নির্বাচনের ট্রেনে বাংলাদেশ 

ঈদুল আজহার আগে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে আগামী জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য রোডম্যাপ ঘোষণা করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছিলেন, ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। অবশ্য বর্তমানে দেশে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি আগে থেকেই চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই এই নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। তবে এবার নির্বাচনের তারিখ নিয়ে অনেক ঐকমত্যে এসেছে উভয়পক্ষ। লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে এমনই আভাস মিলেছে। 

বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতি দেওয়ার পাশাপাশি যৌথ সংবাদ সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির। যৌথ সংবাদ স‌ম্মেল‌নেও জানানো হয়, শিগগিরই নির্বাচন কমিশন (ইসি) নির্বাচনের একটি তারিখ ঘোষণা করবে।

বৈঠকের পর দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকে তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার কাছে আগামী বছরের রমজানের আগে নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তাব করেন। তিনি (তারেক রহমান) এও উল্লেখ করেন, ‌দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও মনে করেন—ওই সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ভালো হয়।

এমন প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি‌ অর্জন করা প্রয়োজন হবে। 

তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার এই অবস্থানকে স্বাগত জানান এবং দলের পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রধান উপদেষ্টাও তারেক রহমানকে ফলপ্রসূ আলোচনার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

পরে যৌথ সংবাদ সম্মেলনেও আবার নির্বাচনের তারিখ প্রসঙ্গে কী আলোচনা হলো জানতে চান সাংবাদিকরা। এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, নির্বাচনি রোডম্যাপে নির্বাচনের একটি সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের সমস্যা কোথায়? এর জবাবে ড. খলিলুর রহমান বলেন, ‘এতে কোনও সমস্যা নেই। আমরা কোনও সমস্যা দেখি না। কেউ দেখলে ভুল দেখছেন। নির্বাচন সম্পর্কে যৌথ বিবৃতিতে আমরা বলে দিয়েছি এবং নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে আমরা আশা করবো, শিগগিরই তারা একটা তারিখ ঘোষণা করবে।’

বৈঠকে শুধু নির্বাচন নিয়ে আলাপ হয়েছে, নাকি রাজনৈতিক অন্যান্য বিষয়েও কথা হয়েছে জানতে চাইলে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সব বিষয়ে আলোচনা হওয়া স্বাভাবিক। আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে সামনের দিকে এগোচ্ছি। আমরা চাই দেশ গড়ার যে প্রত্যয় আমরা নিয়েছি, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সেই কাজটি করবো। শুধু নির্বাচনের আগে নয়, নির্বাচনের পরেও বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয় নিয়ে আমরা সবাই ঐকমত্য হয়েছি, তা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে তারেক রহমান

সংস্কার নিয়ে বর্তমান সরকারের যে  রূপরেখার তালিকা দিয়েছে—সেটি নিয়ে বিএনপি কী ভাবছে জানতে চাইলে আমির খসরু বলেন, ‘এটা পরিষ্কার, এখানে না বোঝার কোনও কারণ নেই। সংস্কার নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা সাহেব, তারেক রহমান সাহেব—সবাই একই কথা বলছেন। যে বিষয়ে ঐকমত্য হবে, সেগুলোতেই তো সংস্কার হবে, তাই না? সংস্কারের বিষয়টি চলমান প্রক্রিয়া। এমন না যে সব সংস্কার এখনই শেষ হয়ে যাবে। নির্বাচনের আগে কিছু সংস্কার হবে, নির্বাচনের পরেও কিছু সংস্কার অব্যাহত থাকবে।’

এসময় তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে বৈঠকে কোনও আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে আমির খসরু বলেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলার কোনও প্রয়োজনীয়তা আছে বলে তিনি মনে করেন না। তিনি বলেন, ‘তারেক রহমান যেকোনও সময় দেশে ফিরতে পারেন। সুতরাং এটার সিদ্ধান্ত উনি নেবেন সময়মতো।’

এপ্রিলের ঘোষিত নির্বাচনি রূপরেখা থেকে অন্তর্বর্তী সরকার সরে আসছে কিনা জানতে চাইলে নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, ‘যৌথ বিবৃতিতে এ বিষয়টা সুস্পষ্ট বলা আছে। যদি সব কাজ আমরা সময়মতো করতে পারি, বিচার এবং সংস্কারের ব্যাপারে পর্যাপ্ত অগ্রগতি হয়, তাহলে নিশ্চয় সেটা করা হবে।’

প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠক নিয়ে উভয়পক্ষই সন্তোষ প্রকাশ করে। সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়, নিশ্চয়ই সন্তুষ্ট। আমরা তো বলছি, নির্বাচনের আগেই না, নির্বাচনের পরেও দেশ গড়ার ক্ষেত্রে আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করবো। আর সন্তুষ্ট না হলে যৌথ ঘোষণা আসতো না।


এসময় জুলাই সনদ নিয়ে ড. ইউনূস-তারেকের বৈঠকে কোনও আলাপ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বিএনপি নেতা আমির খসরু বলেন, ‘জুলাই সনদ নিয়ে ইতোমধ্যে আলোচনা চলছে দেশে। এ বিষয়ে আমাদের মধ্যে ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ হবে এবং সংস্কারের বিষয়েও আমাকে একই উত্তর দিতে হয়, ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার এবং জুলাই সনদ হবে। অল্প সময়ের মধ্যেই এটি হবে।’