ইউএন চার্টার মেনে জাপানের সঙ্গে বাস্তবায়ন হবে প্রতিরক্ষা চুক্তি

জাপানের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের মে মাসে জাপান সফরের সময়ে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এ বছরের মধ্যেই এই চুক্তি সই হবে। সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

‘ডিফেন্স প্রকিওরমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি ট্রান্সফার চুক্তি’ সই হলে জাপান থেকে সহজে উন্নতমানের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কিনতে পারবে বাংলাদেশ। তবে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, এটি বাস্তবায়নে ইউএন (জাতিসংঘ) চার্টার মেনে চলতে হবে উভয় দেশকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফরের পরে যে যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হযেছে, সেখানে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি হস্তান্তর সংক্রান্ত চুক্তিতে বাংলাদেশ ও জাপান নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। চুক্তিটি দ্রুত সম্পন্ন হওয়ার আশা প্রকাশ করা হচ্ছে।

ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘উভয় পক্ষ জাপানের অফিসিয়াল সিকিউরিটি অ্যাসিস্ট্যান্সের অধীনে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে পাঁচটি টহল নৌকা দ্রুত সরবরাহসহ রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও জোরদার করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি হস্তান্তর সংক্রান্ত চুক্তিতে দুই সরকার নীতিগতভাবে একমত হয়েছে বলে তারা স্বাগত জানিয়েছে এবং চুক্তিটি দ্রুত সম্পন্ন হওয়ার আশা প্রকাশ করেছে।’

জাপানের আগ্রহে চুক্তি

২০২৩ সালে পররাষ্ট্রনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনে জাপান। জাপানের প্রতিবেশীদের ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তির কারণে দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত শক্তি জাপানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত সংকুচিত ছিল। কিন্তু ২০২২ সালের ডিসেম্বরে দেশটি তাদের ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজি প্রকাশ করে, যা ছিল অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী। একইসঙ্গে তারা প্রতিরক্ষা বাজেটের পরিমাণ দ্বিগুণ ঘোষণা করে।

কূটনীতি, প্রতিরক্ষা, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, প্রযুক্তি, সুমদ্র, আকাশ, গোয়েন্দা, উন্নয়ন সহযোগিতা ও জ্বালানির ক্ষেত্রে কৌশলগত দিকেনির্দেশনা দেওয়ার জন্য ওই ডকুমেন্ট প্রকাশ করে জাপান।

এনএসএস অনুযায়ী ‘অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য সমমনা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করবে জাপান। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে মহড়া, বিভিন্ন ধরনের প্রতিরক্ষা চুক্তি ও সহযোগিতার মাধ্যমে সম্পর্ক বাড়ানো হবে।’

এর ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুদেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের আলোচনায় প্রথমবারের মতো জাপান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং একটি চুক্তির বিষয়ে তাদের আগ্রহ ব্যক্ত করে। পরবর্তী সময়ে জাপানের মিতসুবিসি কোম্পানির একটি প্রতিনিধিদল তদের উৎপাদিত প্রতিরক্ষা পণ্য বাংলাদেশে বিক্রির বিষয়ে আলোচনা করার জন্য ঢাকা আসে।

বর্তমানে খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে এবং চুক্তি সই করার প্রক্রিয়াটি বাকি রয়েছে। এরমধ্যে সইয়ের জন্য বাংলাদেশে কেবিনেট বা কাউন্সিল অব অ্যাডভাইজারের অনুমোদন নিতে হবে। অপরদিকে জাপানে তাদের কেবিনেট এবং প্রতিরক্ষাবিষয়ক সংসদীয় কমিটির অনুমোদন নিতে হবে। তারপর দুইপক্ষ এটি সই করবে।

ইউএন চার্টার

ডিফেন্স প্রকিওরমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি ট্রান্সফার চুক্তির একটি ধারায় বলা হয়েছে যে, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সংগ্রহ এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরের কার্যকর ব্যবহার জাতিসংঘের সনদের উদ্দেশ্য এবং নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। এই ধারাটি বাংলাদেশ এবং জাপান উভয়ের জন্য তাদের সম্ভাব্য প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সংগ্রহ এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর চুক্তিতে আইনি, রাজনৈতিক এবং নৈতিক প্রভাব ফেলবে।

এ বিষয়ে জাপানে কর্মরত ছিলেন এমন একজন সাবেক কূটনীতিক বলেন, ‘এই ধারাটি জাপানের অভ্যন্তরীণ আইনি ও রাজনৈতিক কাঠামোর ক্ষেত্রে চুক্তিটি অনুমোদনের জন্য প্রয়োজনীয়। এই ধারাটি একটি সুরক্ষা তৈরি করবে যে, ক্রয়কৃত সরঞ্জামগুলো সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে বা অস্থিতিশীল কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করা হবে না।’

উল্লেখ্য, ইউএন চার্টারের অনুচ্ছেদ-১ এ বলা হয়েছে, বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি এবং অনুচ্ছেদ ২(৪) বলা হয়েছে— কোনও রাষ্ট্রের আঞ্চলিক অখণ্ডতা বা রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে হুমকি বা বলপ্রয়োগ নিষিদ্ধ। এই কারণে ক্রয়কৃত প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তি আগ্রাসন, দখলদারিত্ব বা সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের জন্য ব্যবহার করা যাবে না।