‘সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের ভোট দেওয়াই অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন’

বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইস বলেছেন, জাতিসংঘ বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন চায় যেখানে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ ভোট দিতে পারে।

বুধবার (৪ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ আয়োজিত ‘ডিক্যাব টকে’ তিনি এ কথা বলেন।

অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন বলে কী বোঝানো হচ্ছে জানতে চাইলে গোয়েন লুইস বলেন, ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হচ্ছে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ যেন ভোট দিতে পারে। নারী, নৃ জাতিগোষ্ঠী, বিভিন্ন ধর্মের মানুষ যেন ভোট দিতে পারে– এ বিষয়টিকে আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন বলছি।’

অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন অর্থ সব রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ নয়– এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না। জাতিসংঘের কাছে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থ খুব নির্দিষ্ট। এটি হচ্ছে প্রতিটি বাংলাদেশি যেন তাদের মতামত ব্যক্ত করতে পারে।’

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ

কোনও রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ না করার বিষয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত মানবাধিকার হাইকমিশনার অফিসের রিপোর্টে বলা হয়েছিল।

তারপরও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি সরকারকে প্রশ্ন করতে হবে, আমাকে নয়। আমরা আমাদের সুপারিশ দিয়েছি। কারণ, সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ এবং অন্তর্ভুক্তি মেরুকরণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম এবং হয়তো সম্ভাব্য অস্থিরতাও। কিন্তু আমি মনে করি পরিস্থিতি অনুযায়ী সরকার বিষয়টি বিবেচনা করেছে। এ বিষয়ে আমার এর বেশি কিছু বলার নেই। এটি রাজনৈতিক প্রশ্ন এবং সরকার এটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

আমি আওয়ামী লীগ বা বিএনপির অবস্থান নিয়ে কোনও মন্তব্য করবো না। জাতিসংঘ কোনও ধরনের রাজনীতিতে জড়িত নয় বলে তিনি জানান।

কারিগরি সহায়তা

নির্বাচন কমিশনকে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে জাতিসংঘ। তিনি বলেন, ‘আমি এই শব্দটি নির্দিষ্ট করে ব্যবহার করছি। কারণ, আমরা সরকারের অনুরোধের ভিত্তিতে এই সহায়তা দিচ্ছি। অংশগ্রহণমূলক, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনকে জাতিসংঘ সমর্থন করে, কিন্তু কবে নির্বাচন হবে এ বিষয়ে আমাদের কোনও ভূমিকা নেই এবং আমাদের কোনও রাজনৈতিক মতামত নেই কোনটি আগে হবে। এটি বাংলাদেশের জনগণ, সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলো ঠিক করবে।’

আমরা নির্বাচনের জন্য কারিগরি সহায়তা দেওয়াতে খুশি এবং নির্বাচনে অন্য সহায়তা দিতে পারলে খুশি হবো। কিন্তু রাজনৈতিক বিষয়ে আমাদের কোনও অবস্থান নেই বলে তিনি জানান।

সংলাপ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে সংলাপ করছে সরকার। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আরও আলোচনা হওয়া দরকার। আমি বলতে চাই কনসেনসাস কমিশন যেভাবে কাজ করছে, সেটিতে আমি অভিভূত। রাজনৈতিক দলগুলো একসঙ্গে হয়েছে এবং বড় আকারে আলোচনা করছে এবং তারা কিছু জটিল প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করছে। আমরা আরও দেখছি অনেক বিষয়ে তারা একমতও হচ্ছে। এই প্রক্রিয়াটি অনেক বড় এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এটির নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমি মনে করি, বিশ্বাসযোগ্য এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের বিষয়কে জাতিসংঘ সমর্থন করে।’

জাতিসংঘ মানবাধিকার অফিস

বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার অফিস খোলার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে এবং খুব শিগগিরই এটি সই হবে।

বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার অফিস খোলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনার অফিস এবং বাংলাদেশের মধ্যে সমঝোতা চূড়ান্ত হয়েছে। আমরা এটি স্বাক্ষরের জন্য অপেক্ষা করছি। আশা করি, এটি দ্রুত সই হবে। এর মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশে একটি ছোট আনুষ্ঠানিক অফিস খুলতে পারবো।’

ট্রুথ ও হিলিং প্রসেস

ট্রুথ এবং রিকনসিলিয়েশন প্রক্রিয়া নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে এখন। বিভিন্নজন বিভিন্ন মতামত দিচ্ছে।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যেকোনও সমাজে জুলাই সংঘাতের মতো পরবর্তী পরিস্থিতিতে ট্রুথ এবং হিলিং প্রক্রিয়া সেটির ভিত্তিতে হয়, যেটি মানুষ চায়। কী প্রক্রিয়া প্রয়োজন – এ বিষয়ে যেকোনও ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে দরকার একটি জাতীয় সংলাপ। বাংলাদেশের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার তুলনা হয় না বা অন্য কোনও দেশ যেখানে অনেক দিন ধরে সংঘাত চলছে। কারণ, সবদেশের পরিস্থিতি ভিন্ন।’

ভারতের পুশইন

ভারতের পুশইন নিয়ে তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবস্থান এ বিষয়ে খুব পরিষ্কার। উপদেষ্টা হোসেন এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আমার ধারণা, তার অবস্থান খুব পরিষ্কার। আমি জানি না। জাতিসংঘের দিক থেকে এটি উদ্বেগজনক এই কারণে যে ভঙ্গুর জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাকে সীমান্ত দিয়ে ঠেলে পাঠানো হচ্ছে এবং আমরা অবশ্যই তাদের সহায়তা করার চেষ্টা করছি। তবে, এ বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারকে অ্যাড্রেস করতে হবে।’