সোনারগাঁওয়ে শায়িত হলেন দিতি

অভিনেত্রী পারভীন সুলতানা দিতির জন্মস্থান একদা ঈশা খাঁর রাজধানী খ্যাত নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বেড়ে উঠলেও চিত্রনায়িকা হওয়ার পর সেখানে খুব একটা পদচারণা ছিল না। তবুও সোনারগাঁয়ের দত্তপাড়া গ্রামের লোকজন বেশ গর্ব করেই বলতো ‘দিতি’ আমাদের গ্রামের মেয়ে। আর সেই মেয়েকেই গর্ব করা দত্তপাড়া ও সোনারগাঁওবাসী সোমবার অশ্রুসিক্ত নয়নে শেষ বিদায় জানিয়েছে।

দুপুর পৌনে ২টায় দত্তপাড়ার নিজ বাড়ির সামনের মসজিদের মাঠে শেষ জানাজার পর পারিবারিক কবরস্থানেই তাকে দাফন করা হয় যেখানে চিরদিনের জন্য শুয়ে আছেন তার মা ও বাবা।

এর আগে রবিবার বিকাল ৪টা ৫ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এ অভিনেত্রী।

ঢাকার গুলশান আজাদ মসজিদ ও বিএফডিসিতে দুটি নামাজের জানাজা শেষে সোমবার দুপুর সোয়া ১২টায় দিতির লাশ পৌঁছায় সোনারগাঁয়ের দত্তপাড়া গ্রামে।

মরদেহর সঙ্গে দিতির ছেলে সাফায়েত হোসেন দীপ্ত চৌধুরী ও মেয়ে লামিয়া চৌধুরী ছিলেন।

এদিকে, দিতির মরদেহ পৌঁছানোর আগেই দত্তপাড়ার বাড়িতে উপস্থিত হতে থাকে বিভিন্ন স্তরের মানুষ। পুরো এলাকায় বিরাজ করে শোকাবহ পরিবেশ।

দিতির মামা মাওলানা দেলোয়ার হোসেন জানাজার নামাজের ইমামতি করেন। জানাজার আগে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু নাসের ভূইয়া শোক বক্তব্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষে শোক জ্ঞাপন করেন।

জানাজাতে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও) আসনের সাবেক এমপি আবদুল্লাহ আল কায়সার, সোনারগাঁও থানা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, সোনারগাঁও থানার ওসি মঞ্জুর কাদের, সনমান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহাবউদ্দিন সাবু, পিরোজপুরের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, সোনারগাঁও নাগরিক কমিটির সভাপতি এটিএম কামাল, থানা যুবলীগের সাবেক সভাপতি গাজী মজিবুর রহমান, বর্তমান আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম নান্নু,  দিতির বড় ভাই মনির হোসেন, পারভেজ হোসেন, আনোয়ার হোসেন ও টিপু প্রমুখ।

জানা গেছে, সোনারগাঁয়ের দত্তপাড়া গ্রামের মৃত আবুল খলিফার চার ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে তৃতীয় হলেন দিতি। দিতি ছোটবেলা থেকেই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আশির দশকে বাংলা চলচ্চিত্রে পা রাখেন দিতি। দিতি ছাড়াও তার বড় ভাই মনির হোসেন ও পারভেজ দুজনেই গান গাইতেন। ছোট বোন নাসরিন এক সময় মডেলিং করতেন। আরেক ভাই আনোয়ার ছবি আঁকার সঙ্গে জড়িত।

১৯৭৪ সালে দিতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে ভর্তি হন সোনারগাঁয়ের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ সোনারগাঁ জি আর ইনস্টিটিউশনে। এখানে পড়াশুনার পাশাপাশি দিতি নিয়মিত গান গাইতেন। মূলত গায়িকা হিসেবেই স্থানীয় সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তার পরিচিতি ঘটে। ১৯৭৯ সালে সোনারগাঁ জি আর ইনস্টিটিউশন থেকে এসএসসি পাশের পর দিতি পড়াশুনার সুবাদে চলে যান ঢাকায়। সেখানে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে গান গাওয়ার পাশাপাশি অভিনয়ে জড়িয়ে পড়েন। এক সময় নায়িকা হিসেবে শক্ত অবস্থান দখল করেন বাংলা চলচ্চিত্রে। একের পর এক ব্যাবসা সফল ছবির মাধ্যমে দিতি জয় করে নেন দর্শক হৃদয়। বাংলা চলচ্চিত্রে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়লে তিনি চলচ্চিত্রে কাজ করা কমিয়ে ব্যস্ত হন টিভি নাটকে।

২০১৫ সালে তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তার মস্তিষ্কে টিউমার ধরা পড়ে। এরপর ২৫ জুলাই তাকে ভারতের  চেন্নাই নিয়ে যাওয়া হয়। ২৯ জুলাই ভারতের চেন্নাইয়ে মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব অর্থোপেডিকস অ্যান্ড ট্রমাটোলজিতে (এমআইওটি) দিতির মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়। গত ২০ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরে আসেন দিতি। চেন্নাই থেকে ফিরে আসার পর বাসায় ছিলেন তিনি। অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় ৩০ অক্টোবর তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঢাকায় ফিরে বেশ কিছুদিন সুস্থ ছিলেন। এরপর মস্তিষ্কে পানি জমায় আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। দ্রুত দিতিকে দ্বিতীয়বারের মতো চেন্নাইয়ে নেওয়া হয়। ৩ নভেম্বর আবারও তার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার হয়। এরপর আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। অসুস্থ হওয়ার আগে দিতি দুটি নতুন ধারাবাহিক নাটকে কাজ করছিলেন। শেষ করেছেন রেদওয়ান রনির নতুন ছবি ‘আইসক্রিম’।

/এমএম/টিএন/