লাল সবুজের জাতীয় পতাকা নিয়ে শনিবার সকালে রাজধানীতে শিবিরের মহানগরী উত্তর শাখার উদ্যোগে র্যালি বের করা হয়। ঝটিকা এই র্যালিতে শিবিরের কয়েকশ’ নেতাকর্মী অংশ নেন।
সকাল ৮টায় রাজধানীর বসুন্ধরা গেট এলাকা থেকে এই দৃষ্টিনন্দন বর্ণাঢ্য র্যালিটি শুরু হয় এবং নর্দ্দা বাসস্ট্যান্ড গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
শাখা সভাপতি হাসান জারিফের পরিচালনায় র্যালিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক শাহিন আহমেদ খান।
র্যালিতে শিবির নেতারা বলেন, ‘অবিলম্বে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ ইসলামী আন্দোলনের সব নেতাকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। তাদের কারারুদ্ধ রেখে কখনও স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ গ্রহণ সম্ভব নয়।’
‘দলীয়’ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা
শুক্রবার মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা দেওয়ার কথা জানায় শিবির। তবে এই মুক্তিযোদ্ধারা কারা, তাদের নাম, ঠিকানাসহ কোনও তথ্যই প্রকাশ করেনি সংগঠনটি। প্রতি বছরই শিবির এ ধরনের সম্মাননা দেয়। জামায়াত ঘরানার কয়েকটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সংগঠনের নেতারা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ, ঢাকা মহানগরের সভাপতি হান্নান হোসেন, অর্থ সম্পাদক তাজিরুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন। ছাত্র শিবিরের একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে দরিদ্র ও অভাবীদের খুঁজে খুঁজে প্রতিবছর সম্মাননা ও নগদ অর্থ দেয় শিবির। তবে সাংগঠনিক নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের নাম প্রকাশ করা হয় না।
‘এটা ঔদ্ধত্য-মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বেয়াদবি’ ও ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা’
ছাত্রশিবিরের স্বাধীনতা র্যালি ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননার বিষয়টিকে ঔদ্ধত্য ও মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে বেয়াদবি হিসেবেই দেখছেন একাত্তরের রণাঙ্গণের যোদ্ধারা। বলছেন, যে সংগঠনের প্রথম সভাপতি মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, দ্বিতীয় সভাপতির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, সেই সংগঠন স্বাধীনতা বিষয়ে র্যালি করার মানেই হচ্ছে বিষয়টিকে নিয়ে তামাশা করা। তবে, ছাত্রশিবিরের এ ধরনের র্যালি বাধাহীনভাবে করার জন্যে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়ী করছেন প্রগতিশীল সংগঠনের নেতারা। বলছেন, সরকার তাদের সুযোগ দেয় বলেই তারা ঔদ্ধত্য দেখায়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মীর কাশেম আলী। জামায়াতের ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এই প্রভাবশালী সদস্য ছাত্র শিবিরের প্রথম সভাপতি। তিনি ১৯৭৭-১৯৭৮ সেশনে সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। গত বছর ফাঁসিতে ঝুলে মৃত্যুবরণকারী মুহাম্মদ কামারুজ্জামান শিবিরের ৭৮-৭৯ সেশনের সভাপতি ছিলেন।
ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সৈকত মল্লিক বলেন, শিবির এটা এ বছর শুধু করছে না। বছরের পর বছর ধরে এই রকম ঔদ্ধত্য দেখিয়ে আসছে। যারা একাত্তরের বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছিলেন, তারা কিভাবে মিছিল করেন। এটার দায় সরকারের নিতে হবে।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এ প্রতিবেদকের কাছ থেকে কোন-কোন স্থানে র্যালি হয়েছে, সে বিষয়ে জানতে চান। এরপর তিনি বলেন, পাগলে কী না বলে ছাগলে কী না খায়। তারা কী করেন, কী বলেন, এটা নিয়ে জাতির কোনও মাথাব্যাথা নেই।
এটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম বলেন, এটা করতে হবে মিনিস্ট্রি থেকে। আমাদের দেশে আইন কর্মকর্তার মামলা করার ক্ষমতা আছে। এর বাইরে কিছু না। হোম নিস্ট্রি চাইলে করতে পারে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটা শুনে রাখলাম, দেখি কী কা যায়।
এ বিষয়ে জানতে বিএনপির কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা নেতাকে প্রশ্ন করা হলে, তারা মন্তব্য করতে আগ্রহী নন বলে জানান।
/এপিএইচ/এমএনএইচ/