পুলিশে এখনও নারীদের দাবিয়ে রাখা হয়: হোসনে আরা

হোসনে আরা

বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে প্রথম নারী ওসি হোসনে আরা। ২০০৯ সালের ১৭ মে তিনি ওসি হিসেবে নিয়োগ পান। এর আগে দেশে কোনও নারী এ পদে দায়িত্ব পাননি। বর্তমানে ৪৯টি থানার মধ্যে কেন আরেকজন হোসনে আরা খুঁজে পাওয়া গেলো না, নারীদের প্রতি কোনও ধরনের বৈষম্য আছে কিনা,পুরুষ সহকর্মীদের সঙ্গে পাল্লা দিতে হয় কিভাবে- এসব বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে।

বাংলা ট্রিবিউন: আজ পর্যন্ত আপনার পর আর কাউকে থানার দায়িত্বে দেখতে না পাওয়ার কারণ কি? নারীরা পারেন না?

নারীরা পারবেন না কেন? ছেলেরা পারলে মেয়েরা কেন পারবে না। ওসিগিরি এমন কি কাজ? লাঠালাঠি, হাতাহাতি করা লাগে নাকি? আমি মনে করি,যোগ্য নারী পুলিশ নিয়োগ দিয়েছে সরকার, তাদের মধ্য থেকে ওসি পদে বেছে নিলেই হলো। একই কাজ, পারবে না কেন?

বাংলা ট্রিবিউন: ওসি হতে বাড়তি কোন অভিজ্ঞতা দরকার যেটা নারীদের নেই?

নিয়মানুযায়ী কিছু পদক্ষেপ তো আছেই। দুই বছরের বেসিক ট্রেনিং। একটু অভিজ্ঞ হলে ভালো হয়। কিন্তু কেবল ওসি হওয়ার জন্য বাড়তি অভিজ্ঞ হতে হবে এমন মনে হয়নি। কাজের দায়িত্ব পেলে তিনি যদি দায়িত্ববান হন তাহলে তিনি তার দক্ষতা দেখাতে পারবেন। সেই বিবেচনায় দক্ষ নারী কি নেই? আমি ছিলাম, আর একজনও নাই। এটা কেমন? এখন চার পাঁচজনকে দিতেই পারে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহ আছে। কিন্তু সিস্টেম মেয়েদেরকে এখনও দাবিয়ে রাখছে।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনি কতদিন ছিলেন?

আমি পৌনে তিন বছর ছিলাম। (হেসে) পুরুষরাই এক থানায় এতোদিন টিকতে পারে না, এক বছর চালালেই উইকেট পড়ে যায়। আমি দীর্ঘদিন ছিলাম ভাষানটেক। এখানে এতো ধরনের অপরাধী। কিন্তু চালিয়ে নিতে অসুবিধা হয়নি। তারপরও দেবে না। অনেক দাবিয়ে রাখছে এখনও। মৌখিকভাবে কেবল স্বীকৃতি।

বাংলা ট্রিবিউন: থানায় পুরুষ কর্মকর্তারা মনে করেন নারী থানার দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না, সামাজিক পারিবারিক চাপও নাকি বাধা। আপনি তাই মনে করেন?

যারা এমনটা মনে করেন, তাদের প্রতি আমার প্রশ্ন আপনারা কি এমন জাদু দিয়ে থানা চালান যেটা নারীরা পারবে না? তাহলেই দেখেন নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিটা সহকর্মীরা কেমন লালন করেন। তবে আরেক রকমেরও আছেন। তাদের জিজ্ঞেস করলে বলবে, দায়িত্ব পেলে নারীরা কেন পারবে না, অবশ্যই পারবে। যদিও সেটার পরও তারা খুব বেশি এগুবেন না।

noname

বাংলা ট্রিবিউন: ৪৯ থানার মধ্যে আপনাকে একবার ওসি পদে দেওয়া হলো। আর কেউ পেলো না। বলা হয়, রাত ৩টা পর্যন্ত থানায় থাকতে হয়, নারীদের পক্ষে সম্ভব হয় না।

ঘর সংসার বুঝি না। কাজতো কাজ। আর ওসিরা তাদের নিজেদের স্টাইলে থানা চালায়। সবাই এক স্টাইলে কাজ করে না। থানায় কি বসে থাকে সবসময়? পুরুষেরা থাকে? ওয়াকিটকিতে তো যার যার মতো করে কাজ করা যায়। আমরা রাত ৩টা-৪টায় তল্লাশিতে যাই না? যে নারী পুলিশে এসেছে সে এসব জেনেই এসেছে। আবার প্রত্যেকের নিজের ক্যারিয়ার সচেতনতা আছে। কে চাইবে স্বেচ্ছায় নিজের ক্যারিয়ার ডোবাতে। আমি নিজে অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়েছি, সুযোগ নেই নাই। কেউ সুযোগ পায় নাই নেতিবাচক কথা বলার। আমার বসেরা সবসময় বলেছেন মিরপুর জোনের লেডি অফিসার ফার্স্ট। এটা কি কম পাওয়া?

বাংলা ট্রিবিউন: কিভাবে এই পেশায় এলেন?

ছাত্রজীবন থেকেই চ্যালেঞ্জিং পেশা বেছে নিতে চেয়েছি। গাজীপুর ভাওয়াল ডিগ্রি কলেজ থেকে বিএ পাস করার পর ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ে লাইব্রেরি সায়েন্সে ভর্তি হই। ছাত্রী অবস্থাতেই চোখ পড়ে পুলিশ বাহিনীতে মহিলা সাব-ইন্সপেক্টরস নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি। ১৯৮১ সালে পুলিশ বাহিনীতে সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে যোগদান করি। এরপর মৌলভীবাজারে কর্মরত থাকাকালে পদোন্নতি পেয়ে ইন্সপেক্টর হই।

বাংলা ট্রিবিউন: যে পুরুষ সহকর্মীরা মনে করেন নারীরা থানার দায়িত্ব নিতে পারবে না তাদের জন্য কিছু বলবেন?

আমার একটাই কথা, যারা যোগ্য তাদের দায়িত্ব দিন। তাদের দায়িত্ব পালন করতে দেখে অন্য যারা সাহস পান না তারা এগিয়ে আসবেন। অন্যদেরকে দায়িত্ব পালনে সফল হতে দেখলে সেসব ক্ষেত্রে কাজ করার স্পৃহা বাড়বে। অনেক নারী কিন্তু চাচ্ছেন। আগে দিয়ে দেখুক,তারপর মন্তব্য করুন।

/এমপি/এমএসএম/