সর্বজনীন ও সহজলভ্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য অন্যান্য সংশ্লিষ্ট খাতের সঙ্গে এবং জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে অংশিদারত্বের ভিত্তিতে সমন্বিতভাবে সেবার ব্যবস্থাপনা করতে হবে বলে মনে করে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন। পেশাদারত্ব, দক্ষতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে বিদ্যমান স্বাস্থ্য ক্যাডার পুনর্গঠনের মাধ্যমে প্রশাসনিকভাবে স্বায়ত্তশাসিত বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস (বিএইচএস) গঠন করার সুপারিশ করেছে কমিশন। একটি অধ্যাদেশ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়কালে এটি করা সম্ভব বলে মনে করে এই কমিশন।
সোমবার (৫ মে) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয়।
স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যমান স্বাস্থ্য ও সংশ্লিষ্ট ক্যাডারগুলোকে পুনর্গঠনপূর্বক একটি পেশাভিত্তিক, দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক পৃথক এবং স্বাধীন প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি করতে হবে, যার নেতৃত্বে থাকবে একটি স্বতন্ত্র সচিবালয় ও একজন মুখ্য সচিব মর্যাদাসম্পন্ন চিকিৎসক।
বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস গঠন প্রক্রিয়ায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিসের অধীনে তিনটি খাত ক্লিনিকাল সেবা, জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট শিক্ষা— পরিচালনা করবেন সংশ্লিষ্ট উপপ্রধান ও মহাপরিচালকরা। বিভাগীয় পর্যায়ে ১১টি আঞ্চলিক স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ থাকবে এবং বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিকেন্দ্রীকরণ, বাজেট ও পরিকল্পনায় আর্থিক ও প্রশাসনিক স্বাধীনতা দিয়ে কার্যকর, স্থানীয় চাহিদাভিত্তিক সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রস্তাবিত রূপান্তর প্রক্রিয়ায় বলা হয়েছে, পরিবার পরিকল্পনা, স্বাস্থ্য অর্থনীতি, নার্সিং, তামাক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, ন্যাশনাল ইলেকট্রো-মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (নিমিউ অ্যান্ড টিসি) এবং যানবাহন ও যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ সংস্থা (টেমো)কে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে একীভূত করা হবে। এইসব সংস্থার সেবা প্রস্তাবিত বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিসেস-এর সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য অধিদফতরগুলোর সঙ্গে উপযুক্তভাবে একীভূত করা হবে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস স্বাস্থ্য ক্যাডারকে একটি স্বতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসিত ক্যাডারে রূপান্তর করার কথা বলা হয়েছে। এই ক্যাডারটি বিচারিক ক্যাডারের ন্যায় একটি স্বাধীন সিভিল সার্ভিস ক্যাডার হবে এবং এর নাম হবে বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিসেস। প্রত্যেক কর্মকর্তাকে বিকল্প বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরিবার পরিকল্পনা (সাধারণ) কর্মকর্তাদের শিক্ষা, দক্ষতা ও কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন রিফর্ম কমিশনের প্রস্তাবিত নতুন ক্যাডারে একীভূত করা হবে। তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থাও থাকবে। মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের প্রস্তাবিত স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট মাঠ পর্যায়ের সেবায় শিক্ষা, দক্ষতা ও পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে একীভূত করা হবে। তাদেরও বিকল্প বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকবে।
প্রতিবেদনে গ্রামে এবং শহরে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে প্রাথমিক সেবা চিকিৎসক নিয়োগ করার কথা বলা হয়েছে। গ্রামে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য-উপকেন্দ্র ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র একত্র করে এবং শহরে ওয়ার্ডভিত্তিক কেন্দ্র গড়ে প্রথম স্তরে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। রেফারেল ব্যবস্থা কাঠামোবদ্ধ ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক রেফারেল ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে রোগী সঠিক সময়ে সঠিক স্তরের সেবা পায় এবং উচ্চতর প্রতিষ্ঠানে ভিড় কমে।
পাশাপাশি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সচ্ছতা আনার কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। যোগ্যতা, স্বচ্ছতা ও রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রেখে নির্বাচনি প্রক্রিয়া ও নিয়োগের সুপারিশ করার জন্য উচ্চপর্যায়ের সার্চ কমিটি গঠন করার কথা বলা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পদ যেমন বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস প্রধান ও উপপ্রধান, মহাপরিচালক, মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রো-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ, বিএমডিসি ও বিএমআরসি-এর চেয়ারম্যান পদে নিয়োগপ্রাপ্তদের যোগ্যতা সম্পর্কে জাতীয় সংসদকে অবহিত করতে হবে।
এছাড়া একটি স্বতন্ত্র পাবলিক সার্ভিস কমিশন (স্বাস্থ্য) গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।