শিশুদের জন্য অবারিত ছিল বঙ্গবন্ধুর দুয়ার

শিশুদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছিল অবারিত দুয়ার। তাদের সঙ্গে সময় কাটানো, তাদের জন্য কিছু করার আগ্রহ ছিল তার প্রবল। এমনকি তিনিই ভেবেছিলেন শিশুদের সুরক্ষায় পূর্ণাঙ্গ একটি আইন থাকা জরুরি। আর এই পথ ধরেই ১৯৭৪ সালের ২২ জুন জাতীয় শিশু আইন (চিলড্রেন অ্যাক্ট) প্রণয়ন করা হয়।

বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন, আজকের শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ। আগামী দিনে দেশগড়ার নেতৃত্ব দেবে তারাই। ফলে আগে তাদেরই গড়ে তুলতে হবে। যখন তিনি বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেননি, একজন নেতা হয়ে উঠছেন কেবল, তখনও তিনি তার পরিকল্পনায় শিশুবান্ধব সিদ্ধান্ত রাখতেন বলে জানিয়েছেন তার সহযোদ্ধারা। শিশুরা সৃজনশীল ও মুক্তমনের মানুষ হিসেবে গড়ে উঠুক সেটি ছিল তার আকাঙ্ক্ষার বিষয়। আর স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি যখন সবার বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছেন, তখনও তিনি শিশুদের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করতেন। শিশুদের কোনেও সমাবেশে গেলে বা শিশুরা গণভবনে তার কাছে গেলে, তিনি শিশুর মতো তাদের সঙ্গে মিশে যেতেন। সেই দিক বিবেচনায় ২০০৯ সাল থেকে তার জন্মদিনের দিনটিকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

শিশুদের আপন করে তাদের সাথে তাদের মতো করে মিশে যেতে পারতেন বঙ্গবন্ধু

কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, একটি স্বাধীন দেশের স্রষ্টা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন একটি ঐতিহাসিক দিন। এ দিনটি কেন জাতীয় শিশুদিবস হলো—এ নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেন। এর উত্তর লুকিয়ে আছে বঙ্গবন্ধুর শিশুদের জন্য নেওয়া নানা কর্মসূচির মধ্যেই। বঙ্গবন্ধু শিশুদের খুব আদর করতেন। তিনি জানতেন, শিশুদের তৈরি করতে পারলেই আগামী দিনে তিনি পাবেন একটি সৎ ও সাহসী জাতি।

ইতিহাসের পাতা বলে, হাজার ব্যস্ততার মধ্যে বঙ্গবন্ধু কচিকাঁচার মেলা, খেলাঘরসহ অন্যান্য সংগঠনের শিশুবন্ধুদের অনুষ্ঠান ও সমাবেশে গিয়েছেন। তাদের মার্চপাস্ট, লাঠিখেলায় তিনি উৎসাহ দিয়েছেন। তাকে যারা দেখেছেন, তারা বলেন, তিনি এত সহজে, এত আন্তরিকভাবে শিশুদের সঙ্গে মিশে যেতেন যে, শিশুরা তাকে একান্ত আপন করে নিত। জানা যায়, শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, যুবক-বৃদ্ধ সবার কাছেই তিনি ছিলেন মুজিব ভাই। এর ফলে বয়সের ব্যবধান ঘুচে যেত।

১৭ মার্চ ১৯৭৩ ইত্তেফাক

আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্য ফতিলাতুন্নেসা বাপী বলেন, শিশুদের আদর করার পাশাপাশি তিনি তাদের সুরক্ষার দিকটিও বিবেচনায় নিয়েছিলেন বলেই ১৯৭৪ সালের ২২ জুন জাতীয় শিশু আইন (চিলড্রেন অ্যাক্ট) জারি করেন। এই আইনের মাধ্যমে শিশুদের নাম ও জাতীয়তার অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে; সব ধরনের অবহেলা, শোষণ, নিষ্ঠুরতা, নির্যাতন, খারাপ কাজে লাগানো ইত্যাদি থেকে নিরাপত্তার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ষড়যন্ত্রকারী ঘাতকরা তাকে সপরিবারে হত্যা না করলে তিনি একটি উজ্জ্বল প্রজন্ম দিতেন আমাদের।

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামের শেখ পরিবারে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ১৭ মার্চ যে শিশুটির জন্ম হয়েছিল, তার ডাকনাম খোকা আর পুরোনাম শেখ মুজিবুর রহমান। এই খোকা আজীবন শিশুদের সাথে শিশুতোষ মন নিয়ে মেশার পাশাপাশি তাদের জন্য এনে দিয়েছেন স্বাধীন বাংলাদেশ যেখানে তারা শিরদাড়া উঁচু করে জীবনযাপন করবে।

/এমএনএইচ/আপ: এইচকে/