'হিমালয় দেখিনি, শেখ মুজিবকে দেখেছি'

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানবঙ্গবন্ধুকে বর্ণনা করতে গেলে কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রোর উক্তি সবার আগে মনে পড়বে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব, তার সিদ্ধান্ত, অবিচলতা নিয়ে বলতে গিয়ে ক্যাস্ট্রো বলেন,‘আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসিকতায় তিনি হিমালয়ের মতো’।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যার হাত দিয়ে গড়ে উঠেছে,যার কণ্ঠদীপ্ত আহ্বানেই অস্ত্রহীন মানুষও যুদ্ধে নেমেছে, সেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের প্রায় পুরোটা সময় কেটেছে সংগ্রাম ও আন্দোলনের মধ্যদিয়ে। রাজনৈতিক জীবনে যেমন তিনি অর্জন করেছেন শীর্ষ সাফল্য,রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে দেশের মানুষের মনে একজনই ঠাই করে নিয়েছেন,তিনি বঙ্গবন্ধু।
জনসম্পৃক্ত নেতা শেখ মুজিব, ২১ ফেব্রুয়ারি প্রভাতফেরিব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট (১৯৭২ সালের এক সাক্ষাৎকারে) বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘আপনার শক্তি কোথায়?' বঙ্গবন্ধু সে প্রশ্নের উত্তরে বলেন,‘আমি আমার জনগণকে ভালোবাসি ৷' ‘আর আপনার দুর্বল দিকটা কী?''বঙ্গবন্ধুর উত্তর,‘আমি আমার জনগণকে খুব বেশি ভালোবাসি৷' যে মানুষ এ কথা বলতে পারেন তিনি যুগে যুগে জন্মান না। আর জন্মান না বলেই ১৯৭১ সালে স্বনামধন্য বিদেশি সংবাদ মাধ্যম নিউজউইক শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘রাজনীতির কবি’ উপাধি দেয়। আর বিবিসি জরিপে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি, মানুষেরই ভোটে।

আজ তার জন্মদিন। অবিভক্ত ভারত থেকে পাকিস্তান এবং পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৮ বছর তিনি আন্দোলন করেছেন শোষণ,বৈষ্যম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে। নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে তিনি ছিলেন আপোষহীন। যেখানেই শোষণ ও বৈষম্য সেখানেই অধিকার বঞ্চিতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। এ কারণে নদীবেষ্টিত গোপালগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রামে জন্মগ্রহণ করেও তিনি হয়ে উঠেছেন এ উপমহাদেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদের একজন।

 

কবে থেকে রাষ্ট্রনায়ক হয়ে ওঠার পথে হাঁটা? ১৯৪৪ সালে কুষ্টিয়ায় অনুষ্ঠিত নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের সম্মেলনে যোগদান করেন শেখ মুজিবুর রহমান। শুরু হয় পথচলা। কলকাতাস্থ ফরিদপুরবাসীদের একটি সংগঠন ‘ফরিদপুর ডিস্ট্রিক্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪৬ সালে বঙ্গবন্ধু ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হন।

স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন, ১০ জানুয়ারি ১৯৭২

রাজনীতিবিদ তো অনেকেই, তা হলে তার মধ্যে আলাদা কী আছে,কেন তিনি হয়ে উঠলেন বঙ্গবন্ধু প্রশ্নের জবাব মেলে ইতিহাস থেকেই। ১৯৫৫ সালের ৫ জুন বঙ্গবন্ধু গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ২৫ আগস্ট করাচিতে পাকিস্তান গণপরিষদে বঙ্গবন্ধু বলেন,‘ওরা পূর্ববাংলা নামের পরিবর্তে পূর্ব পাকিস্তান নাম রাখতে চায়। আমরা বহুবার দাবি জানিয়েছি যে,আপনারা এটাকে বাংলা নামে ডাকেন। বাংলা শব্দটার একটি নিজস্ব ইতিহাস আছে,আছে এর একটা ঐতিহ্য। আপনারা এই নাম আমাদের জনগণের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে পরিবর্তন করতে পারেন। আপনারা যদি ওই নাম পরিবর্তন করতে চান তাহলে আমাদের আবার বাংলায় ফিরে যেতে হবে এবং সেখানকার জনগণের কাছে জিজ্ঞেস করতে হবে তারা নাম পরিবর্তনকে মেনে নেবে কিনা। এই আমাদের নেতা যিনি সম্মান দিতে চেয়েছেন তাদের যারা তাকে নেতা বানিয়েছিলেন।

 

 

অসমাপ্ত আত্মজীবনীসেই রাজনৈতিক জীবন থামেনি আর। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে জানা যায়, সপ্তম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তিনি যোগ দিয়েছিলেন স্বদেশি আন্দোলনে। এরপর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা মোকাবেলা,দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষের খাদ্য ও বস্ত্র সংস্থান এবং গরিব ছাত্রদের লেখাপড়ার সুব্যবস্থা ও পৃথক পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তিনি ছিলেন সক্রিয়। এরপর একে একে স্বাধীনতার পথে।

বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবি১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর আয়োজিত এক জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পূর্ব বাংলার নামকরণ করেন ‘বাংলাদেশ’। সেদিনই বাংলার মানুষ অলিখিতভাবেই ধরে নেয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সামনে রেখেই তারা স্বাধীনতার পথে হাঁটবেন। আর এই আকাঙ্ক্ষার অবসান ঘটে যখন তারা স্বাধীনতার ডাক পান এই নেতার কাছ থেকেই। সেই ভরসা বঙ্গবন্ধু রেখেছিলেন ২৫ মার্চ রাতেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে। তিনি গ্রেফতার হলেন,তার সৈনিকেরা যুদ্ধ করছে আর কানের কাছে সেই ৭ মার্চের ভাষণ। এ বিশাল শক্তি না থাকলে যুদ্ধের ময়দানে গেরিলারা কিভাবে লড়াই করতো সে প্রশ্ন তারা নিজেরাই এখনও নিজেদের করেন।

পত্রিকা কৃতজ্ঞতা: ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্রাটেজি ফোরাম

 

/ইউআই/এমএসএম/আপ-এসএস/