প্রধান উপদেষ্টার যুক্তরাজ্য সফর নিয়ে যা বলছেন কূটনীতিকরা

যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে চার দিনের সরকারি সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সফরটি দ্বিপাক্ষিক হলেও, সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে তার বৈঠক। কূটনীতিকদের মতে, এই সফরে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনসহ বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, লন্ডন সফরের আগে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই এ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়েছে।

একজন সাবেক কূটনীতিক বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন সফরের বিষয়টি পূর্বনির্ধারিত ছিল এবং এটি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রস্তুতি নিয়েছে। তবে ঈদের আগে প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া ভাষণে জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি ঘোষণা কাকতালীয় নয় বলেই মনে হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘লন্ডন সফরের আগে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা এবং পরে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক—এসবই একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক সমঝোতার অংশ হতে পারে। সফরের সুযোগ কাজে লাগিয়ে বৈঠকের বিষয়টি আগেই বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল।’

আরেকজন কূটনীতিক বলেন, সফরের দুটি দিক ছিল—একটি দ্বিপাক্ষিক এবং অন্যটি অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক। দ্বিপাক্ষিক অংশে প্রধান উপদেষ্টা রাজা চার্লসের পুরস্কার গ্রহণ, চ্যাথাম হাউজে বক্তব্য এবং অর্থপাচারসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ইস্যুতে আলোচনা ছিল।

তবে তার মতে, ‘এই সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল প্রধান উপদেষ্টা এবং তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠক, যা দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।’

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক না হওয়া নিয়ে বিভ্রান্তি

সফরকালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের কোনো বৈঠক হয়নি, যা ঘিরে কিছুটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার (১০ জুন) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক ব্রিটিশ এমপির বরাতে জানান, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী তখন কানাডা সফরে ছিলেন এবং এ কারণে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তার সাক্ষাতের কোনও সময় নির্ধারিত হয়নি। কিন্তু বাস্তবে ওই সময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লন্ডনেই অবস্থান করছিলেন।

এ বিষয়ে একজন সাবেক কূটনীতিক বলেন, ‘এটি একটি গুরুতর ত্রুটি। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান নিশ্চিত করার দায়িত্ব ছিল যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ দূতাবাসের। কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেই এমন তথ্য নিশ্চিত করা হয়। একজন ব্রিটিশ এমপিকে উদ্ধৃত করে এ ধরনের তথ্য প্রকাশ একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই মন্তব্যের ফলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ না হওয়া নিয়ে জনগণের মধ্যে নানা আলোচনা ও সমালোচনা তৈরি হয়েছে।’

তবে আরেকজন কূটনীতিক বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা লন্ডনে গিয়েছিলেন মূলত রাজা চার্লসের কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণের জন্য। এ ধরনের সফরে সরকার প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ সৌজন্যমূলক হলেও, তা নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট দেশের প্রধানমন্ত্রীর সময়সূচি ও ব্যস্ততার ওপর। যদি বৈঠক না-ও হয়, কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এতে প্রটোকলের কোনও ব্যত্যয় ঘটে না।’