটের বিষয়টি চেপে গিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেভাবে তা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছে তাকে ‘অযোগ্যতা’ আখ্যায়িত করে ‘ক্ষুব্ধ’ মুহিত রবিবার বলেছেন, ‘এজন্য অবশ্যই  ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, ‘এ কথা ঠিক যে দেশের স্বার্থে অর্থ চুরি যাওয়ার বিষয়টি আমি প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে একটু পরে জানিয়েছিলাম। দেশের স্বার্থে রির্জাভের টাকা খোয়া যাওয়ার ঘটনা সরকারকে জানানো হয়নি। তাহলে যেটুকু পরিমাণ টাকা ফেরত পাওয়া গেছে তারও পাওয়া সম্ভব হতো না। এছাড়া  সঙ্গে সঙ্গে জানাজানি হয়ে গেলে আরও সাইবার অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা ছিল।’

রিজার্ভের টাকা চুরির বিষয়ে প্রথম দিকে গভর্নর তিনি নিজেও জানতেন না-এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে কিছু বিষয় অস্পষ্ট ছিল, তাই সঙ্গে সঙ্গে ঊর্ধ্বতনদের জানানো হয়নি।’

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য সকাল ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গেছেন বলে সূত্র জানায়। তবে প্রধানমন্ত্রী দেখা তিনি পাবেন কিনা তা জানা যায়নি। আর এজন্য অর্থমন্ত্রীর পূর্ব নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলন সকাল ১১টার পরিবর্তে বেলা আড়াইটায় হবে। পরে তা বাতিল ঘোষণা করা হয়। কি কারণে বাতিল করা হয়েছে তা জানা যায়নি।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংকের  ১০০ কোটি ডলার যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ বাংক থেকে হ্যাকাররা চুরি করার ঘটনায় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ।   

 

/এসআই/জিএম/পিএইচসি/এসটি/