জাতিসংঘের পানি কনভেনশনে যোগ দিলো বাংলাদেশ

বাংলাদেশ, একটি ব-দ্বীপ, দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম এবং সামগ্রিকভাবে ৫৬তম দেশ হিসেবে আন্তঃসীমান্ত জলপথ এবং আন্তর্জাতিক হ্রদ সুরক্ষা ও ব্যবহার সংক্রান্ত কনভেনশনে (জাতিসংঘের পানি কনভেনশন) যোগ দিয়েছে।

সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই কনভেনশনে যোগ দেয় বাংলাদেশ। এর আগে ২০১২ সাল থেকে কনভেনশনের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে আসছে বাংলাদেশ এবং ২০২৪ সালের অক্টোবরে স্লোভেনিয়ায় কনভেনশনের পক্ষগুলোর ১০ম সভায় অংশগ্রহণ করে।

১৯৯২ সালের ১৭ মার্চ গৃহীত জাতিসংঘের পানি কনভেনশনের লক্ষ্য ছিলো আন্তঃসীমান্ত পানির ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করা এবং আন্তঃসীমান্ত ভূপৃষ্ঠের পানি এবং ভূগর্ভস্থ পানির পরিবেশগতভাবে টেকসই সুরক্ষা প্রচার করা। প্রাথমিকভাবে একটি আঞ্চলিক সম্মেলন হিসেবে গৃহীত জাতিসংঘের পানি কনভেনশনটি ২০১৬ সালের ১ মার্চ থেকে জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ল্যাটিন আমেরিকা এবং এশিয়ার ১৫টি দেশ তখন থেকে এতে অংশগ্রহণ করেছে।

এই কনভেনশনে যোগদান সহযোগিতার জন্য আইনি, প্রযুক্তিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি শক্তিশালী করার পাশাপাশি জাতীয় পানি শাসনকে সমর্থন করে। বর্তমানে ৫৬টি সদস্য দেশ রয়েছে, এই কনভেনশনে আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়ার মধ্যে পক্ষ রয়েছে এবং বিশ্বের ২০টিরও বেশি দেশ যোগদানের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

জাতিসংঘ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ একটি নদীবেষ্ঠিত এবং বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ, যা একটি জটিল ভূ-রাজনৈতিক অঞ্চলে অবস্থিত। আন্তঃসীমান্ত জল ব্যবস্থাপনা দেশটির শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ৫৭টি আন্তঃসীমান্ত নদী দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়, যার মধ্যে রয়েছে চীন, নেপাল, ভুটান, ভারত জুড়ে বিস্তৃত বিশাল গঙ্গা (পদ্মা)-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদী ব্যবস্থা। এটি বিশ্বের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে জটিল ব-দ্বীপগুলোর মধ্যে একটি।

এই কারণেই বাংলাদেশ জাতীয় ও আন্তঃসীমান্ত পর্যায়ে টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে কার্যকর সহযোগিতা এবং সংলাপের গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয়তা বোঝে। তীব্র জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব গ্রীষ্মকালে খরা এবং বর্ষাকালে বন্যার তীব্রতা বৃদ্ধি এবং ক্রমবর্ধমান অপ্রত্যাশিত জলপ্রবাহের কারণে এই প্রয়োজনীয়তা আরও বেড়ে গেছে।

বাংলাদেশের প্রায় ৬০ শতাংশ জনসংখ্যা উচ্চ বন্যার ঝুঁকির সম্মুখীন, যা নেদারল্যান্ডস ছাড়া বিশ্বের অন্য যেকোনও দেশের তুলনায় বেশি। প্রায় ৪৫ শতাংশ নদীতীরে উচ্চ বন্যার ঝুঁকির সম্মুখীন, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ অনুপাত। প্রতি বছর গড়ে বাংলাদেশের ২০-২৫ শতাংশ ভূমি বন্যায় ডুবে যায় এবং যখন চরম বন্যা দেখা দেয় তখন দেশের ৫৫-৬০ শতাংশ ভূমি ডুবে যায়। ৬ কোটি ৫০ লক্ষেরও বেশি মানুষ এখনও নিরাপদে পরিচালিত স্যানিটেশন ব্যবস্থার সুযোগ থেকে বঞ্চিত।