বিমানের সিটের নিচ থেকে স্বর্ণ উদ্ধারের একটি ভিডিও বাংলা ট্রিবিউনের কাছে এসেছে। ভিডিও ক্লিপটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিমান সম্পর্কে সু্ষ্ঠু ধারণা ছাড়া ও বিমানের কর্মীদের সহায়তা ছাড়া এসব জায়গায় লুকিয়ে স্বর্ণ পাচার করা প্রায় অসম্ভব।
সূত্র জানায়, চোরাকারবারিরা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকেই এ কাজে বেশি ব্যবহার করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতা নেয় স্বর্ণ চোরাকারবারিরা। শুল্ক কর্মকর্তারা অন্য এয়ারলাইন্সের চেয়ে বিমানের ভেতর থেকেই বেশি স্বর্ণ জব্দ করেছেন। এসব স্বর্ণ পাওয়া গেছে বিমানের ভেতরে সিটের নিচে, টয়লেটের কমোডের ভেতরে, টয়লেটের মিরর কেবিনেট, টয়লেট টিস্যু রাখার প্যানেল, টয়লেটের বেসিনের নিচের চেম্বার, ওয়াটার হিটারের সংলগ্ন স্থানে। বিমানের ভেতর স্বর্ণ উদ্ধারের ঘটনায় বিমানের কর্মীদের সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগও তুলেছে ঢাকা কাস্টম হাউজ।
ঢাকা কাস্টম হাউজ ও বিমান সূত্রে জানা গেছে, গত ২ ফেব্রুয়ারি কাতারের দোহা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকায় আসা বাংলাদেশ বিমানের (বিজি ০২৬) একটি ফ্লাইটে অভিযান চালানো হয়।
সেই সময়ে ঢাকা কাস্টমস হাউজের সহকারী কমিশনার শহিদুজ্জামান সরকার জানান, বিমানের সিটের নিচ থেকে সাড়ে সাত কেজি ওজনের স্বর্ণের বার পাওয়া যায়। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি। সেই অভিযানের একটি ভিডিও বাংলা ট্রিবিউনের কাছে এসেছে।
বাংলা ট্রিবিউনের কাছে থাকা ভিডিওটিতে দেখা গেছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজের পেছনের দিকের একটি সিটের ফোমের নিচে মোটা পাইপের ভেতর থেকে স্কচটেপ প্যাঁচানো অবস্থায় স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। ভিডিওটিতে দেখা যায়, সিটের পাইপের ভেতর থেকে বিমানের টেকনিশিয়ানদের সহায়তায় স্বর্ণগুলো উদ্ধার করছেন শুল্ক কর্মকর্তারা। দেখা গেছে, স্বর্ণের বারগুলো লম্বা স্কচটেপে পেঁচিয়ে স্কেলের মতো লম্বা করে ভেতরে রাখা ছিল, যার মাথায় কালো রংয়ের সুতা বাঁধা ছিল। বিমানের টেকনিশিয়ানরা সিটের ভেতর থেকে যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে স্বর্ণগুলো বের করেন।
এক শুল্ক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, চোরাকারবারিরা এখন অনেক বেশি কৌশলী হয়েছেন। স্বর্ণ চোরাচালানে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতা নিচ্ছে। বাংলাদেশে বিমানবন্দরের কার্গো ও যাত্রীদের লাগেজ হ্যান্ডেলিং, নিজস্ব হ্যাংগার সুবিধাসহ বিভিন্ন কাজে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সম্পৃক্ত থাকায় প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের সহায়তা নেওয়া হয় চোরাকারবারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সোনা পাচারের ঘটনায় বিমানের ক্লিনার ও টেকনিশিয়ানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জড়িত থাকেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের এক কর্মকর্তা বলেন, একজন যাত্রী চাইলেই যখন তখন বিমানের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেন না। একটি ফ্লাইটে নির্ধারিত সময়ে যাত্রীদের বিমানের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। যাত্রীরা প্রবেশের সময় বিমানের ফ্লাইট সংশ্লিষ্ট ক্রুরা যাত্রীদের আসন দেখিয়ে দেওয়া ও বসতে সাহায্য করারর জন্য বিমানের ভেতরেই থাকেন।
গত ২ ফেব্রুয়ারি অভিযান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা কাস্টম হাউজের সহকারী কমিশনার শহিদুজ্জামান সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সেদিন বিমানটিতে প্রায় সাত ঘণ্টা অনুসন্ধান করে স্বর্ণের বারগুলো সিটের নিচে খুঁজে পাওয়া যায়। অভিযানের সময় বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সহায়তা করেন। ফলে সাত ঘণ্টা ধরে বিমানের ভেতরে অনুসন্ধান চালানো সহজ হয়েছে।
শহিদুজ্জামান সরকার বলেন, বিমানটি বে-এরিয়াতে থাকা অবস্থায় অভিযান চালানো হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা পর্যন্ত বিমানের কোনও টেকনিশিয়ান বিমানটির কাছে না আসায় আমাদের সন্দেহ আরও বেড়ে যায়। আর আগে থেকেই গোপন তথ্য থাকায় আমরা দীর্ঘ সময় অনুসন্ধান করতে থাকি। বারগুলো বের করতে বিমানের টেকনিশিয়ানদের সহায়তা নেওয়া হয়। তাদের সহায়তা ছাড়া বের করা সম্ভব ছিল না। বিমানের কর্মীদের সংশ্লিষ্টতা ছাড়া এখানে স্বর্ণ প্রবেশ করানো সম্ভব নয়। এ ঘটনার মামলার এজাহারে বিমানের চার কর্মকর্তার নামও উল্লেখ করা হয়েছে।
ভিডিও:
/সিএ/এপিএইচ/